নন্দিত অভিনেত্রী ডলি আনোয়ারের ৩০তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ১৯৯১ সালের ৩ জুলাই, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন( আত্মহত্যা করেন )। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৪৩ বছর। প্রতিভাবান গুণি এই অভিনেত্রীর স্মৃতির প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা এবং তাঁর বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করি।
ডলি আনোয়ার (ডলি ইব্রাহিম) ১৯৪৮ সালের ১ জুলাই, ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা প্রখ্যাত চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম এবং মা ড. নীলিমা ইব্রাহিম ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, লেখক, গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন স্বনামধন্য অধ্যাপিকা। তাঁর স্বামী ছিলেন বিখ্যাত আলোকচিত্রশিল্পী ও সিনেমাটোগ্রাফার আনোয়ার হোসেনে। খ্যাতিমান চিত্রপরিচালক আলমগীর কবীর ছিলেন তাঁর ভগ্নিপতি। ডলি আনোয়ার ১৯৭৩ সালে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এম. এ. পাস করেন।
স্কুলে পড়ার সময় থেকেই ডলি আনোয়ার অভিনয় চর্চার সাথে যুক্ত হন। শিশু বয়সেই তিনি বেশকিছু নাটকে অভিনয় করে দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
১৯৬৪ সালে, প্রথম বেতার নাটকে অংশগ্রহন করেন তিনি। ১৯৬৫-তে অভিনেত্রী ডলি আনোয়ার, টেলিভিশনের প্রথম নাটক ‘একতলা দোতলা’য় অভিনয়ের মাধ্যমে টিভি নাটকে আত্মপ্রকাশ করেন । একসময় টেলিভিশন নাটকের প্রথিতযশা নাট্যশিল্পী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। নিজস্ব অভিনয় প্রতিভার গুণে, জনপ্রিয়তার অনন্য উচ্চতায় নিজস্ব একটি ধারা তৈরি করতে সক্ষম হন। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য টিভি নাটক- বকুলপুর কতদূর, শেষ বিকেলের মেয়ে, জোনাকি জ্বলে, চরিত্রহীন, কঙ্কাল, দুয়ে দুয়ে চার, চিঠি, রোজ রোজ, স্বপ্নের সীমানা, সোনার শিকল, আর এক বসন্ত, সূর্যাস্তের পর, সমুদ্র অনেক দূর, প্রভৃতি।
মসিহউদ্দিন শাকের ও শেখ নিয়ামত আলী পরিচালিত ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’ চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন ডলি আনোয়ার । ছবিটি মুক্তিপায় ১৯৭৯ সালে। অভিনীত প্রথম ছবিতেই, শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন তিনি। তাঁর অভিনীত দ্বিতীয় ছবি ‘দহন’ মুক্তিপায় ১৯৮৫ সালে, পরিচালনা করেন শেখ নিয়ামত আলী । ডলি আনোয়ার অভিনীত তৃতীয় ছবি ‘হুলিয়া’ (স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র) ১৯৮৯ সালে মুক্তি পায়। পরিচালনা করেছেন তানভীর মোকাম্মেল।
নাটক কিম্বা চলচ্চিত্র, যখন যেখানে, যে চরিত্রেই অভিনয় করেছেন, প্রতিভার সর্বোত্তম বিকাশ ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন মেধাবী অভিনেত্রী ডলি আনোয়ার।
তাঁর অভিনীত চরিত্রকে নিজের মধ্যে ধারণ করতেন তিনি। চরিত্রের মধ্যে নিজেকে প্রবিষ্ট করে, সংবেদনশীল বাস্তবভিত্তিক অভিনয় দক্ষতায়, অভিনীত চরিত্রটিকে নিয়ে যেতেন সাফল্যের অনন্য উচ্চতায়। যখন যে চরিত্রে অভিনয় করেছেন, দর্শক গ্রহণযোগ্যতায় সফল হয়েছেন শতভাগ। জনপ্রিয়তা ও প্রসংশার শীর্ষস্থানে নিজের আসন পাকাপোক্ত করেছেন অনায়াসে।
অনন্য প্রতিভার অধিকারী ডলি আনোয়ার, শিল্প-সংস্কৃতির অন্যান্য শাখাতেও তাঁর ছিল স্বাছন্দ বিচরণ। এদেশের মহিলা আলোকচিত্রী হিসেবে তখনকার সময়ে তিনি ছিলেন বেশ মেধাবী। ফটোগ্রাফিতে আন্তর্জাতিক ইউনেস্কো পুরস্কার লাভ করেছিলেন তিনি। সাংবাদিকতার সাথেও যুক্ত ছিলেন। ‘সাতদিন’ নামে সাপ্তাহিক একটি পত্রিকার সম্পাদকও ছিলেন।
অভিনেত্রি, সাংবাদিক, আলোকচিত্রী ও সংস্কৃতিকর্মী ডলি আনোয়ার । দেশের শিল্প-সংস্কৃতির সুস্থ ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান বিশেষভাবে স্মরণযোগ্য। অভিনয়শিল্পে নিবিষ্ট একপ্রাণ মানুষ ডলি আনোয়ার, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় নন্দিত হয়ে থাকবেন অনন্তকাল।