English

19 C
Dhaka
শনিবার, ডিসেম্বর ২১, ২০২৪
- Advertisement -

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সাংবাদিকতার উজ্জ্বল নক্ষত্র আহমদ জামান চৌধুরীর একাদশ মৃত্যুবার্ষিকী আজ

- Advertisements -

এ কে আজাদ: আহমদ জামান চৌধুরী। সাংবাদিক-চলচ্চিত্রের কাহিনী-সংলাপ-চিত্রনাট্যকার ও গীতিকার। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সাংবাদিকতার মহিরুহ ব্যক্তিত্ব। ছিলেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পের খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব, মহাগুণী মানুষ। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সাংবাদিকতার উজ্জ্বল নক্ষত্র আহমদ জামান চৌধুরী’র একাদশ মৃত্যুবার্ষিকী আজ।

তিনি ২০১৩ সালের ৬ মার্চ, ৬৬ বছর বয়সে, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। প্রথিতযশা এই চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বের স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।

আহমদ জামান চৌধুরী ১৯৪৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর, চাঁদপুর শহরে, জন্মগ্রহন করেন। তাঁর বাবা নূরুজ্জামান চৌধুরী ছিলেন শিক্ষাবিদ, সমাজ সেবক। পাঁচ ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। তাঁর বড় ভাই ফখরুজ্জামান চৌধুরী একজন সাহিত্যিক, সাংবাদিক এবং নাট্যকার ছিলেন। খ্যাতিমান জনপ্রিয় অভিনেত্রী দিলারা জামান তাঁর ভাবি। আহমদ জামান চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে প্রথম শ্রেনীতে প্রথম হয়ে এম.এ পাস করেন। খুবই মেধাবী ছাত্র ছিলেন তিনি। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই প্রভাষকের চাকুরী পেয়ে যান অনায়াসে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়েই সিনেপত্রিকা সাপ্তাহিক ‘চিত্রালী’র মাধ্যমে আহমদ জামান চৌধুরী জড়িত হন চলচ্চিত্র সাংবাদিকতার সঙ্গে। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষকের চাকুরী ছেড়ে দিয়ে তিনি সাংবাদিকতাতেই মনোনিবেশ করেন।

একসময়ের নামি-দামী সিনেপত্রিকা সাপ্তাহিক ‘চিত্রালী’র সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন দীর্ঘ ২০ বছর। এরমধ্যে ‘চিত্রালী’র সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেছেন ১০ বছর।

এছাড়া তিনি ‘দৈনিক যুগান্তর’ পত্রিকায় দু’বছর ফিচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি’সহ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান এবং ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিষয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করেছেন মৃত্যুর আগপর্যন্ত।

আহমদ জামান চৌধুরী শুধু চলচ্চিত্র সাংবাদিক হিসেবেই খ্যাতি অর্জন করেননি, তিনি চলচ্চিত্রের বিভিন্ন শাখায় খ্যাতির শীর্ষে বিচরণ করেছেন তাঁর বহুমাত্রিক প্রতিভার গুণে। কাহিনী, সংলাপ, চিত্রনাট্যকার এবং গীতিকার হিসেবে পেয়েছেন আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা।

কাহিনী, সংলাপ, চিত্রনাট্য এবং গীতিকার হিসেবে তাঁর কাজ করা চলচ্চিত্রগুলো হলো- নতুন নামে ডাকো, নাচের পুতুল, পীচ ঢালা পথ, মাস্তান, আগুন, বাঁদী থেকে বেগম, এপার ওপার, দস্যু বনহুর, অবাক পৃথিবী, যাদুর বাঁশী, কুয়াশা, রাতের পর দিন, ডুমুরের ফুল, শেষ উত্তর, মতিমহল, সুখ-দুখের সাথী, তুফান, বিজয়িনী সোনাভান, সঙ্গিনী, লাভ ইন সিঙ্গাপুর, শেষ উত্তর, পদ্মাবতী, দূরদেশ, নরম গরম, বাসনা, আলী বাবা ৪০ চোর, মিস্ লংকা, জুলি, শ্বশুর বাড়ি, রাঙাভাবি, প্রভৃতি।

