বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের দাপুটে অভিনেতা নায়ক মান্না’র ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৪৪ বছর। মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে বিন্ম্র শ্রদ্ধায় তাঁকে স্মরণ করছি। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
নায়ক মান্না (সৈয়দ মোহাম্মদ আসলাম তালুকদার) ১৯৬৪ সালের ১৪ এপ্রিল, টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গায়, জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর বাবার নাম নুরুল ইসলাম তালুকদার ও মায়ের নাম হাসিনা ইসলাম।
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করে ঢাকা কলেজে স্নাতকে ভর্তি হয়েছিলেন। ১৯৮৪ সালে এফডিসির নতুন মুখের সন্ধান কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্রে আসেন তিনি। তাঁর অভিনীত প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘পাগলী’।
জনপ্রিয় নায়ক মান্না অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবিগুলো হলো- তওবা, ফুলসয্যা, যন্ত্রণা, কাসেম মালার প্রেম, দাঙ্গা, ত্রাস, অন্ধপ্রেম, প্রেম দিওয়ানা, ডিস্কো ড্যান্সার, বাবার আদেশ, দেশদ্রোহী, তেজী, লুটতরাজ, শান্ত কেন মাস্তান, কে আমার বাবা, বাস্তব, উত্তরের খেপ, আম্মাজান, লাল বাদশা, আব্বাজান, স্বামী স্ত্রীর যুদ্ধ, দুই বধূ এক স্বামী, মনের সাথে যুদ্ধ, মান্না ভাই, পিতা মাতার আমানত, বীর সৈনিক, দেশ প্রেমিক, সিপাহী, জীবন নিয়ে যুদ্ধ, এ দেশ কার, জীবনের গল্প, ভাইয়ের শত্রু ভাই, কঠিন পুরুষ, জীবন এক সংঘর্ষ, ভাইয়া, সমাজকে বদলে দাও, চিরঋণী, সাক্ষী প্রমাণ, মেশিনম্যান, রুস্তম, বর্তমান, গরম হাওয়া, সাজঘর, ঢাকাইয়া মাস্তান, প্রতিবাদী মাস্টার, আমি জেল থেকে বলছি, অবুঝ শিশু, ছোট বৌ, শত্রু শত্রু খেলা, মায়ের মর্যাদা, এই যে দুনিয়া, বিদ্রোহী মাস্তান, জগত সংসার, রাজধানী, কাবুলিওয়ালা, সুলতান, ভিলেন, নায়ক, বাপ বেটার লড়াই, আমাদের সন্তান, ঈমানদার মাস্তান, মাথা নষ্ট, শেষ যুদ্ধ, জুম্মন কসাই, স্বামী ছিনতাই, রুটি, বাবা মাস্তান, দেশের মাটি, আন্দোলন, মোস্তফা ভাই, হৃদয় নিয়ে যুদ্ধ, বশিরা,
জীবন দিয়ে ভালোবাসি, ভেজা বিড়াল, অশান্ত আগুন, বোমাহামলা, আসলাম ভাই, রাজপথের রাজা, আব্বাস দারোয়ান, প্রেমের মরা জলে ডোবেনা, প্রেমের স্মৃতি, কান্দ কেন মন, ক্রিমিনাল, খলনায়ক, ভাইয়ের আদর, সাক্ষাত, গরীবের বউ, অবুঝ সন্তান, শাদী মোবারক, মনের সাথে যুদ্ধ, মোগল-এ আজম, দরিয়া পাড়ের দৌলতী ইত্যাদি।
নায়ক হিসেবে তিনি যেমন জনপ্রিয় ছিলেন, তেমনই তাঁর প্রযোজিত ছিবগুলোও পেয়েছে জনপ্রিয়তা। তাঁর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘কৃতাঞ্জলি চলচিত্র’ থেকে নির্মিত হয়- লুটতরাজ, লাল বাদশা, আব্বাজান, স্বামী স্ত্রীর যুদ্ধ, দুই বধূ এক স্বামী, মনের সাথে যুদ্ধ, মান্না ভাই, পিতা মাতার আমানত, প্রভৃতি।
তিনি অভিনয়ে স্বীকৃতি স্বরূপ, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন, শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে ‘বীর সৈনিক’ ছবিতে (২০০৩)। বাচসাস চলচ্চিত্র পুরস্কার শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ‘আম্মাজান’ (১৯৯৯) ছবিতে। শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেতা হিসেবে দুইবার ‘মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার’ বিজয়ী।
তিনশ’র মত ছবিতে অভিনয় করেছেন নায়ক মান্না। অনেক ধৈর্য-পরিশ্রম-সংগ্রাম ও অধ্যাবশায়ের বিনিময়ে একসময় তিনি হয়ে উঠেছিলেন ঢাকাই সিনেমার টপ হিরো’দের একজন। নায়ক হিসেবে নিজেকে নিয়ে গিয়েছিলেন সাফল্যের অনন্য উচ্চতায়, জনপ্রিয়তার শীর্ষে। একের পর এক দিয়েছেন ব্যবসাসফল ছবি, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সেরা নায়ক হিসেবে। দর্শকদের হলমুখী করতে নায়ক মান্নার ছিলো অনেক অবদান।
নায়ক মান্না একজন দক্ষ সংগঠকও ছিলেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
ব্যক্তিগত জীবনে মান্না তাঁর কর্মজীবনের শুরুর দিকে, সহ-অভিনেত্রী শেলী কাদেরের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের, সিয়াম ইলতিমাস মান্না নামে এক পুত্র সন্তান রয়েছে।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে, নায়ক মান্না চির স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
ছবি- ফিরোজ এম হাসান