নাসিম রুমি: সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্রে তাকে সেভাবে দেখা যায়নি। কিন্তু তিনি ছিলেন সিনেমার অন্যতম অংশ। গৌন চরিত্রে অভিনয় করেও তিনি দর্শকদের কাছে ব্যাপক পরিচিত ছিলেন। বলছি খ্যাতিমান অভিনেত্রী রওশন জামিলের কথা।
আজ ৮ মে রওশন জামিলের জন্মদিন। ১৯৩১ সালের এই দিনে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। রওশন জামিল ঢাকার লক্ষীবাজারের সেন্ট ফ্রান্সিস মিশনারী স্কুলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। এরপর পড়াশুনা করেন ইডেন কলেজে।
শৈশব থেকেই তার নাচের প্রতি ঝোঁক ছিল। ম্যাট্রিক পাশ করার পর ভর্তি হন ঢাকার ওয়ারী শিল্পকলা ভবনে ও নাচের তালিম নেন প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী গওহর জামিল এর কাছ থেকে।
অভিনয় জীবনে রওশন জামিলের পদার্পণ হয় ১৯৬৫ সালে। তার অভিনীত প্রথম নাটক ‘রক্ত দিয়ে লেখা’ প্রচার হয়েছিল বাংলাদেশ টেলিভিশনে।
টেলিভিশনে অভিষেকের ২ বছর পর সিনেমায় কাজ শুরু করেন রওশন জামিল।১৯৬৭ সালে তিনি অভিনয় করেন আরব্য রূপকথা ‘আলিবাবা চল্লিশ চোর’ সিনেমায়।
এরপর ১৯৭০ সালে কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া’ সিনেমায় অভিনয় করেন। এটি তাকে দারুণ সাফল্য এনে দেয়।
এরপর ধাপে ধাপে রওশন জামিল কাজ করতে থাকেন আমজাদ হোসেনের রচনা ও পরিচালনায় ‘নয়নমনি’, আবু ইসহাকের উপন্যাস অবলম্বনে শেখ নিয়ামত আলী ও মসিহউদ্দিন শাকের পরিচালিত ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’ সিনেমাগুলোতে। এসব সিনেমায় অনবদ্য অভিনয়ের জন্য তিনি ব্যাপক প্রশংসিত হন।
রওশন জামিল তার দীর্ঘ ক্যারিয়ারে আড়াই শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ‘মাটির ঘর’, ‘জীবন মৃত্যু’, ‘নদের চাঁদ’, ‘বাঁধনহারা’, ‘দেবদাস’, ‘লাল কাজল’, ‘আশার আলো’, ‘দহন’, ‘বেদের মেয়ে জোছনা’, ‘শঙখনীল কারাগার’, ‘চিত্রা নদীর পাড়ে’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ও ‘লালসালু’।
ঢাকার ওয়ারী শিল্পকলা ভবনে নাচ শেখার সময় প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী গওহর জামিলের সাথে রওশন জামিলের সম্পর্ক হয়। ১৯৫২ সালে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের ২ ছেলে ও ৩ মেয়ে।
১৯৫৯ সালে নৃত্যশিল্পী গওহর জামিল ও তিনি দুজনে মিলে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নৃত্য প্রশিক্ষন কেন্দ্র জাগো আর্ট সেন্টার। ১৯৮০ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর তিনিই এই সংগঠনের দেখাশুনা করতেন।
বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে রওশন জামিল বহু পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছিলেন। এর মধ্যে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, টেনাশিনাস পদক, সিকোয়েন্স অ্যাওয়ার্ড, বাচসাস চলচ্চিত্র পুরস্কার, তারকালোক পুরস্কার ইত্যাদি অন্যতম। এছাড়া নৃত্যশিল্পে অসামান্য অবদান রাখায় ১৯৯৫ সালে তিনি একুশে পদক লাভ করেন।
অসামান্য প্রতিভার অধিকারিণী রওশন জামিল ২০০২ সালের ১৪ মে মৃত্যুবরণ করেন। তবে চলে গিয়েও তিনি দেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসে সমৃদ্ধ একটি অংশ হয়ে আছেন।