এ দেশের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ সবাক বাংলা চলচ্চিত্রের নায়িকা পূর্ণিমা সেনগুপ্তা’র ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ১৯৯৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। প্রয়াত এই অভিনেত্রীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাই । তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি।
পূর্ণিমা সেনগুপ্তা (বিবাহপরবর্তী নাম পারভীন বানু) ১৯৩৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর, আসামের (অসম) গৌহাটি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শৈশবকাল গৌহাটিতেই কেটেছে। পরে চট্টগ্রামের পাথরঘাটায় তাঁর পৈতৃক বাড়িতে চলে আসেন। চট্টগ্রামে এসে বাবা-মায়ের উৎসাহে নাচগান শেখা শুরু করেন। একসময় তিনি নৃত্যশিল্পী হিসেবে বেশ নাম করেন। নাচের পাশাপাশি তিনি মঞ্চে অভিনয়ও শুরু করেন।
এক সময় মঞ্চঅভিনয়কে পেশা হিসেবে বেছে নেন। সেই সময়ে, জনপ্রিয় নায়িকা হিসেবে একের পর এক মঞ্চনাটকে অভিনয় করে গেছেন। তাঁর অভিনীত মঞ্চের উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো ছিল- নবাব সিরাজউদ্দৌলা, শাজাহান, চন্দ্রগুপ্ত, নন্দলাল, গুনাইবিবি, বেদের মেয়ে, বিষ্ণুপ্রিয়া, রাধাকৃষ্ণ, আলোমতি, ভেলুয়া সুন্দরী, কমলার বনবাস, মহুয়া, চাঁদ সওদাগর, গরিবের মেয়ে, চণ্ডীদাস প্রভৃতি।
১৯৫৪ সালে ‘ইত্তেহাদ’ পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ছাপা হলো, ‘ঢাকায় চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে, নায়িকার জন্য কয়েকটি নতুন মুখ চাই’। বিজ্ঞাপন পড়ে পূর্ণিমা ছবিসহ চিঠি পাঠিয়ে দিলেন ঢাকায়, আবদুল জব্বার খানের ঠিকানায়। ছবি দেখে আবদুল জব্বার খান, পূর্ণিমা’কে পছন্দ করলেন। আর এভাবেই পূর্ণিমা সেনগুপ্তা, ঢাকার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ সবাক বাংলা চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এর প্রধান নায়িকা হয়ে গেলেন। আবদুল জব্বার খানের পরিচালনায় ‘মুখ ও মুখোশ’ মুক্তিপায় ১৯৫৬ সালে। এই চলচ্চিত্রের নায়কও ছিলেন আবদুল জব্বার খান। নায়িকা হিসেবে এটিই পূর্ণিমা সেনগুপ্তা’র প্রথম এবং শেষ চলচ্চিত্র। পরবর্তীতে অবশ্য তিনি চরিত্রাভিনেত্রী হিসেবে, ‘সোনার কাজল’ ‘হাম সফর’ ও ‘কাঁচের দেয়াল’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।
১৯৬২ সালে তিনি চিত্রপ্রযোজক ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ী মোহাম্মদ নাছিরকে বিয়ে করে চলচ্চিত্র থেকে দূরে সরে যান। বিয়ের পর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে, পূর্ণিমা সেনগুপ্তা থেকে হয়ে যান, পারভীন বানু।
১৯৭১ সালে তাঁর বড় ছেলে বাবলা মারা যায়। কিছু দিন পর স্বামী মোহাম্মদ নাছির তাঁকে ছেড়ে বিদেশে চলে যান। শোক ও সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে পড়েযান পূর্ণিমা সেনগুপ্তা। সংসারের পুরো দায়িত্ব তখন তাঁর উপর এসে বর্তায় । প্রতিকূলতার মাঝেও নিজের একক প্রচেষ্টায় ছেলে-মেয়েদের তিনি প্রতিষ্ঠিত করেন।
তাঁর মেয়ে ‘নাসরিন’ এক সময় বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে নায়িকা হয়েছিলেন। শেষ জীবনটা তিনি কিটিয়েছিলেন মেয়ের বাসাতেই।
আমাদের দেশীয় চলচ্চিত্রের পথিকৃৎ চিত্রনায়িকা হিসেবে, পূর্ণিমা সেনগুপ্তা ইতিহাস হয়ে আছেন- থাকবেন।