প্রতিভাবান অভিনেতা খালেদ খান-এর অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৫৫ বছর। প্রয়াত এই গুণী অভিনেতার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই । তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
খালেদ খান (খালেদ মাহমুদ খান যুবরাজ) ১৯৫৮ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি, টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর উপজেলাধীন, মসদই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা নজরুল ইসলাম খান, স্কুল মাস্টার ছিলেন। মায়ের নাম খালেদা বেগম। নয় ভাই বোনের মধ্যে খালেদ খান সবার বড়। তাঁর এক ভাই, শাহীন খান অভিনেতা, আরেক ভাই মামুন জাহিদ সঙ্গীতশিল্পী। খালেদ খানের স্ত্রী মিতা হক, স্বনামধন্য রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী। তাঁর কন্যা জয়িতা, সেও সঙ্গীতের সাথে জড়িত।
১৯৮১ সালে, খালেদ খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগ থেকে বি.কম ও ১৯৮৩-তে এম.কম পাস করেন।
১৯৭৫ সালে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সদস্য হিসেবে মঞ্চনাটকের মাধ্যমে তাঁর অভিনয়ের যাত্রা শুরু হয়।
মঞ্চে তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটকের মধ্যে রয়েছে- দেওয়ান গাজীর কিসসা, অচলায়তন, নূরলদীনের সারা জীবন, ঈর্ষা, দর্পণ, গ্যালিলিও, রক্তকরবী প্রভৃতি।
অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি নাটকের নির্দেশনাও দিয়েছেন। খালেদ খান নির্দেশিত উল্লেখযোগ্য নাটকের মধ্যে- রবীন্দ্রনাথের মুক্তধারা, পুতুল খেলা, কালসন্ধ্যা, স্বপ্নবাজ রূপবতী, মাস্টার বিল্ডার, ক্ষুদিত পাষাণ অন্যতম।
১৯৮২ সাল থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে, টিভি নাটকে অভিষেক হয় তাঁর। খালেদ খান অভিনীত প্রথম টিভি নাটক ‘সিঁড়িঘর’। এরপর অসংখ্য টিভি নাটকে সুনামের সাথে অভিনয় করেছেন তিনি। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য টিভি নাটকের মধ্যে রয়েছে- সকাল সন্ধ্যা, এই সব দিনরাত্রি, কোন কাননের ফুল, রূপনগর, মেঘে ঢাকা তারা, পিঞ্জিরা, অতপর, চোরাকাঁটা, ফেরা, ঘটনার পর, মফস্বল সংবাদ, সাইকো, অতল প্রহর, ওথেলো এবং ওথেলো, দমন, লোহার চুড়ি, আসা যাওয়া পথের ধারে, মহা প্রস্থান, অচলায়তন, সমুদ্রে সংসার, লাগুক দোলা, একা একা, রূমঝুম, মূহুর্ত, বিভ্রান্তি, আন্তরিক, সময় অসময়, কেবলই রাত হয়ে যায়, কেউ কাছে নেই, সুখের লাগিয়া, শীতের পাখি, নিঃশ্বাসে তুমি বিশ্বাসে তুমি, পরিণত প্রণয়, ভালোবাসায় বসবাস, তাহাদের বসন্ত দিনে, অন্য একজন, স্বপ্নের শহর থেকে, ইতি আমার বোন, মোহর আলী, ইত্যাদি ।
খালেদ খান ছিলেন অসাধারণ প্রতিভাবান একজন মেধাবী অভিনেতা। তাঁর অভিনীত বহু নাটক যেমন জনপ্রিয় হয়েছে, তেমনি তিনিও পেয়েছেন জনপ্রিয়তা, হয়েছেন প্রসংশিত। নাটকে তাঁর বলা বেশ কিছু সংলাপও এক সময় খুব জনপ্রিয়তা পায়। বিশেষ করে নব্বই দশকের নাটক ‘রূপনগর’-এ তাঁর মুখে বলা- ‘ছি ছি, তুমি এত খারাপ’ এই সংলাপটি তখন টেলিভিশনদর্শকদের মুখে মুখে ফিরত।
টিভি নাটকের জনপ্রিয় এই অভিনেতা ‘পোকামাকড়ের ঘরবসতি’ ও ‘আহা!’ নামে দুটি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছিলেন। চলচ্চিত্রেও তিনি, তাঁর অভিনয় দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে গেছেন সুনিপুণভাবে।
খালেদ খান নিজের অভিনয় প্রতিভার গুণে পেয়েছেন বহু পুরস্কার ও সম্মাননা। যারমধ্যে- মোহাম্মদ জাকারিয়া পদক, নুরুন্নাহার স্মৃতি পদক, সিজেএফবি সেরা পরিচালক ও ইমপ্রেস-অন্যদিন সেরা অভিনেতা, উল্লেখযোগ্য।
পেশাগত জীবনে খালেদ খান, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৯৭ সালে বেক্সিমকো ফার্মার ইনচার্জ হিসেবে কাজ করেন। ২০০১-এ তিনি একুশে টেলিভিশনের জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে কাজ শুরু করেন। ২০০৫-এ বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে যোগদেন।
২০০৯ সালে তিনি ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ পান, মৃত্যুর আগপর্যন্ত এই দায়িত্বে ছিলেন।
অভিনয়শিল্পে ও সংস্কৃতিঅঙ্গনে, যে উজ্জ্বল বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে গেছেন খালেদ খান, তা অবশ্যই স্মরণযোগ্য।