এ কে আজাদ: জাম্বু। অভিনেতা। আশি-নব্বই দশকের এ্যাকশনধর্মী বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের এক গুরুত্বপূর্ণ অভিনেতা ছিলেন তিনি। তাঁর অভিনয়ের নিজস্ব একটা ষ্টাইল ছিল। অল্প সময়ের জন্য স্ক্রিনে থাকলেও, চমকে দিতে জানতেন সিনেমাদর্শকদের। একসময়ে আমাদের চলচ্চিত্রে এমন কিছু কিছু চরিত্র ছিল, যেসব চরিত্রে জাম্বু’র কোন বিকল্প ছিল না। এই দুর্ধর্ষ খলঅভিনেতা’র মৃত্যুবার্ষিকী আজ।
তিনি আজ থেকে বিশ বছর আগে, ২০০৪ সালের ৩ মে, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬০ বছর। প্রয়াত এই অভিনেতার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর আত্মার চিরশান্তি কামনা করি।
জাম্বু (বাবুল গোমেজ) ১৯৪৪ সালে, দিনাজপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন । শুনা যায় দিনাজপুর শহরের পার্বতীপুরের মেথরপট্টিতে একসময় থাকতেন তিনি। ঢাকায় কাজের সন্ধানে এসে ঘটনাক্রমে চলচ্চিত্রের সাথে যুক্ত হন।
অসংখ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন জাম্বু। দুই একটা মারপিট দৃশ্য থেকে শুরু করে প্রধান ভিলেন চরিত্রসহ অগণিত চরিত্রে রূপদান করেছেন তিনি। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবি- এক মুঠো ভাত, সাগর ভাসা, দোস্ত দুশমন, রক্তের দাগ, ঝুমুর, অঙ্গার, শেষ পরিচয়, সাধনা, ওয়াদা, বুলবুল-এ বাগদাদ, আলিফ লায়লা আলাউদ্দিনের আশ্চার্য প্রদীপ, বন্ধু, লাভ ইন সিঙ্গাপুর, অভিযান, উসিলা, নিষ্পাপ, অমর, শীষনাগ, সেলিম জাভেদ, হাসান তারেক, নির্দোষ, সাথী, পাষাণ, নাগমহল, ওমর শরীফ, লোভ লালসা, সুলতানা ডাকু, উনিশবিশ, অগ্নিপুরুষ, আঁচলবন্দি, চোর, ফেরারী, আখেরী নিশান, জিপসী সর্দার, দায়ীত্ব, রাজনন্দিনী, হিসাব চাই, প্রতিহিংসা, জনি, নেপালি মেয়ে, লটারী, নিঃস্বার্থ, ইনকিলাব, বনবাসে বেদের মেয়ে জোসনা, মর্জিনা, রাজবন্দী, সোহরাব রুস্তম, জ্বলন্ত আগুন, খলনায়ক, বিজয়, কালিয়া, সাজা, প্রেম দিওয়ানা, সন্ত্রাস, অতিক্রম, পালকি, আঁচল বন্দী, আত্মত্যাগ, মোহাম্মদ আলী, ধর্ম আমার মা, ডাকাত, নবাব, রাস্তা, রাস্তার রাজা, রকি, আত্মরক্ষা, পরিবার, সন্ত্রাস, অতিক্রম, নবাব সিরাজউদ্দৌলা, রাজলক্ষী শ্রীকান্ত, দায়ী কে, মিস লংকা, মোহনবাঁশী, উত্থান পতন, হাবিলদার, বিজয়, গোলাবারুদ, বাঘা বাঘিনী, সমর, অপরাজিত নায়ক, আপোষ, বিজলী তুফান, মাটির ফুল, রুবেল আমার নাম, টাইগার, বনের রাজা টারজান, হিরো, রাজাবাবু, নয়া লায়লা নয়া মজনু, শিকার, ধনরত্ন, শত্রু ধ্বংস, ঘাতক, কালিয়া, সাজা, রাখাল রাজা, বজ্রপাত, খুনের বদলা, বিপ্লব, যোদ্ধা, মৃত্যুদণ্ড, জ্যোতি, মূর্খ মানব, দেন মোহর, প্রেম দিওয়ানা, চাকর, ববি, সাগরিকা, নির্মম, ইত্যাদি।
কৃষ্ণবর্ণের বিশাল শরীরের টাক মাথার এক দুর্ধর্ষ ভিলেন ছিলেন জাম্বু। রুদ্রমূর্তির মতো চাহনি, ঠোটের কোণে নিষ্ঠুর পৈশাচিক হাসি, কর্কট কণ্ঠস্বরের অতি ভয়ংকর চরিত্রের এক অভিনেতা। আশি-নব্বই দশকের এ্যাকশনধর্মী বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের এক গুরুত্বপূর্ণ অভিনেতা। তাঁর অভিনয়ের নিজস্ব একটা ষ্টাইল ছিল। অল্প সময়ের জন্য স্ক্রিনে থাকলেও, চমকে দিতে জানতেন সিনেমাদর্শকদের। পর্দায় ভিলেন জাম্বু নায়কের হাতে মার খাচ্ছেন, এটা ছিল সিনেমাদর্শকদের কাছে তখনকার সময়ে বেশ মজার ও বিনোদনের বিষয়। খুবই জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। তাঁকে নায়ক করে ‘নাবালক’ নামে একটি ছবিও হয়েছিল, কিন্তু মুক্তিপায়নি।
একসময়ে আমাদের চলচ্চিত্রে এমন কিছু কিছু চরিত্র ছিল, যেসব চরিত্রে জাম্বুর কোন বিকল্প ছিল না। এতটাই জনপ্রিয় ছিলেন জাম্বু যে, এমন এক সময় গেছে যখন কোন মোটা মানুষ দেখলেই বলা হতো ‘জাম্বু’ বডি, এমনই কিংবদন্তী হয়েছিলেন তিনি। এতটা অপরিহার্য খলঅভিনেতা হলেও, জাম্বু বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তীদের কাতারে ঠাঁই পাননি। তাঁর মৃত্যুর পর কেউ তাঁকে হয়তো মনেও রাখেননি।
তবে, লাখো-কোটি সিনেমাদর্শকদের হৃদয়ে এই কিংবদন্তীতুল্য ভিলেন অভিনেতা জাম্বু, চিরঅমলিন হয়ে থাকবেন।