বাংলা ব্যান্ড সংগীতে মাদকতা ছড়ানোর নাম জেমস। ফারুক মাহফুজ আনাম জেমসকে ভক্তরা ‘গুরু’ বলে ডাকেন। ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে অবিশ্রান্ত গান শুনিয়ে যাচ্ছেন এই রকস্টার। সাধারণত তাকে কারও সাতপাঁচে দেখা যায় না, নিজের খেয়ালখুশিতে চলতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তিনি।
দর্শকপ্রিয় এই সঙ্গীতশিল্পী পেশাগত জীবন ছাড়া তার সবকিছুই রাখেন আড়ালে। বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যখন তারকারা সরব থাকার চেষ্টায় থাকেন, সেদিক থেকে ভিন্ন জেমস। তাকে যেমন আড্ডা দিতে কোথাও দেখা যায় না, ঠিক তেমনই তার ফেসবুক বা অন্য কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে থাকে না কোনো আয়োজন কিংবা আড্ডার স্থিরচিত্র। পারিবারিক জীবন তো অনেক দূরের বিষয়। সেই জেমসকে যখন হঠাৎ লুঙ্গি পরা অবস্থায় দেখা যায়,তা ভক্ত–শুভাকাঙ্ক্ষীদের অবাক করে। এমন স্থিরচিত্র দেখে কেউ কেউ আবার এমনও বলেন, এ কোন গুরুকে (ভালোবেসে জেমসকে গুরু নামেই ডাকেন ভক্তদের কেউ) দেখলাম! এভাবে তো তাঁকে আগে সেভাবে দেখিনি!
শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) রাতে জেমসের একটি স্থিরচিত্র পোস্ট করেন তার সাবেক স্ত্রী, একসময়ের মডেল ও চিত্রনায়িকা রথি কানিজ। ওই স্থিরচিত্রে দেখা যায়, পাঞ্জাবি ও লুঙ্গি পরিহিত জেমস দাঁড়িয়ে আছেন। সামনে হাফপ্যান্ট পরিহিত তার ছেলে দানিশ। তখন দানিশের বয়স ৪-৫ বছর বলে জানালেন মা রথি কানিজ।
দেশের একটি গণমাধ্যমের সঙ্গে কানিজের কথা হলে তিনি বলেন, হঠাৎ পুরোনো অ্যালবাম ঘাঁটতে গিয়ে হঠাৎ দানিশের সঙ্গে ওর বাবার ছবিটি চোখে পড়ল। ছোট্ট দানিশও এখন বড় হয়ে গেছে। মজার ছবিটি হঠাৎ অনেক স্মৃতি মনে করিয়ে দিয়েছে। বাবা-ছেলের সুন্দর মুহূর্তের ছবিটি তাই ফেসবুকে পোস্ট করা।
লুঙ্গি পরিহিত জেমসের স্থিরচিত্রটি উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের বাসার সামনে তোলা হয়েছিল বলে জানালেন রথি।
তিনি বলেন, জেমসের সঙ্গে বিয়ের পর আমরা উত্তরায় থাকতাম। ওই সময়ে দেখতাম, দেশের নানা প্রান্ত থেকে উত্তরার এই বাড়িতে অনেক ভক্ত দেখা করতে আসতেন। সকালে এসে গভীর রাত পর্যন্তও অপেক্ষা করতেন। একনজর দেখা, ছবি তোলা, অটোগ্রাফ নেওয়ার জন্য রাত ৩টা পর্যন্তও কেউ কেউ অপেক্ষা করতেন। ভক্তদের প্রতি ভালোবাসা থেকে আনন্দ নিয়ে জেমসও মাঝেমধ্যে তাদের সঙ্গে দেখা করত, যদিও সব সময় হয়ে ওঠত না। কাজের কারণে তো তখন অনেক রাতে বাসায় ফিরত জেমস। তাই ঘুম থেকে উঠতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যেত। মুড ভালো থাকলে ভক্তদের ডেকে নিতেন, নইলে জানিয়ে দেওয়া হতো আজ দেখা করতে পারবেন না। ছবিটি ১৯৯৯ সালের তেমনই একটি দিনে তোলা। দুই ভক্তের সঙ্গে এদিন লুঙ্গি ও পাঞ্জাবি পরিহিত জেমসের সঙ্গে ছোট্ট দানিশও।
জেমসের সাবেক স্ত্রী রথি কানিজ জানালেন, দানিশ ও জান্নাতের বাবা লুঙ্গি পরতে ভালোবাসত। কাজ শেষে বাসায় যখন থাকত, লুঙ্গি বেশি পরত। তবে এটা ঠিক, বাইরের কেউ সেভাবে এটা জানত না, তাকে এমন রূপে দেখেওনি।
প্রসঙ্গত জেমসের সাবেক স্ত্রী, একসময়ের মডেল ও চিত্রনায়িকা রথি কানিজ ‘আনন্দ বিচিত্রা ফটোসুন্দরী’ নির্বাচিত হয়েই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পান। ফটোসুন্দরী নির্বাচিত হওয়ার পর ব্যান্ড তারকা জেমসের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয় তার। ‘অবুঝ দুটি মন’ মুক্তির বছর দুয়েক আগে, ১৯৯১ সালের ১৭ নভেম্বর তারা বিয়ে করেন। ২০০৩ সালে তাদের সংসার ভেঙে যায়। সেই সংসারে আছে এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছোট্ট দানিশ এখন বড় হয়ে গেছে। ভিডিও সম্পাদনা ও সিনেমাটোগ্রাফার হিসেবে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। আর মেয়ে জান্নাত ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রাফিকস ডিজাইনে স্নাতক প্রথম বর্ষে পড়ছেন। মেয়ের সঙ্গে বাবার যোগাযোগ থাকলেও ছেলের সঙ্গে অনেক দিন ধরে কথাবার্তা হয় না বলে জানালেন রথি।