এ কে আজাদ: দোয়েল। চিত্রনায়িকা। চলচ্চিত্রে নায়িকা হওয়ার শুরুতেই তুমুল আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিনিত হন দোয়েল। প্রথম চলচ্চিত্রেই (মুক্তিপ্রাপ্ত দ্বিতীয়) কাজ করেন বিখ্যাত লেখকের কাহিনীতে এবং চলচ্চিত্রের রথীমহারথীদের সাথে। এক, খ্যাতিমান লেখক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস নিয়ে নির্মিত ‘চন্দ্রনাথ’ চলচ্চিত্রে নাম ভূমিকায়, অর্থাৎ ‘চন্দ্রনাথ’ চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ। দুই, এই ছবির পরিচালক প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার চাষী নজরুল ইসলাম।
তিন, ছবির নায়ক হলেন- নায়করাজ রাজ্জাক। অতএব আলোচনার ঝড়তো উঠবেই। এ নিয়ে তখনকার পত্র-পত্রিকাগুলো সরগরম হয়ে উঠে, আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে যান দোয়েল। এই বিষয়টি সে সময়ে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের কাছেও একটি বিস্ময়কর ব্যাপার মনে হয়েছে, নবাগতা একজন নায়িকার এমন সুযোগ পাওয়া নিয়ে।
তবে, এটুকু বলা যায় দোয়েল তাঁর সুযোগের সদ্ব্যবহার মোটামুটি ভালোভাবেই করেছেন। নায়করাজ রাজ্জাক এর বিপরীতে অভিনয় করা যা-তা ব্যাপার নয়, সেখানে দোয়েল অভিনয়ে বেশ ভালোভাবেই উৎরে গিয়েছিলেন। ‘চন্দ্রনাথ’ ছবিতে তাঁর অভিনয় দর্শকমহলে প্রশংসিত হয়েছিল, ছবিটিও হয়েছিল জনপ্রিয় ।
এই প্রতিভাবান চিত্রনায়িকা’র মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০১১ সালের ২৯ ডিসেম্বর, দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর ঢাকায় একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৪৫ বছর। অকাল প্রয়াত এই অভিনেত্রীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাই । তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি।
দোয়েল (ইফতে আরা ডালিয়া) ১৯৬৬ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর, মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার, বেজগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর তিনি চলচ্চিত্রে আসেন।
চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘চন্দ্রনাথ’ চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় শুরু করেন দোয়েল। তবে তাঁর প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র, দারাশিকো পরিচালিত ‘জিপসী সর্দার’ (২৬-১০-১৯৮৪)।
মুক্তিপ্রাপ্ত দ্বিতীয় চলচ্চিত্র, চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘চন্দ্রনাথ’-এর মাধ্যমে তিনি সিনেমাদর্শকদের দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হন। এই চলচ্চিত্রে ‘সরজু’ চরিত্রে অসাধারন অভিনয় করে, সূধিমহলে প্রশংসিত হন তিনি। নায়করাজ রাজ্জাক-এর বিপরীতে, সুন্দর-সাবলীল অভিনয়ের মাধ্যমে, একজন ভবিষ্যৎ সফল অভিনেত্রীরই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন দোয়েল।
তাঁর অভিনীত উল্লেখ্যযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে- ফয়সালা, মেলা, লক্ষীবধূ, মার্শাল হিরো, তওবা, সৎ ভাই, ছোবল, প্রেম কাহিনী, ওগো বিদেশিনী, আজ তোমার কাল আমার, খোঁজ খবর, জবানবন্দী, শেষ পরিচয়, ভাই ভাবী, ঘোমটা, ন্যায়যুদ্ধ, বিক্রম, হিসাব নিকাশ, আমার আদালত, সোহাগী, অমর বন্ধন, মাষ্টার সামুরাই, কাবুলিওয়ালা, অন্যতম৷ কাবুলিওয়ালা ছবিতেই দোয়েল সর্বশেষ অভিনয় করেছেন৷
নায়িকা দোয়েল অভিনয়ের পাশাপাশি, প্রযোজনা করেছেন, আল মাসুদ পরিচালিত ‘বিক্রম’ চলচ্চিত্রটি। তাঁর প্রযোজনায় আরেকটি চলচ্চিত্রের কাজ শুরু হয়েছিল। রায়হান মুজিব-এর পরিচালনায় ‘মহাশক্তি’ নামের এই চলচ্চিত্রটির প্রায় ৭৫ ভাগ শ্যুটিং সম্পন্ন হওয়ার পর, দোয়েল আর্থিক সঙ্কটসহ বিভিন্ন সমস্যায় থাকায়, এটির কাজ আর সম্পন্ন করতে পারেননি।
দোয়েল এক সময় নায়িকা হিসেবে এতোই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন যে, ইন্টারন্যাশনাল ব্রান্ড ‘লাক্স’ তাদের বাংলাদেশের বিজ্ঞাপনে দোয়েলকে নির্বাচন করেছিলো। ১৯৮৬ সালে তাদের দ্বিতীয় বিজ্ঞাপনচিত্রে দোয়েল অভিনয় করেন ‘লাক্স তারকা’ হয়ে। উল্লেখ্য যে, সেই সময়ে ‘লাক্স তারকা’ হওয়া ছিল বিশেষ সম্মানজনক।
ব্যক্তিগত জীবন দোয়েল ১৯৮৮ সালে, চিত্রনায়ক সুব্রতকে বিয়ে করেন। তাদের দুটি সন্তান, অন্তর ও জনপ্রিয় শিশুশিল্পি দিঘী (বর্তমানে চলচ্চিত্রে নায়িকা হয়ে এসেছেন) ।
চিত্রনায়িকা দোয়েল অনন্তলোকে ভালো থাকুন এই প্রার্থণা করি।