আহমদ জামান চৌধুরী বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের জন্য, হৃদয়ছোঁয়া কালজয়ী জনপ্রিয় কিছু গান লিখেছেন। যে গানগুলো চলচ্চিত্রকে দিয়েছে ভিন্নমাত্রার ব্যঞ্জনা । তাঁর লিখা কালজয়ী জনপ্রিয় কিছু গান- পীচঢালা এ পথটারে ভালবেসেছি…, যেও না সাথী চলেছ একেলা কোথায় …., নতুন নামে ডাকব তোমায়…., কে তুমি এলে গো…., ও দরিয়ার পানি তোর মতলব জানি… এই বৃষ্টি ভেজা রাতে চলে যেও না…, চুরি করেছো আমার মনটা, হায়রে হায় মিস্ লংকা…., মাগো তোর কান্না আমি সইতে পারি না…, এক বুক জ্বালা নিয়ে বন্ধু তুমি, কেন একা বয়ে বেড়াও…, যাদু বিনা পাখি বাঁচিতে পারে না…, ভালোবাসার মূল্য কতো…, ডোরাকাটা দাগ দেখে বাঘ চেনা যায়, বাতাসের বেগ দেখে মেঘ চেনা যায়…., বিদায় দাওগো বন্ধু তোমরা এবার দাও বিদায়…., প্রেম পিরিতি চাই বলে, সবাই আমায় পাগল বলে….., ওরে ও বাঁশীওয়ালা তুমি যে গলার মালা…, হাত ধরো আর নাই ধরো সালাম-এ মহব্বত কবুল কর.. , ও চোখে চোখ পড়েছে যখনি…, পদ্মাবতী বেদেনী আমার প্রাণ সজনী, একথা ভাবতে আমার সুখ লাগে…, মা গো তোর চরন তলে বেহেস্ত আামার…, ইত্যাদি।

নিজের রচনা ও সৈয়দ জামিমের পরিচালনায় ‘পথ জানা নাই’ নামে একটি নাটকেও অভিনয় করেছেন তিনি।

দু’একটি ছবিতেও অভিনয় করতে দেখা গেছে তাঁকে। আজমল হুদা মিঠু পরিচালিত শেষ ছবি ‘ঝন্টু মন্টু দুই ভাই’ অভিনয় করেছেন আহমদ জামান চৌধুরী।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি-(বাচসাস)’র তিন তিনবার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন আহমদ জামান চৌধুরী। তিনি ছিলেন ‘চিত্রালী পাঠক পাঠিকা চলচ্চিত্র সংসদ (চিপাচস)-এর উপদেষ্টা।

নিজের কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, বাচসাস চলচ্চিত্র পুরস্কার, সলিমুল্লাহ হল চ্যাম্পিয়নশিপ পুরস্কার, ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার’সহ বিভিন্ন সংগঠনের পুরস্কার ও সম্মাননা।

আধুনিক চলচ্চিত্র সাংবাদিকতার পথিকৃৎদের মধ্যে অন্যতম আহমদ জামান চৌধুরী, বহুল জনপ্রিয় সাপ্তাহিক ‘চিত্রালী’ পত্রিকা যার নান্দনিক হাতের ছোঁয়ায় শিল্পরূপ ধারণ করে ছিল। পাঠক কর্তৃক সমাদৃত হয়ে ছিল।

তাঁর হাতে তৈরি হয়েছে এ দেশের অনেক চলচ্চিত্র তথা বিনোদন সাংবাদিক, যারা এখন বিভিন্ন মাধ্যমে সুপ্রতিষ্ঠত ও খ্যাতিমান।

কারো কাছে ‘খোকাভাই’, কারো কাছে ‘খোকা জামান’, আবার কারো কারো কাছে ‘আজাচৌ’ এসব একাধিক নামে পরিচিত ছিলেন, আহমদ জামান চৌধুরী। যে, যেই নামেই চিনেন না কেন, মানুষ কিন্তু একজনই, তিনি চলচ্চিত্র সাংবাদিকতার প্রাণপুরুষ-পরম নির্ভরতার প্রতীক-মহিরুহ ব্যক্তিত্ব আহমদ জামান চৌধুরী।

চলচ্চিত্রকে ভালোবেসেছিলেন, হৃদয়ে ধারণ করেছিলেন। তিনি যা ভেবেছেন, বলেছেন, লিখেছেন- শুধুই চলচ্চিত্র নিয়ে। এক সময় ‘আজাচৌ’র লেখা চলচ্চিত্রবিষয়ক বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন-ফিচার, নবীণ চিত্রনির্মাতা, কলা-কুশলী ও শিল্পীদের উৎসাহ যুগিয়েছে, দিয়েছে পথের দিশা। চলচ্চিত্রশিল্প ও চলচ্চিত্র সাংবাদিকতাকে সমৃদ্ধ করে গেছেন আজীবন।

ব্যক্তিজীবনে চিরকুমার আজাচৌ নিজের জীবন-সংসার সমৃদ্ধ করার কথা কখনো ভাবেননি, চেষ্টাও করেননি। রিক্ত হাতে চলে গেছেন, নিজের জীবনের কথা অব্যক্ত রেখে।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র তথা চলচ্চিত্র সাংবাদিকতার ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে আহমদ জামান চৌধুরী’র নাম অমর হয়ে থাকবে।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন