English

21 C
Dhaka
মঙ্গলবার, নভেম্বর ১৯, ২০২৪
- Advertisement -

মরমী গানের অমর কন্ঠশিল্পী আবদুল আলীম-এর ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

- Advertisements -

মরমী গানের অমর কন্ঠশিল্পী আবদুল আলীম-এর ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ১৯৭৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৪৩ বছর। অকাল প্রয়াত এই গুণি কন্ঠশিল্পীর প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।

আবদুল আলীম ১৯৩১ সালের ২৭ জুলাই, পশ্চিমবঙ্গের (ভারত) মুর্শিদাবাদের তালিবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম মোহাম্মদ ইউসুফ আলী।

বাল্যকাল থেকেই আবদুল আলীম গানের প্রতি প্রবল অনুরাগী ছিলেন। প্রাইমারি স্কুলে পড়ার সময় থেকে গ্রামোফোন রেকর্ডে গান শুনে শুনে, গান গাওয়ার আগ্রহ জন্মে তাঁর। অন্যের গাওয়া গান শুনে, গান শিখতেন আর বিভিন্ন পালা-পার্বণে সেগুলো গাইতেন। সেসময়ে গান গেয়ে গেয়ে তিনি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। লেটো দলে, যাত্রা দলেও কাজ করেছেন তিনি।
ছোটবেলায় তাঁর সঙ্গীত গুরু ছিলেন সৈয়দ গোলাম আলী।
তিনি লোক ও শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের উপর দীক্ষা নিয়েছেন বেদারউদ্দিন আহমদ, ওস্তাদ মোহাম্মদ খসরু, মমতাজ আলী খান, আব্দুল লতিফ, কানাইলাল শীল, আব্দুল হালিম চৌধুরী প্রমুখের কাছে।

খুব অল্প বয়সেই গান গেয়ে বেশ নাম করেছিলেন আবদুল আলীম । তাইতো মাত্র তেরো বছর বয়সে তাঁর গানের প্রথম রেকর্ড হয়েছিল। এত অল্প বয়সে গান রেকর্ড হওয়া তখন সত্যিই বিস্ময়কর ছিল।
দেশ বিভাগের পর আব্দুল আলীম ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকা রেডিওতে স্টাফ আর্টিস্ট হিসেবে গান গাওয়া শুরু করেন। টেলিভিশনের জন্মলগ্ন থেকেই সঙ্গীত পরিবেশন শুরু করেন তিনি।

১৯৫১-৫৩ সালে আবদুল আলীম কলকাতায় বঙ্গীয় সাংস্কৃতিক সম্মেলনে গান গেয়ে, অন্যান্য দেশেও নিজেকে পরিচিত ও জনপ্রিয় করে তোলেন। সেসময়ে তিনি পল্লী গানের জগতে বেশ সুখ্যাতি অর্জন করেন।

জানা যায়, ১৯৬২ সালে বার্মায় অনুষ্ঠিত সঙ্গীত সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন তিনি। বার্মায় তখন অনেকদিন যাবৎ অনাবৃষ্টি চলছে। গরমে মানুষের প্রাণ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। অনুষ্ঠানের দিন আকাশে খন্ড খন্ড মেঘের আনাগোনা। আবদুল আলীম অন্যান্যদের সাথে মঞ্চে উঠলেন গান গাইতে। গান ধরলেন- আল্লা মেঘ দে পানি দে….। কাকতালীয়ভাবে গান শেষ হতেই মুষলধারে বৃষ্টি নামলো। অনুষ্ঠানে বার্মার জনৈক মন্ত্রী বললেন- আবদুল আলীম আমাদের জন্য সাথে করে বৃষ্টি নিয়ে এসেছেন। সেই থেকে বার্মার জনগণের অতি প্রিয় শিল্পী হয়ে উঠেন আবদুল আলীম।

সাংস্কৃতিক দলের সদস্য হয়ে আবদুল আলীম ১৯৬৩ সালে রাশিয়া এবং ১৯৬৬ সালে চীন সফর করেন। এই দুটি দেশে তিনি পল্লীগীতি পরিবেশন করে, বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের পল্লীগীতিকে পরিচিতি ও জনপ্রিয় করে তোলেন। আমাদের দেশের জন্য সুখ্যাতি বয়ে আনেন।

