এ কে আজাদ: ‘মুখ ও মুখোশ’-এর অভিনেত্রী বিলকিস বারী’র ২১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০০৩ সালের ২০ জানুয়ারী, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। প্রয়াত গুণী অভিনেত্রী বিলকিস বারী’র স্মৃতির প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
বিলকিস বারী ভারতের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন । বাবা দেবেন্দ্রনাথ রায় তাঁর নাম রেখেছিলেন ‘বীনা রায়’। ভালোবেসে বিয়ে করেন জিল্লুর বারী’কে। তৎতকালীন সময় খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা ছিলেন তাঁর স্বামী। বিয়ের পর ধর্ম আর নাম পরিবর্তন করে, হয়ে যান ‘বিলকিস বারী’।
অভিনয়ের প্রতি প্রচন্ড আবেগ আর ভালোবাসা থেকেই এক সময় মঞ্চনাটকে অভিনয় শুরু করেন।
বিলকিস বারী ১৯৪৭ সালের পর স্বামীসহ চলে আসেন ঢাকায়। তৎকালীন সময়ে ঢাকায় মঞ্চনাটকের সংস্কৃতি ছিল। তখনকার সময়ের খ্যাতিমান সব নাট্যব্যক্তিত্বদের সাথে পরিচয় হয় তাঁর।
তিনি ঢাকার মঞ্চনাটকে অভিনয় শুরু করেন। এক সময় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন মঞ্চনাটকের অপরিহার্য নাট্যশিল্পী হয়ে ওঠেন বিলকিস বারী। রেকর্ড সংখ্যক প্রায় দুই হাজারের মতো মঞ্চনাটকে অভিনয় করেছেন তিনি।
১৯৫৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত আবদুল জব্বার খান পরিচালিত, বাংলাদেশ তথা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য সবাক বাংলা চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এ অভিনয়ের মাধ্যমে বিলকিস বারী চলচ্চিত্র জগতে আসেন। এই ছবিতে, কৌতুক অভিনেতা সাইফুদ্দিনের সাথে জুটিবদ্ধ হয়ে অভিনয় করেছিলেন তিনি। তাঁর অভিনীত অন্যান্য চলচ্চিত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ‘উজালা’, ‘পরওয়ানা’, ‘এইতো জীবন’, ‘নদী ও নারী’, ‘শহীদ তিতুমীর’, ‘রূপ কুমারী’, ‘এতটুকু আশা’, ‘গাজী কালু চম্পবতী’, ‘অধিকার’, ‘মলুয়া’, ‘বাবলু’, ‘রং বদলায়’, ‘সাধারণ মেয়ে’, ‘স্মৃতিটুকু থাক’, ‘নিমাই সন্ন্যাসী’, ‘স্বপ্ন দিয়ে ঘেরা’, ‘কাজলরেখা’, ‘শনিবারের চিঠি’, ‘অনির্বাণ’, ‘পরিচয়’, ‘বাদশা’, ‘চাষীর মেয়ে’, ‘কি যে করি’, ‘অমর প্রেম’, ‘সারেং বউ’, ‘বিজলী’, ‘চাবুক’, ‘বিজয়িনী সোনাভান’, ‘শেষ উত্তর’, ‘আলিফ লায়লা’, ‘নবাবজাদী’, ‘লাল কাজল’, ‘পুত্রবধূ’, ‘নাগপূর্ণিমা’, ‘সিকান্দার’, ‘যন্তর মন্তর’, ‘রাজিয়া সুলতানা’, ‘হিংসা’, ‘বাংলার বধূ’, ‘জেলের মেয়ে রোশনী’, ‘এখনো অনেক রাত’, ‘শ্রাবন মেঘের দিনে’ ইত্যাদি।
অভিনেত্রী বিলকিস বারী পত্রিকা প্রকাশনার সাথেও জড়িত ছিলেন। তাঁর ছেলে অলক বারী একজন সাংবাদিক, মেয়ে আলেয়া বারী নৃত্যশিল্পী ও অভিনেত্রী।
অভিনয় করতে গিয়ে তাঁকে অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার স্বীকার হতে হয়েছে, তারপরেও অভিনয় থেকে দূরে সড়ে যাননি। অভিনয়কে ভালোবেসে হারিয়েছেন অনেক কিছুই। তবুও অভিনয়কে আকঁড়ে ধরে শত দুঃখ-কষ্ট ও সমস্যার কথা ভুলে থেকেছেন।
অভিনয় অন্তঃপ্রাণ এক মহিয়সী নারী ছিলেন বিলকিস বারী। এদেশের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য সবাক বাংলা চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এ অভিনয় করার জন্য, তিনি ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে থাকবেন অনন্তকাল।