কিংবদন্তীতুল্য জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা রবিউল-এর ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ১৯৮৭ সালের ১৮ এপ্রিল, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৪৮ বছর। প্রয়াত এই প্রতিভাবান অভিনয়শিল্পীর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।
জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা রবিউল (রবিউল আলম) ১৯৩৯ সালে, ভারতের মুর্শিদাবাদের সালার গ্রামে, জন্মগ্রহণ করেন। দেশ ভাগের পর চলে আসেন ঢাকায়। পেশায় ছিলেন টিএন্ডটি’র ইঞ্জিনিয়ার (ডিপ্লোমা)।
রবিউল অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র, ফতেহ লোহানী পরিচালিত “আকাশ আর মাটি” মুক্তি পায় ১৯৫৯ সালে। দেশীয় চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা রসিকরাজ রবিউল
চলচ্চিত্র ছাড়াও বেতার-মঞ্চ ও টেলিভিশনের নাটকেও অভিনয় করেছেন। এই জনপ্রিয় অভিনেতা প্রায় দেড়শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে – তোমার আমার, জোঁয়ার এলো, নাচঘর (উর্দু), অনেক দিনের চেনা, রাজা সন্যাসী, কাঞ্চন মালা, সাত ভাই চম্পা, অরুণ বরুণ কিরণমালা, পরশমনি, নতুন ফুলের গন্ধ, চম্পাকলি, নীল আকাশের নীচে, সমাপ্তি, পলাতক, আলোর পথে, অনেক দিন আগে, আলোমতি, মুক্তি, সুখদুঃখ, অঙ্গীকার, রাতের পর দিন, কে তুমি, ডাকপিয়ন, দর্পচূর্ণ, অধিকার, কাঁচ কাটা হীরে, দীপ নেভে নাই, অশ্রু দিয়ে লেখা, বাঘা বাঙ্গালী, ইয়ে করে বিয়ে, দস্যুরাণী, তীর ভাঙ্গা ঢেউ, আলোর মিছিল, পিঞ্জর, জানোয়ার, মাসুদ রানা, উত্তরণ, দস্যু বনহুর, পরিচয়, এপার ওপার, দাতা হাতেমতাই, সেয়ানা, প্রতিনিধি, বধূ বিদায়, সমাধি, গুন্ডা, হাবা হাসমত, বন্ধু, দোস্ত দুশমন, অশিক্ষিত, চম্পা চামেলি, সংঘর্ষ, জিঞ্জির, স্বামী, সোনারতরী, দেনাপাওনা, অভিমান, সাক্ষী, সাম্পানওয়ালা, ছুটির ঘণ্টা, মামা ভাগ্নে, জনতা এক্সপ্রেস, যাদুনগর, আনারকলি, গাঁয়ের ছেলে, ভাঙা গড়া, নবাবজাদী, রেশমী চুড়ি, লাল কাজল, বড় বাড়ীর মেয়ে, রজনীগন্ধা, ঝুমুর, মৎস্য কুমারী, চোর, অভাগী, প্রভৃতি ।
গুণী অভিনেতা রবিউল রাষ্ট্রীয় কোনো পুরস্কার বা স্বীকৃতি না পেলেও, বিভিন্ন সংগঠন থেকে পেয়েছেন অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা। পেয়েছেন ‘অশ্রু দিয়ে লেখা’ ছবির রজত-জয়ন্তী উপলক্ষে সম্মাননা, ‘সাত ভাই চম্পা’ ছবির সুবর্ণ-জয়ন্তী উপলক্ষে সম্মাননা, ‘কে তুমি’ ও ‘বাঘাবাঙ্গালী’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য পেয়েছেন বিশেষ পুরস্কার।
ব্যক্তিজীবনে রবিউল, দিলারা বেগমের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের, দুই ছেলে ও চার কন্যা সন্তান রয়েছে । দুই ছেলে- অপু ও তপু। চার মেয়ে- রাখী, রুপা, রানি ও এ্যানি।
বাংলাদেশীয় চলচ্চিত্রের প্রথম দিকের জনপ্রিয় ও সফল কৌতুক অভিনেতাদের মধ্যে অন্যতম একজন রবিউল।
চলচ্চিত্রের পর্দায় তাঁর উপস্থিতিই দর্শকদের ব্যাপক বিনোদন দিতো। যেমন ছিল তাঁর শারিরীক গঠন, তেমনি তাঁর অঙ্গভক্তি ও সংলাপ বলার ভঙ্গিমা এক ধরনের নির্মল আনন্দ দিতো দর্শকমনে।
তাঁর অভিনয়ের অন্যতম আরেকটি গুণ ছিলো, সে হাতির কানের মতো তাঁর নিজের কান দুটোকে সংলাপ বলার তালে তালে নাচাতে পারতেন, যা ছবির পর্দায় চরম হাস্যরস-এর সৃষ্টি করত। তিনি সেসময়ের সিনেমাপ্রেমী দর্শকদের মাঝে প্রসংশনীয় ও বহুল জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা ছিলেন।
তাঁর শারীরিক গঠন এতোটাই শীর্ণকায় ছিল যে, তা এক সময় কিংবদন্তীতে পরিনীত হয়। যেমন, হালকা-পাতলা কোনো মানুষকে দেখলেই, তখনকার সবাই বলত ‘রবিউল্লা বডি’।
এমন একজন অসাধরণ প্রতিভাবান গুণী অভিনেতাকে এখনকার নতুন প্রজন্ম চেনেন না, জানেন না। যারাও বা চেনেন জানেন, তাদের মধ্যে ক’জনই বা তাঁকে স্মরণ করেন। আমাদের দেশের চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টরাও কি তাঁকে, শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন? কেউ স্মরণ করুক আর নাই করুক, তবুও বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে রয়ে যাবে, সবার প্রিয় কিংবদন্তীতুল্য অভিনেতা রবিউল-এর নাম।