আব্দুল আলীম, আমাদের দেশের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এ গান গাওয়ার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক শুরু করেন। তিনি আরো যেসব ছবিতে গান গেয়েছেন তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য- এদেশ তোমার আমার, জোঁয়ার এলো, সুতরাং, কাগজের নৌকা, নবাব সিরাউদ্দৌলা, আপন দুলাল, কাঞ্চনমালা, মধুমালা, সুয়োরানী দুয়োরাণী, এতটুকু আশা, অরুণ বরুণ কিরণমালা, পারুলের সংসার, গাজী কালু চম্পাবতি, পালাবদল, পরশমণি, বেদের মেয়ে, রূপবান, সাত ভাই চম্পা, শীত বিকেল, ভাওয়াল সন্যাসী, নদী ও নারী, পদ্মা নদীর মাঝি, অবাঞ্ছিত, আলিঙ্গন, উৎসর্গ, নিমাই সন্যাসী, পাতালপুরীর রাজকন্যা, দস্যুরাণী, লালন ফকির, গাঁয়ের বধূ, দয়াল মুর্শিদ, তীরভাঙ্গা ঢেউ, উত্তরণ, নিশি হলো ভোর, সুজন সখি, সাগরভাসা, ইত্যাদি।

আবদুল আলীম-এর গাওয়া, অবিস্মরণীয়- জনপ্রিয়-কালজয়ী গানগুলোর মধ্যে– যার আপন খবর আপনার হয় না.., নাইয়া রে নায়ের বাদাম তুইলা.., সর্বনাশা পদ্মা নদী…, হলুদিয়া পাখী সোনার বরণ.., মেঘনার কুলে ঘর বাঁধিলাম.., এই যে দুনিয়া কিসের লাগিয়া.., পরের জায়গা পরের জমি.., প্রেমের মরা জলে ডোবে না.., দোল দোল দুলনি রাঙামাথায় চিরুনী.., দুয়ারে আইসাছে পালকি নাইওরি গাও তোল.., কেনবা তারে সঁপে দিলাম দেহ মন প্রাণ.., মনে বড় আশা ছিল যাবো মদীনায়..,
কেহ করে বেচা কেনা কেহ কান্দে.., সব সখিরে পার করিতে নেব আনা আনা.., আল্লাহ মেঘ দে পানি দে…,
বন্ধুর বাড়ি মধুপুর.., উজান গাঙের নাইয়া.., নবী মোর পরশ মনি নবী মোর সোনার খনি…, আল্লাহু আল্লাহু তুমি জানলে জালালু.., অন্যতম।

লোকসঙ্গীতের এই প্রতিভাবান কন্ঠশিল্পী বাংলাদেশর সঙ্গীতে বিশেষ অবদানের জন্য পেয়েছেন রাস্ট্রীয় ও বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক নানা পুরস্কার ও সম্মাননা।
তিনি সুজন সখী চলচ্চিত্রে গানের জন্য ১৯৭৫ সালে, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। পাকিস্তান মিউজিক কনফারেন্স, লাহোরে সঙ্গীত পরিবেশন করে আব্দুল আলীম পাঁচটি স্বর্ণ পদক পেয়েছিলেন। ১৯৭৭ সালে, পেয়েছেন- একুশে পদক ও ১৯৯৭ সালে, স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর) । এছাড়াও আব্দুল আলীম বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি চলচ্চিত্র পুরস্কার, পূর্বাণী চলচ্চিত্র পুরস্কার’সহ বহু পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হন।

আবদুল আলীম পেশাগত জীবনে ছিলেন ঢাকা সঙ্গীত কলেজের লোকগীতি বিভাগের অধ্যাপক।

ব্যক্তিজীবনে আবদুল আলীম, বেগম জমিলা আলিমকে বিয়ে করেন। তাদের ৪ মেয়ে ৩ ছেলে। তাঁরা হলেন- আকতার জাবান আলীম, জহির আলীম, আসিয়া আলীম, আজগর আলীম, হায়দার আলীম, নূরজাহান আলীম ও জোহরা আলীম।

লোকসঙ্গীতের প্রাণ পুরুষ মরমীশিল্পী আব্দুল আলীম, পল্লীগীতি-মারফতি-মুর্শিদি-আধ্যাত্মিক ও হাম-নাদ এসব গানে ছিলেন অদ্বিতীয়। তাঁর দরদভরা কণ্ঠে এসব গান মানুষের হৃদয়ের গভিরে নাড়া দিত। তাঁর গানে জীবন-জগৎ এবং ভাববাদী চিন্তাধারা একাকার হয়ে যেত। তাঁর অসাধারণ কণ্ঠ মাধুর্যে, বাংলার মাটি ও মানুষের এসব গান, কোটি মানুষের অন্তরের গহীনে আজও বিরাজমান।

বাংলাদেশের লোক সঙ্গীতের উৎকর্ষতা সাধনে এবং অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অবিস্মরণীয়। বর্হিবিশ্বেও বাংলা গানকে, বিশেষ করে লোক সঙ্গীতকে পরিচিত করেছেন, জনপ্রিয় করেছেন ও নিজের দেশের জন্য সুনাম বয়ে এনেছেন, বাংলা গানের এই প্রবাদপ্রতীম কন্ঠশিল্পী।

বাংলার লোকসঙ্গীতের এক বিস্ময়কর- অবিসংবাদিত-কিংবদন্তি কন্ঠশিল্পী আবদুল আলী।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ

আল কোরআন ও আল হাদিস

- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন