English

21 C
Dhaka
বুধবার, নভেম্বর ২০, ২০২৪
- Advertisement -

বগুড়ার সন্তান অমিয় চক্রবর্তীর হাত ধরে চলচ্চিত্রে আসেন দিলীপ কুমার

- Advertisements -

শুনেই খটকা লাগল তো? কিন্তু এটাই সত্য। দিলীপ কুমার ‘জোয়ার ভাটা’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে চিত্রনায়ক হিসেবে আবির্ভূত হন। এই চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন বগুড়ার এক সন্তান অমিয় চক্রবর্তী। এই অমিয় চক্রবর্তীর হাত ধরেই উপমহাদেশের কিংবদন্তি অভিনেতা দিলীপ কুমার চলচ্চিত্রে আসেন।

দিলীপ কুমারকে নিয়ে গবেষণা করেছেন চলচ্চিত্র সমালোচক ও লেখক অনুপম হায়াত। তাকে নিয়ে গবেষণার একপর্যায়ে খুঁজে পান এই অভিনেতার নেপথ্যে বেশ কয়েকজন বাঙালি, যারা আবার বাংলাদেশের মানুষ। স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড স্টাডিজের পাঠ্য করেছিলেন দিলীপ কুমার অভিনীত মুঘল-ই-আজম চলচ্চিত্রটি।

থিয়েটারের মানুষ হিমাংশু রায় ও দেবিকার বিলাত থেকে ফেরার পর সিনেমা বানানোর ঝোঁক চেপে বসে। বানালেন প্রযোজনাপ্রতিষ্ঠান ‘বোম্বে টকিজ’। দিলীপ কুমারকে নিয়ে বানালেন প্রথম চলচ্চিত্র ‘জোয়ার ভাটা।’ দিলীপ কুমার চলচ্চিত্রে অভিষিক্ত হলেন। হিমাংশু রায়ের বাড়ি মানিকগঞ্জে।

অনুপম হায়াত বলেন, ‘বোম্বে টকিজ’ থেকে সিনেমা বানানো হবে। নায়ক খোঁজা হচ্ছে। সেটা ১৯৪২ সালের ঘটনা। ব্রিটিশ সৈন্যদের জন্য পরিচালিত একটি ক্যান্টিনে কাজ নেন, একজন ক্যান্টিন মালিক এবং একজন শুকনো ফল সরবরাহকারী হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন ইউসুফ। সেই ক্যান্টিনেই ইউসুফকে দেখে পছন্দ হলো অমিয় চক্রবর্তীর। প্রস্তাব দিলেন সিনেমায় অভিনয় করার। নানা কথার পর রাজি হলেন ইউসুফ। নিয়ে যাওয়া হলো দেবিকা রানির কাছে। দেবিকা রানি সে সময় দারুণ সুদর্শনা। সুন্দর পুরুষদের প্রতিও ছিল বিশেষ টান। ইউসুফকে পছন্দ করে ফেললেন।

কিন্তু ইউসুফ নাম দিয়ে তো নায়ক হিসেবে চালানো যাবে না। বোম্বে টকিজের কর্মকর্তা ভগবতী বাবুকে দায়িত্ব দেওয়া হলো নাম খুঁজে বের করতে। ভগবতী বাবু ইউসুফের নায়ক হিসেবে নাম প্রস্তাব করেন উদয় কুমার। দেবিকা রানি নাকচ করে দেন। এরপর দেওয়া হয় রাজ কুমার। সেটা নাকচ হয়ে গেল। এরপর দিলীপ কুমার। দেবিকা রানি পছন্দ করলেন। ইউসুফ থেকে দিলীপ কুমার নাম ধারণ করে যাত্রা শুরু করলেন একজন সুদর্শন যুবক।

এরপর ‘প্রতিমা’সহ কয়েকটি ছবি করলেন দিলীপ কুমার। সুপার ডুপার ফ্লপ। সাফল্য পেলেন ‘মিলন’ সিনেমায়। এই সিনেমার কাহিনি রবীন্দ্রনাথের। নৌকাডুবির হিন্দি সংস্করণ মিলন। মজার ব্যাপার হলো, দিলীপ কুমারকে তারকা বানিয়ে দেওয়া মিলন ছবির পরিচালকও বাঙালি। নীতিন বসু। এই নির্মাতার আদি নিবাস বর্তমান বাংলাদেশের ময়মনসিংহের জয়সিদ্ধিতে। নীতিন বসু জগদীশ চন্দ্র বসুর আত্মীয়। নীতিন বসুর মা মৃণালিনী বসু ছিলেন মৈমনসিংহের মসুয়ার বিখ্যাত রায়চৌধুরী পরিবারের কন্যা, শিশুসাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ছোট বোন ও সুকুমার রায়ের পিসি।

নীতিন বসুর পরিচালনায়ই ‘গঙ্গা যমুনা’য় অভিনয় করেন দিলীপ কুমার। এটি বিখ্যাত একটি চলচ্চিত্র। দিলীপ কুমারের ‘বাংলা’ প্রেম শুরু থেকেই, যেটা আজীবন ছিল।

