আজাদ আবুল কাশেম: বীর মুক্তিযোদ্ধা-সাংবাদিক মাসুদুল হক এর পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী আজ । তিনি ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর।
মাসুদুল হক ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন, খুলনার খালিশপুরে জন্মগ্রহণ করেন। খুলনা বিএল কলেজ থেকে বি.এ পাস করেন । তিনি ছাত্রজীবনে খুলনা বিএল কলেজে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। জানা যায় তৎকালীন সময়ে খুলনা মিউনিসিপ্যাল হলে আয়োজিত জননেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এক সংবর্ধনা সভায় তিনি সভাপতিত্ব করেছিলেন।
স্বাধীনতার আগে খুলনা থেকে প্রকাশিত ‘সাপ্তাহিক সংহতি’ পত্রিকার মাধ্যমে সাংবাদিকতা জীবন শুরু করেন মাসুদুল হক। আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি অস্ত্র হাতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।
স্বাধীনতার পরে ঢাকায় এসে ‘রায়েরবাজার হাইস্কুল’-এ কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। অল্প কিছু দিন সরকারি চাকরিও করেছেন।
ইত্তেফাক গ্রুপ অব পাবলিকেশন্স-এর সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘পূর্বাণী’র মাধ্যমে ১৯৭৫ সালে নিয়মিত পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করেন মাসুদুল হক। পরবর্তিতে ‘পূর্বাণী’র সহকারী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন । একসময় ‘দৈনিক ইত্তেফাক-এর সিনিয়র সাব-এডিটর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি জাতীয় প্রেস ক্লাবের স্থায়ী সদস্য ছিলেন। ছিলেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস)-এর প্রবীণ সদস্য।
কমিউনিস্ট মতাদর্শের অনুসারী ছিলেন মাসুদুল হক। লিখে গেছেন দেশের স্বার্থে ও ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে। অনুবাদ সাহিত্যে কিম্বা নিজ রচনায় তিনি ছিলেন ব্যতিক্রমী।
তাঁর প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ‘র’ এবং সিআইএ, মৌলবাদ, বাঙালি হত্যা এবং পাকিস্তানের ভাঙন, স্বাধীনতার ঘোষণা :মিথ এবং দলিল। এ ছাড়া তিনি- নিয়াজীর আত্মসমর্পণের দলিল, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়, বাংলাদেশ : বারুদে জন্ম যার নামে তিনটি গ্রন্থ অনুবাদ করেছিলেন।
গবেষণাধর্মী লেখার জন্য তিনি জাতীয় প্রেস ক্লাব ‘লেখক সম্মাননা পদক’ লাভ করেছিলেন।
একজন সৃজনশীল সাংবাদিক-লেখক ছিলেন মাসুদুল হক। ছিলেন আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী ।
একজন গুণী ও বিদ্যামুখী নির্ভেজাল মানুষ ছিলেন তিনি। অতি ভদ্র-অমায়িক ভালো মানুষ হিসেবে চলচ্চিত্র ও সাংবাদিকমহলে সুপরিচিত ছিলেন মাসুদুল হক।