এ কে আজাদ: রাজ। অভিনেতা। আমাদের দেশের চলচ্চিত্রের ভিলেন হিসেবে তথা মন্দলোকের চরিত্রে সেরা অভিনেতাদের মধ্যে অন্যতম একজন । অসংখ্য ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রে দাপটের সাথে অভিনয় করে গেছেন তিনি। দেশীয় চলচ্চিত্রের শক্তিমান খলঅভিনেতা রাজ-এর মৃত্যুবার্ষিকী আজ।
তিনি ১৯৯৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৫৮ বছর। প্রয়াত এই গুণী অভিনেতার স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই । তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
রাজ (মনিরুজ্জান) ১৯৩৬ সালে, পিরোজপুর জেলার ধূপপাশা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিরোজপুর গভর্ণমেন্ট স্কুল থেকে এসএসসি ও বরিশাল বিএম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে, করাচিতে লেয়াকত আলী কলেজে লেখাপড়া করেন।
ছাত্রজীবন থেকেই মঞ্চনাটকের সাথে জড়িত হন রাজ। ঢাকার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট’সহ ঢাকার বিভিন্ন মঞ্চে অভিনয় করতেন। আর মঞ্চ থেকেই চলচ্চিত্রে আসেন তিনি । তাঁর অভিনীত প্রথম ছবি, ইবনে মিজান পরিচালিত ‘একালের রূপকথা’ মুক্তিপায় ১৯৬৫ সালে।
তাঁর অভিনীত অন্যান্য ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- রাজা সন্যাসী, গুনাই বিবি, ডাকবাবু, নবাব সিরাজউদ্দৌলা, সাইফুলমুলক বদিউজ্জামাল, কুলি, সোয়ে নদীয়া জাগে পানি, মধুমালা, সমাপ্তি, পারুলের সংসার, ওরা ১১ জন, স্মৃতি তুমি বেদনা, রংবাজ, দয়াল মুর্শিদ, দস্যুবনহুর, সমাধি, টারজান অব বেঙ্গল, দোস্ত দুশমন, ওমর শরীফ, কুদরত, দিনের পর দিন, একই অঙ্গে এতরূপ, আসামী, বন্ধু, ঈমান, শহর থেকে দূরে, সমাধি, দোস্তী, পরাণ পাখি, আসামী হাজির, রসের বাইদানী, পদ্মাবতী, নরম গরম, সাথী, রাজিয়া সুলতানা, বিদ্রোহী, শাহী কানুন, রাজ সিংহাসন, শাস্তি, রাই বিনোদী, সাথী, মর্জিনা, সন্ধি, ফুলন, সোহেল রানা, ধর্ম আমার মা, আক্রোশ, আমিই ওস্তাদ, জারকা, খামোশ, মালা বদল, চন্দ্রাবতী, বিচারপতি, ডাকু ও দরবেশ, অস্বীকার, হীরামতি, চন্দনা ডাকু, কাল নাগিনী, পদ্ম গোখরা, নিয়তির খেলা, আমিই ওস্তাদ, সংসার সীমান্তে, দুখিনীবধূ শয়তান যাদুকর, দায়ী কে, সতীকমলা, সন্ধি, অমর সঙ্গী, কন্যাদান, ত্যাগ, প্রভৃতি।
‘বিধিলিপি’ নামে একটি ছবিও প্রযোজনা করেছিলেন, অভিনেতা রাজ। তিনি বেতার ও টেলিভিশন নাটকেও অভিনয় করেছেন।
ভিলেন বা খলচরিত্রের একজন জাঁদরেল অভিনেতা ছিলেন রাজ। খল বা মন্দলোকের চরিত্রে অভিনয় করেও তিনি একসময় জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। দুর্দান্ত খল অভিনেতা হিসেবে একের পর এক অভিনয় করে গেছেন ব্যবসাসফল সব নামকরা সিনেমায়।
শুধু ভিলেন বা খলচরিত্রেই না, বিভিন্ন ছবিতে নানা ধরণের চরিত্রে অভিনয় করে, একজন শক্তিমান অভিনেতা হিসেবে দক্ষতা দেখিয়েছেন সব ছবিতেই। একজন গুণী অভিনেতা হিসেবে দর্শকমহলে প্রসংশিত হয়েছেন, জনপ্রিয়তা পেয়েছেন।
যাদের অভিনয় দক্ষতায় সমৃদ্ধ হয়েছে বাংলাদেশের সিনেমা, অভিনেতা রাজ ছিলেন তাদের অন্যতম একজন । বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অবদান রেখে যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে তিনিও আছেন। লক্ষ-কোটি ভক্ত-দর্শকদের হৃদয়ে রাজ এর মতো অভিনেতা অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে।