এ কে আজাদ: ফরিদুর রেজা সাগর। বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক ও কিংবদন্তী গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টদের অত্যান্ত আপনজন, সুপ্রিয় মুখ। বর্তমান বাংলাদেশের সাহিত্য, চলচ্চিত্র, শিল্প-সংস্কৃৃতি ও গণমাধ্যমের মহীরুহ ব্যক্তিত্ব ফরিদুর রেজা সাগর বাল্যবয়সে তাঁর পিতা এদেশের চলচ্চিত্র সাংবাদিকতার পথিকৃৎ ফজলুল হক পরিচালিত চলচ্চিত্র, ‘উত্তরণ’ এবং শিশুতোষচলচ্চিত্র ‘প্রেসিডেন্ট’-এ (পরবর্তিতে ‘সান অব পাকিস্তান’ নামে মুক্তিপায়) প্রথম অভিনয় করেন। ‘সান অব পাকিস্তান’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী হিসেবে পুরস্কার লাভ করেন ফরিদুর রেজা সাগর।
বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্মলগ্ন থেকেই তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত হন। টেলিভিশনের বিভিন্ন শিশুতোষ অনুষ্ঠানের সাথে জড়িত থাকতেন। টিভি অনুষ্ঠান উপস্থাপনাও করতেন। সেসময় তাঁর লেখা বেশকিছু নাটকও টেলিভিশনে প্রচারিত হয়েছে।
ছোটবেলা থেকেই তিনি কেন্দ্রীয় ‘কচিকাঁচার মেলা’ ও ‘চাঁদের হাট’-এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তখন থেকেই তাঁর লেখা-লেখি শুরু। এ পর্যন্ত প্রায় দেড় শতাধিক বই লিখেছেন ফরিদুর রেজা সাগর। তাঁর লেখা ‘ছোট কাকু’ সিরিজ, ছোট বড় সকলের কাছে সমান জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
তিনি বড়দের জন্যও লিখেছেন নানা ধরণের বই। ভ্রমণ বিষয়ক গ্রন্থ ’ভ্রমণ ভ্রমিয়া শেষে’, বাংলাদেশের টেলিভিশন নিয়ে স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থ ‘একজীবনে টেলিভিশন’, ‘টেলিভিশন জীবনের সঙ্গী’ ও ‘আরেক জীবনে টেলিভিশন’ বইগুলো ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো যে, ‘এক জীবনে টেলিভিশন’ বইটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং তাঁর লেখা গল্প ‘অমি ও আইসক্রিম’অলা’ ৬ষ্ঠ শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
দেশসেরা শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগর ‘মানুষের মুখ’ শিরোনামে একটি জনপ্রিয় মানবিক সিরিজ লিখেন। যেখানে তাঁর নিজের দেখা মানুষদেরকে নানা ভাবে বিশ্লেষণ করেছেন তিনি।
ফরিদুর রেজা সাগর ১৯৯৯ সালের ১ অক্টোবর, প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল টেলিভিশন চ্যানেল- ‘চ্যানেল আই’। আজীবন চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনের সঙ্গে জড়িত থাকা এই মানুষটি, হৃদয়ে বাংলাদেশ ধারণ করে ‘চ্যানেল আই’-এর মাধ্যমে প্রতিনিয়ত তুলে ধরেন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে। দেশ ও দেশের মানুষকে অনেক ভালোবাসেন তিনি। টেলিভিশনের অনুষ্ঠান তৈরি ছাড়াও, সামাজিক নানা কর্মকান্ড এবং প্রতিভা অন্বেষণে ‘চ্যানেল আই’ রেখে চলেছে অগ্রণী ভূমিকা। দেশে-বিদেশে, সঙ্গীত’সহ শিল্প-সংস্কৃতির বিভিন্ন মাধ্যমে যারা মেধার ও জনপ্রিয়তার দ্যূতি ছড়াচ্ছেন, তাদের প্রায় বেশীরভাগই ‘চ্যানেল আই’ এর সৃষ্টি। তিনি পৃষ্ঠপোষকতা করছেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে। তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় অনেক প্রতিভাবান তরুণ, চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে নিজেদেরকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে।
ফরিদুর রেজা সাগরের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘ইমপ্রেস টেলিফিল্ম’ থেকে এ পর্যন্ত শতাধিক চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে । যারমধ্যে অধিকাংশ ছবিই, বিভিন্ন দেশি-বিদেশি চলচ্চিত্র উৎসবে বা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে এবং অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছে।
ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত চলচ্চিত্রসমূহের মধ্যে উল্লেযোগ্য- কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি, ব্যাচেলর, একখন্ড জমি, শাস্তি, মেঘের পরে মেঘ, সুভা, রং নাম্বার, কাল সকালে, বাঙলা, লাল সবুজ, নিরন্তর, দারুচিনি দ্বীপ, রূপকথার গল্প, সাজঘর, কাবলীওয়ালা, শ্যামল ছায়া, মেহের নিগার, বকুল ফুলের মালা, মেড ইন বাংলাদেশ, আহা!, একজন সঙ্গে ছিল, নিঝুম অরণ্যে, জিবনের গল্প, রাক্ষুসী, আমার আছে জল, বৃত্তের বাইরে, গহীনে শব্দ, স্বপ্নডানায়, আমার বন্ধু রাশেদ, থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার, ঘেটুপুত্র কমলা, লাল টিপ, উত্তরের সুর, জালালের গল্প, মনের মানুষ, মধুমতি, কুসুম কুসুম প্রেম, দেবদাস (রঙ্গীন), শিরি ফরহাদ, আকাশ কত দূরে, জোনাকির আলো, মৃত্তিকা মায়া, ঘাসফুল, অজ্ঞাতনামা, কৃষ্ণপক্ষ, ফাগুন হাওয়া, গোর, বিশ্ব সুন্দরি, প্রভৃতি অন্যতম।
ফরিদুর রেজা সাগর তাঁর কাজের স্বীকৃতি হিসাবে পেয়েছেন- শিশুসাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার-২০০৪, গণমাধ্যমে বিশেষ অবদানের জন্য একুশে পদক-২০১৫।
প্রযোজক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন ৯ বার। ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত ছবি বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে এযাবৎ প্রায় দুইশতাধিক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছে। মেরিল প্রথম আলো পুরস্কারে তিনি এ পর্যন্ত ৭ বার শ্রেষ্ঠ প্রযোজক হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন। এছাড়াও বাচসাস চলচ্চিত্র পুরস্কার’সহ বিভিন্ন সংগঠন থেকে বহু পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন।
শিশু সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি আরো পেয়েছেন- অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার, রোমেনা আফাজ স্মৃতি স্বর্ণ পদক, টেনাশিনাস পদক, ইউরো শিশুসাহিত্য পুরস্কার ও দাদাভাই শিশুসাহিত্য পুরস্কার-২০১৯।
শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র প্রযোজনার জন্য ফরিদুর রেজা সাগর বিদেশেও বহুবার নানা পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।
তাঁর পিতা ফজলুল হক, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সাংবাদিকতার পথিকৃৎ ও চলচ্চিত্র পরিচালক । তাঁর মাতা দেশবরেণ্য কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন।
তাঁর সহধর্মিনী কনা রেজা একজন লেখিকা। দুই কন্যা মেঘনা ও মোহনা। একজন চিকিৎসক, অন্যজন স্থপতি।
ফরিদুর রেজা সাগর বাংলা একাডেমীর একজন ফেলো, মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের স্থায়ী সদস্য।
ফরিদুর রেজা সাগর একটি প্রতিষ্ঠান, একটি ইতিহাস, তরুন প্রজন্মের “আইকন”। তিনি, তৈরি করেছেন বহু শিল্পী, কলাকুশলী, নির্মাতা ও সংবাদকর্মী। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র, টেলিভিশন, শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির অগ্রযাত্রায় তাঁর রয়েছে অনন্য অবদান। “মিডিয়া মোগল” হিসেবে খ্যাত
ফরিদুর রেজা সাগরের স্নেহের পরশে ও পৃষ্ঠপোষকতায়, অনেক স্বপ্নচারী তরুণের চলচ্চিত্র নির্মাণের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় আমাদের চলচ্চিত্র, টেলিভিশন, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি ও সকল গণমাধ্যম আরো সমৃদ্ধ হবে, এগিয়ে যাবে আগামীর পথে, এই প্রত্যাশা আমাদের সকলের।
ব্যক্তিজীবনে অত্যন্ত সত, ন্যায়পরায়ণ, ধার্মিক ও এক মহৎপ্রাণ মানুষ তিনি। সাদা মনের ভালো মানুষ হিসেবে সুপরিচিত ফরিদুর রেজা সাগর ১৯৫৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি, ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। আজ ২২ ফেব্রুয়ারি, চ্যানেল আই ও ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড-এর প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক, একুশে পদকপ্রাপ্ত, বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক ও কিংবদন্তী গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ফরিদুর রেজা সাগর-এর ৬৮তম জন্মদিন।
শুভ জন্মদিনে তাঁকে অন্তহীন শুভেচ্ছা।
শুভ হোক ফরিদুর রেজা সাগর আপনার জন্মদিন। জীবনের প্রতিটি দিন হোক-বিজয়ের আনন্দের সমন্বয়ে আনন্দময় এবং সাফল্যময়। সুস্থশরীরে আপনি দীর্ঘজীবী হউন, শ্রদ্ধাভাজন সুপ্রিয়জন- আপনার জন্মদিনে আজ এই প্রার্থণা করছি।