একে আজাদ: সুনেত্রা। চিত্রনায়িকা। কলকাতার মেয়ে হয়েও আশির দশকে ঢাকার চলচ্চিত্রে নায়িকা হিসেবে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। গ্লামারা সুন্দর আঁখিপল্লবের অধিকারিণী সুনেত্রা, শহরের আধুনিকা গ্ল্যামারাস মেয়ে কিম্বা গ্রামের মেয়ে-বধূ সবধরণের চরিত্রে তাঁকে যেমন মানিয়ে যেত, তেমনি সুনেত্রাও সেসব চরিত্রে সাবলীল অভিনয়ের মাধ্যমে চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলতেন অনায়াসে।
ঢাকায় তিনি যে কয়টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন সবগুলো চলচ্চিত্রই হয়েছে ব্যবসাসফল ও জনপ্রিয়। ঢাকাই সিনেমার এক সময়ের জনপ্রিয় নায়িকা সুনেত্রা’র প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০২৪ সালের ২০ এপ্রিল, ভারতের কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৪ বছর। প্রয়াণ দিবসে তাঁর স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করি।
সুনেত্রা ১৯৭০ সালের ৭ জুলাই(উইকিপিডিয়া), ভারতের কলকাতায়, এক সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পারিবারিক নাম রীণা মণ্ডল । দুই ভাইবোনের মধ্যে সুনেত্রা ছোট। তিনি মাধ্যমিক পাস করেছিলেন কলকাতার গখলে মেমোরিয়াল গার্লস হাই স্কুল থেকে। পরবর্তীতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণিবিদ্যায় মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। ছোটবেলা থেকেই সংস্কৃতি চর্চার প্রতি মনযোগী ছিলেন । নাচ, গান ও অভিনয়ে নিজেকে তৈরি করেছিলেন। কলকাতায় সুন্দরী প্রতিযোগিতায় ‘রানার্স আপ’ হয়েছিলেন। থিয়েটারে কাজের মাধ্যমে অভিনয়ে আসেন তিনি।
সুনেত্রা, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন, চলচ্চিত্রকার মমতাজ মালী পরিচালিত ‘উসিলা’ ছবির মাধ্যমে। এই ছবিটি মুুক্তি পায় ১৯৮৫ সালে।
সুনেত্রা অভিনীত অন্যান্য চলচ্চিত্র- বোনের মতো বোন, ভাবীর সংসার, সাধনা, ভাইবন্ধু, পালকী, রাজা মিস্ত্রি, যোগাযোগ, সুখের স্বপ্ন, আলাল দুলাল, শুকতারা, কুচবরণ কন্যা, বন্ধু আমার, শিমুল পারুল, ভাই আমার ভাই, লায়লা আমার, লায়লা, দুঃখিনী মা, বিধান, নাচে নাগিন, ভুল বিচার, অগ্নিপুরুষ, কালাখুন, স্বর্পরাণী, বিক্রম, বাদশা ভাই, রাজা জনি, আমার সংসার, ঘর ভাঙা ঘর প্রভৃতি।
সুনেত্রা অভিনীত ও দারাশিকো পরিচালিত সুপারহিট ছবি ‘ভাইবন্ধু’র উর্দু ভার্সন হয়েছিল, নাম ‘ডিস্কো দেওয়ানে’।
সুনেত্রা, কলকাতায়ও কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেন।
যারমধ্যে- সহধর্মিণী, সিঁথির সিঁদুর, খেলাঘর, মনসাকন্যা ও দানব অন্যতম। তিনি পাকিস্তানের চলচ্চিত্রও অভিনয় করেছিলেন।
সুনেত্রা ব্যক্তিজীবনে দুইবার বিয়ে করেন। প্রথম বিয়ে করেন বাংলাদেশে, শামসুল হক মোহন নামে এক ব্যক্তিকে (ধর্মান্তরিত হয়ে নিজের না রাখেন ‘ফাতেমা হক’)।
একসময় মোহনের সাথে বনিবনা না হওয়াতে ডিভোর্স দিয়ে, বেনাপোল সীমানা দিয়ে বিনা পাসপোর্টে চলে গিয়েছিলেন নিজের দেশে। সেখানে বিএসএফ’র অফিসার সুরেশ কুমারের সাথে তাঁর মন দেয়া-নেয়া হয়। সুরেশ কুমার ছিলেন পাঞ্জাবি। সুনেত্রাকে ভালোবেসে বিয়ে করেন তিনি। সুনেত্রার দ্বিতীয় সংসারেও কোনো সন্তানাদি জন্ম হয়নি।
জানা যায় সুনেত্রা শেষ জীবনে তেমন একটা ভালো ছিলেন না। নিজের পারিবারিক সমস্যা ছাড়াঁও তাঁর শরীরে বাসা বাধেঁ বিভিন্ন রোগ। তাঁর কিডনি-লিভারে সমস্যা হয়েছিল,
এদিকে হার্নিয়া অপারেশন হওয়ারও কথা ছিল। কিন্তু হার্নিয়া অপারেশনের আগেই কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়ে, মৃত্যুবরণ করেন এই গুণী অভিনেত্রী ।