English

26 C
Dhaka
মঙ্গলবার, নভেম্বর ১৯, ২০২৪
- Advertisement -

বীর মুক্তিযোদ্ধা-চিত্রনায়ক ফারুক এর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

- Advertisements -

এ কে আজাদ: বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের শীর্ষ চিত্রনায়কদের মধ্যে অন্যতম একজন ফারুক। ঢাকার চলচ্চিত্রে ‘মিয়াভাই’ খ্যাত অতি জনপ্রিয় চিত্রনায়ক-অভিনেতা। অভিনয় করেছেন- কালজয়ী, নান্দনিক ও বাণিজ্য সফল সব চলচ্চিত্রে।

১৯৭৫ সাল থেকে বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান শুরু হয়। আর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের প্রথম বারেই ‘লাঠিয়াল’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য, শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন অভিনেতা ফারুক।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী চিত্রনায়ক ফারুক আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিলেন ।

বীর মুক্তিযোদ্ধা-চিত্রনায়ক ফারুক এর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। দীর্ঘদিন ধরে সিঙ্গাপুরে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়, ২০২৩ সালের ১৫ মে, তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। প্রয়াত এই কিংবদন্তী অভিনেতার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।

ফারুক (আসল নাম আকবর হোসেন পাঠান দুলু) ১৯৪৮ সালের ১৮ আগস্ট, মানিকগঞ্জের ঘিওরে, জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম, আজগার হোসেন পাঠান। পাঁচ বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার ছোট। শৈশব-কৈশোর ও যৌবনকাল কেটেছে তাঁর পুরান ঢাকায়।

ফারুক স্কুল জীবন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। ১৯৬৬ সালে তিনি ছয় দফা আন্দোলনে যোগ দেন এবং সেই সময়ে তাঁর নামে প্রায় ৩৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছিল।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন নায়ক ফারুক।

এইচ আকবর পরিচালিত ১৯৭১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে নায়ক হয়ে আসেন ফারুক। এই চলচ্চিত্রে তাঁর বিপরীতে নায়িকা ছিলেন কবরী ।

তাঁর অভিনীত অন্যান্য চলচ্চিত্রসমূহ-আবার তোরা মানুষ হ, আলোর মিছিল, সুজন সখী, লাঠিয়াল, সূর্যগ্রহণ, নয়ন মনি, মাটির মায়া, সারেং বৌ, গোলাপী এখন ট্রেনে, নাগরদোলা, সূর্য সংগ্রাম, দিন যায় কথা থাকে, কথা দিলাম, সাহেব, মাটির পুতুল, ছোট মা, ঘরজামাই, এতিম, তৃষ্ণা, শক্তিশালী, সিকান্দার, শেষ পরিচয়, কালা খুন, যাদু মহল, দুরন্ত দুর্বার, চেনা মুখ, আশা, চোখের মনি, যৌতুক, মাসুম, শহর থেকে দূরে, সোনার তরী, সুখের সংসার, মেহমান, রেশমী চুড়ি, তাসের ঘর, প্রিয় বান্ধবী, দোস্তী, জীবন মৃত্যু, প্রতিজ্ঞা, চিৎকার, সীমার, পুনর্মিলন, অন্ধ বধূ, সখি তুমি কার, ছক্কা পাঞ্জা, জনতা এক্সপ্রেস, লাল কাজল, যন্তর মন্তর, আরশিনগর, হাসু আমার হাসু, মায়ের আঁচল, মৎস্য কুমারী, ফুলেশ্বরী, সুদ আসল, জীবন নিয়ে যুদ্ধ, মান অভিমান, ঝিনুক মালা, শিমুল পারুল, মিয়া ভাই, ভুল বিচার, দাঙ্গা ফ্যাসাদ, পালকি, লাখে একটা, ভাই ভাই, পদ্মা মেঘনা যমুনা, বেহুলা লখিন্দর, ভুল বিচার, দুখিনী মা, বিরাজ বৌ, আদর্শবান, আলাল দুলাল, জবাব চাই, ক্ষমতাবান, বদনসীব, বন্ধু আমার, চরম প্রতিশোধ, জীবন সংসার, পৃথিবী তোমার আমার, এ জীবন তোমার আমার, এখনো অনেক রাত, মানুষ মানুষের জন্য, মনে রেখো আমায়, কোটি টাকার কাবিন, দাদি মা, ঘরের লক্ষ্মী ইত্যাদি।

অভিনয়ের পাশাপাশি নায়ক ফারুক ছিলেন একজন চলচ্চিত্র প্রযোজকও। তাঁর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে।

চিত্রনায়ক ফারুক তাঁর কাজের স্বীকৃতি হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে পুরস্কৃত হয়েছেন শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে, ১৯৭৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘লাঠিয়াল’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে। চলচ্চিত্রশিল্পে সামগ্রিক অবদানের জন্য তিনি ২০১৬ সালে পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের ‘আজীবন সম্মাননা’। এছাড়াও বাচসাস চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ বিভিন্ন সংগঠন এবং প্রতিষ্ঠান থেকে পেয়েছেন নানা পুরস্কার ও সম্মাননা।

চলচ্চিত্রের বাইরে নায়ক ফারুক একজন ব্যবসায়ী। গাজীপুরে অবস্থিত নিজের শিল্পপ্রতিষ্ঠান ফারুক নিটিং ডাইং এন্ড ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন।

বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথেও জড়িত ছিলেন। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিতব্য বাংলাদেশের একাদশ সাধারণ নির্বাচনে ঢাকা-১৭ সংসদীয় আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেব নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিনি সংসদ সদস্য ছিলেন।

নায়ক ফারুক, ফারজানা পাঠানকে ভালোবেসে বিয়ে করেন। তাঁদের দুটি সন্তান রয়েছে। কন্যা ফারিহা তাবাসসুম পাঠান ও পুত্র রওশন হোসেন। ছেলেমেয়ে দুজনেই প্রতিষ্ঠিত নিজ নিজ জায়গায়।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্প যাঁদের অবদানে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল, তাদের মধ্যে অন্যতম একজন ছিলেন নায়ক ফারুক। বহু জনপ্রিয় ও কালজয়ী চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। তাঁর অভিনীত অনেক চলচ্চিত্রই হয়েছে সুপারহিট। বহুল জনপ্রিয় সুপার স্টার এই চিত্রনায়ক, বাংলা চলচ্চিত্রে গ্রামীণ চরিত্রের অপ্রতিদ্বন্দ্বী নায়ক হিসেবে ছিলেন সুপরিচিত। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পে ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অনন্য অবদানের জন্য- ফারুক চির স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন