বীর মুক্তিযোদ্ধা, অভিনেতা ও চলচ্চিত্র প্রযোজক আব্বাস উল্লাহ’র প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০২০ সালের ১৮ জানুয়ারী, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। প্রয়াত আব্বাস উল্লাহ’র স্মৃতির প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
আব্বাস উল্লাহ (এস এম আব্বাস উল্লাহ) ১৯৫০ সালের ১২ মে, ঢাকা বনানীর চেয়ারম্যানবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা আব্দুল হামিদ শিকদার, তৎকালীন বনানী পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁর বাবার নামেই বনানীর ঐ এলাকার নাম হয় ‘চেয়ারম্যানবাড়ি’। আব্দুল হামিদ শিকদার নিজেও একজন চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিচালক ছিলেন।
আব্বাস উল্লাহ ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতি ও অভিনয়ের সাথে জড়িত ছিলেন। বিভিন্ন মঞ্চনাটকে অভিনয় করতেন তিনি। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের রনাঙ্গনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন । শিল্প ও সংস্কৃতিকে ভালোবেসে জড়িয়েছেন চলচ্চিত্রশিল্পের সঙ্গে।
এক সময় চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন। শুরুর দিকে কমেডি চরিত্রে অভিনয় করতেন। পরবর্তিতে ভিলেন ও চরিত্রাভিনেতা হিসেবে পরিচিতি পান। বেশ ভালোমানের ভিনেতা ছিলেন তিনি। আব্বাস উল্লাহ অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবি, ‘নির্দোষ’, ‘সাথী’, ‘ইনসাফ’, ‘নিষ্পাপ’, ‘ভুল বিচার’, ‘বৌমা’, ‘মায়ের দোয়া’, ‘লাভ স্টোরি’, ‘পাগল মন’, ‘বালিকা হলো বধূ’, ‘মনের মাঝে তুমি’, ‘জ্বী হুজুর’, প্রভৃতি।
১৯৮৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত মতিউর রহমান পানু পরিচালিত ‘নির্যাতন’ ছবিটি প্রযোজনার মাধ্যমে প্রযোজক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন আব্বাস উল্লাহ। পরিচালক মরহুম মতিউর রহমান পানু ও তিনি দুজনে মিলে প্রতিষ্ঠা করেন প্রযোজনা-পরিবেশনা প্রতিষ্ঠান ‘আনন্দমেলা চলচ্চিত্র লিঃ’ । ১৯৮৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত তোজাম্মেল হক বকুল পরিচালিত বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে বাণিজ্যিকভাবে ইতিহাস সৃষ্টিকারী ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ ছবিটি এই ‘আনন্দমেলা চলচ্চিত্র লিঃ’ থেকেই নির্মিত হয়। তাঁর প্রয়োজনায় নির্মিত চলচ্চিত্রের মধ্যে, ‘নির্যাতন’, ‘বেদের মেয়ে জোসনা’, গাড়িয়াল ভাই’, ‘রঙ্গিলা’, ‘মনের মাঝে তুমি’, ‘নসিমন’, ‘মোল্লা বাড়ির বউ’, ‘সাথী হারা নাগীন’, ‘জ্বী হুজুর’, ‘টাইগার নাম্বার ওয়ান’ অন্যতম ।
আব্বাস উল্লাহ অনেকগুলো টেলিভিশননাটকও নির্মাণ করেছেন এবং নাটকে অভিনয়ও করেছেন।
একজন সফল চলচ্চিত্র প্রযোজক ছিলেন, আব্বাস উল্লাহ।
তিনি ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ নির্মাণ করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সফলব্যবসার ক্ষেত্রে ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ একটা ইতিহাস। সব সময় ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রতি ছিল তাঁর উদ্যমী উদ্যোগ। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের অন্যতম সফল প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘আনন্দমেলা চলচ্চিত্র’র অন্যতম একজন কর্ণধার ছিলেন তিনি।
আব্বাস উল্লাহ, বাংলাদেশের বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল ‘আনন্দ টিভি’র (এটিভি) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন।
আব্বাস উল্লাহ ছিলেন চলচ্চিত্র অন্তঃপ্রাণ একজন মানুষ। একজন সৎ, উদার, নিরহংকার ভালো মানুষ ছিলেন তিনি। চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব আব্বাস উল্লাহ, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ জনিত কারনে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে প্রায় দু’বছর নিয়মিত চিকিৎসার মধ্যেই ছিলেন। অবশেষে চলে গেলেন এই পৃথিবী থেকে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পে তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।