আজাদ আবুল কাশেম: প্রতিভাদিপ্ত মেধাবী অভিনেতা জলিল-এর ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০১৬ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। প্রয়াত এই গুণি অভিনেতার প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
জলিল (আবদুল জলিল) ১৯৪০ সালে সৌদি আরবের বাহরাইনে, জন্মগ্রহন করেন। গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া থানার কাউরাট গ্রামে। তাঁর বাবা আব্দুল হাফিজ ছিলেন বিচারপতি, মা আজিজা বেগম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এম.এ পাস করে ছিলেন অভিনেতা জলিল।
তৎকালীন টেলিভিশনের অতি জনপ্রিয় সিরিজ ‘ত্রিরত্ন’র অসাভাবিক জনপ্রিয় ও প্রতিভাবান অভিনয়শিল্পী ছিলেন জলিল। ‘ত্রিরত্ন’র এক রত্ন ‘পান্না’ চরিত্রে অত্যান্ত সাবলিল অভিনয় দক্ষতায় স্থায়ী আসন জয় করেছিলেন তখনকার টিভি দর্শকদের মনে। জলিলের অভিনয় নৈপূণ্যের এতটাই প্রদর্শিত হয়েছিল ‘ত্রিরত্ন’তে, যা আজও মানুষের মনে গেঁথে রয়েছে।
১৯৬৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত, কাজী জহির পরিচালিত বিখ্যাত ছবি ‘ময়নামতি’তে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে প্রবেশ করেন জলিল। এরপরে তিনি আরো অভিনয় করেন- মধু মিলন (১৯৭০), পীচ ঢালা পথ (১৯৭০) ও আদর্শ ছাপাখানা (১৯৭০) চলচ্চিত্রে।
অসাধরণ প্রতিভাবান অভিনেতা জলিল মাত্র এই কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেই, চলচ্চিত্র ও অভিনয় থেকে দূরে সড়ে যান। চাকুরী নেন ‘আমেরিকান অয়েল কোম্পানি’তে ।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই কোম্পানিই ‘মেঘনা পেট্রোলিয়াম’ নামে যাত্রা শুরু করে। ‘মেঘনা পেট্রোলিয়াম’-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে ১৯৯৭ সালে অবসর গ্রহণ করেন তিনি।
ত্রিভুঁজ প্রেমকাহিনী (মতি-ময়না-মনা) নিয়ে নির্মিত ‘ময়নামতি’ ছবিতে অভিনেতা জলিল ছিলেন দুই নায়কের, এক নায়ক। যদিও তাঁকে সবাই কৌতুক অভিনেতা হিসেবে অবিহিত করেন। তাঁর চরিত্রের প্রেক্ষাপটে আমি তাঁকে নায়ক হিসেবেই মানি। এই ছবিতে পরিচালক প্রথম দিকে তাঁকে কমেডিয়ান হিসেবে উপস্থাপন করলেও, তিনি কিন্তু শেষের দিকে একজন সিরিয়াস প্রেমিকের চরিত্রে অবতীর্ণ হয়েছেন অবলীলায়। এই ছবিতে তাঁর লিপ-এ গাওয়া গান- টাকা তুমি সময় মত আইলা না…, তখনকার চলচ্চিত্র দর্শকদের মুখে মুখে ফিরেছে। অত:এব জলিল ‘ময়নামতি’র একজন অন্যতম নায়ক, আমার মতে।
কৌতুক অভিনেতার খেতাব পাওয়া জলিল ১৯৭০ সালে অভিনয় করেন আরেক স্বনামখ্যাত চিত্রপরিচালক, এহতেশাম পরিচালিত ‘পীচঢালা পথ’ ছবিতে। এই ছবিতেও তিনি দুই নায়কের, এক নায়ক। তাঁর সাথে নায়িকা ছিলেন বেবী রিতা। অন্য নায়ক-নায়িকা জুটি ছিলেন রাজ্জাক-ববিতা।
এই ছবিটি শুরুই হয় তাঁকে দিয়ে। ঢাকার বিভিন্ন রাস্তায় চিত্রায়ীত, জলিলের লিপ-এ গাওয়া সেই কালজয়ী গান দিয়ে- পীচঢালা এই পথটারে ভালবেসেছি, গোলক ধাঁধার চক্করে যতই পড়েছি…। এই গান এখনও সমান জনপ্রিয়। এখনও মানুষ এই গান ভালোবাসে। আমি বিশ্বাস করতে চাই সিনেমাপ্রেমী মানুষগুলো, অভিনয়প্রিয় মানুষগুলো এখনও ভালবাসে প্রতিভাবান গুণি অভিনয়শিল্পী জলিলকে।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন নাটকের ইতিহাসে, প্রতিভাদিপ্ত মেধাবী অভিনেতা জলিল- চির স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।