সেই অমিয় চক্রবর্তীর হাত ধরেই প্রথম ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কার পেলেন। ছবিটিতে শঙ্কর নামক যেই চরিত্রে তিনি অভিনয় করেছিলেন সেটি দর্শকদের মন ছুঁয়ে গিয়েছিল। একই সঙ্গে এই ‘দাগ’ সিনেমায় অভিনয় করেই প্রথমবারের মতো ফিল্মফেয়ারে সেরা অভিনেতা অ্যাওয়ার্ড জিতেছিলেন দিলীপ কুমার।

বাঙালিদের প্রতি দিলীপ কুমার বরাবরই দুর্বল ছিলেন। হয়তো কৃতজ্ঞতাবোধ থেকেই। এই ছবির প্রযোজনাপ্রতিষ্ঠান ‘বোম্বে টকিজ’ কিংবা পরিচালক অমিয় বা পুরো সেটেই বাঙালিদের বিচরণ। আবার দেবদাসের অভিনয় দিলীপ কুমারকে কী দিয়েছে, তা সবাই জানেন। স্বাভাবিকভাবেই বলা যায়, দিলীপ কুমারের অনুরাগ ছিল বাংলার প্রতি। যদিও তাঁর একমাত্র অভিনীত বাংলা ছবি ‘সাগিনা মাহাতো’ ফ্লপ হয়।

অনুপম হায়াত বলেন, প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের উদ্যোগে দিলীপ কুমার ঢাকায় আসেন ১৯৯৫ সালের জানুয়ারিতে। উপমহাদেশের এই কিংবদন্তি অভিনেতার আগমনে স্যুভেনির কমিটি করা হলো। সেখানে আমাকে সহসম্পাদক করা হলো। রাখা হলো সংবর্ধনা কমিটিতে। স্যুভেনিরে দুটি লেখা লিখতে হলো, এর মধ্যে একটি লেখা হলো ইংরেজিতে। ‘সিনেমা অব বাংলাদেশ’ নামের এই লেখাটি মূলত দিলীপ কুমারকে আমাদের দেশের চলচ্চিত্র সম্পর্কে একটি ধারণা দেওয়ার জন্য লিখতে হয়েছিল।

তিনি বলেন, ২৬ জানুয়ারি দিলীপ কুমারকে নিয়ে আসা হলো এফডিসিতে। চলচ্চিত্রশিল্পী সমিতির পেছনে মঞ্চ বানানো হয়েছে। শিল্পী, পরিচালক, প্রযোজকে পূর্ণ এফডিসি। আমি বসেছি দ্বিতীয় সারিতে। চাষী নজরুল ইসলাম উপস্থাপনা করছেন। মঞ্চে এলেন দিলীপ কুমার। সেই প্রথম দেখলাম দিলীপ কুমারকে। আমার স্বপ্নের নায়ককে। তিনি পর্দায় যতটা সুন্দর, বাস্তবে এর চেয়েও বেশি সুন্দর। আমার পাশে বসেছিলেন সংগীতশিল্পী আনজুমান আরা বেগম। তিনি দেখতে পাচ্ছিলেন না। তখন আমার সিটটি ছেড়ে দিলাম। উনি সেখানে দাঁড়িয়ে দেখলেন দিলীপ কুমারকে।

এই গবেষক স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘খুব অল্প সময়ে বাংলাদেশিদের মন জয় করে নিয়েছিলেন তিনি। আধো আধো বাংলায় কথা বলেছিলেন। সে সময় বাংলাদেশিরা বুঝেছিল দিলীপ কুমার শুধু হিন্দি ভাষার নয়, তাদেরও অভিনেতা। ওই একবারই দিলীপ কুমার ঢাকায় এসে বেশ কয়েক দিন ছিলেন। ছিলেন ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে। পরদিন ২৭ জানুয়ারি ওসমানী মিলনায়তনে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দিলেন। ওই অনুষ্ঠানে কিংবদন্তি অভিনেতার একটি সিনেমার গানে দুর্দান্ত নেচেছিল শাবনাজ-নাঈম জুটি। দিলীপ কুমার এতটাই অভিভূত হয়েছিলেন যে কাছে ডেকে দুজনকে জড়িয়ে ধরেছিলেন।’

চিত্রনায়ক আলমগীর দিলীপ কুমারকে মেথড অ্যাক্টিংয়ের জনক আখ্যা দিয়ে বলেন, তাঁর অভিনয়দক্ষতা যাচাই করার ক্ষমতা আমাদের নেই।

অভিনয়ের একটি কৌশল হলো মেথড অ্যাক্টিং, যেখানে অভিনয়শিল্পী বাস্তবজীবনে তাঁর চরিত্রের মতো জীবনযাপন করেন এবং ঠিক সেই ধরনের আচার-আচরণে অভ্যস্ত হন- যেন তিনি তাঁর চরিত্রে অভিনয়ের সময় জীবনধর্মী অভিনয় ফুটিয়ে তোলেন। একে বলা হয় পুরোটা চরিত্র হয়ে যাওয়া, কারণ তখন তাঁরা আর নিজেরা অভিনয় করেন না, বরং তাঁরা নিজেরাই ওই চরিত্রটি হয়ে যান এবং চরিত্রের মতোই কর্মকাণ্ড করতে থাকেন।  আলমগীরের ভাষ্য, হলিউডে এই অ্যাক্টিংয়ের সূত্রপাত হয় ১৯৫০ সালের পরে, কিন্তু এই অ্যাক্টিংয়ের জনক কিন্তু দিলীপ কুমার। অনেকেই সেটি জানে না।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন