নাসিম রুমি: প্রাণ কৃষাণ সিকান্দ ১৯৬০, ৭০ এবং ৮০ এর দশকে ভারতীয় সিনেমায় নায়করা ছিলেন সর্বসেবা। স্ক্রিন টাইম ও উচ্চ পারিশ্রমিকের কারণে নায়করাই আধিপত্য বিস্তার করছিলেন। কিন্তু একজন অভিনেতা ছিলেন যিনি দর্শকদের কাছে খলনায়ক হিসেবে বিশেষভাবে জনপ্রিয় ছিলেন। পেয়েছিলেন বলিউডের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক, যার প্রাণ কৃষাণ সিকান্দ।
১৯২০ সালে জন্ম নেওয়া প্রাণ ক্যারিয়ার শুরু করেন সিনেমার হিরো হিসেবে। ১৯৪০-এর দশকের শেষের দিকে খলনায়ক হিসেবে অভিনয় করতে শুরু করেন। এরপর তিনি বলিউডের সবচেয়ে বড় খলনায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। তিনি ‘রাম অর শ্যাম’, ‘মধুমতি’, ‘জিস দেশ ম্যায় গঙ্গা বেহতি হ্যায়’, ‘কাশ্মীর কি কালি’ সহ অসংখ্য সফল চলচ্চিত্রে নিজের অমর করে রেখেছেন। ছয় দশকের অভিনয়জীবনে প্রায় সাড়ে ৩০০টি সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন তিনি।
এ সময় শুধু সিনেমার পোস্টারেই নয়, প্রাণের উপস্থিতিও ছিল টিকিট বিক্রি হওয়ার বড় কারণ। এ কারণে তিনি ১৯৬৮ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত বলিউডের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেতা ছিলেন। সেই সময় তার পারিশ্রমিক ছিল কয়েক লাখ রুপি, যা অনেক নায়কের থেকেও বেশি; এমনকি বিগ বি অমিতাভ বচ্চন থেকেও বেশি।
বর্ষীয়ান অভিনেতা প্রাণ তার শীর্ষস্থান হারান অমিতাভ বচ্চনের কাছেই। যখন আশির দশকে তিনি ১২ লাখ রুপির বেশি পারিশ্রমিক নেন। ২০১০ সালে সিএনএন চ্যানেল প্রাণকে সত্তরের দশকের অন্যতম সেরা অভিনেতা আখ্যা দেয়।
২০১৩ সালের ১২ জুলাই শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন গুণী এ অভিনয়শিল্পী। এ সময় তার বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। এক মাস মুম্বাইয়ের লীলাবতী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন প্রাণ। মৃত্যুকালে স্ত্রী শুক্লা, মেয়ে পিংকি, দুই ছেলে অরবিন্দ ও সুনীলকে রেখে গেছেন বর্ষীয়ান এ অভিনেতা।
পুরোনো দিল্লির ধনাঢ্য এক পাঞ্জাবি পরিবারে জন্মগ্রহণ করা প্রাণের বাবা ছিলেন সরকারি প্রকৌশলী। ১৯৪৫ সালে প্রাণ প্রথম অভিনয় করেছিলেন পাঞ্জাবি ‘ইয়ামলা জাত’ ছবিতে। প্রাণ অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে ‘জঞ্জির’, ‘উপকার’, ‘মধুমতি’, ‘জিদ্দি’, ‘মিলন’, ‘হাফ টিকিট’, ‘দেবদাস’, ‘ব্রহ্মচারী’, ‘জনি মেরা নাম’, ‘পূরব অউর পশ্চিম’ ইত্যাদি।
হিন্দি চলচ্চিত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০০১ সালে ‘পদ্মভূষণ’ খেতাব পেয়েছেন প্রাণ। এ ছাড়া কলারত্ন, ফিল্মফেয়ার, দাদাসাহেব ফালকেসহ অসংখ্য পুরস্কার ঝুলিতে ভরেছেন গুণী এ অভিনয়শিল্পী।