ভারতের কিংবদন্তী সংগীতশিল্পী বাপ্পি লাহিড়ী ৬৯ বছর বয়সে মারা গেছেন। মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
অনেকেই মনে করতেন বাপ্পি লাহিড়ী মানেই হয়তো শুধু ডিস্কো কিং আর ঝলমলে গয়না। কিন্তু তার এই জীবন রঙিন হওয়ার পেছনেও রয়েছে সংগ্রামের গল্প।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়িতে ১৯৫২ সালে বাঙালি পরিবারে জন্ম নেন বাপ্পি লাহিড়ী। তার পারিবারিক নাম অলোকেশ লাহিড়ী, ডাক নাম বাপি। তার গানের হাতেখড়ি হয়েছিল পরিবার থেকেই। তার বাবা অপরেশ লাহিড়ী আর মা বাঁশুড়ি লাহিড়ী দুজনেই বাংলা সঙ্গীত জগতে ছিলেন পরিচিত নাম।
বাপ্পি লাহিড়ী মাত্র ১১ বছর বয়সে প্রথম গানের সুর দিয়েছিলেন। বাংলা সিনেমা ‘দাদু’তে ১৯৭২ সালে সুর দেন তিনি। কিন্তু মন টেকেনি কলকাতায়। বাপ্পি লাহিড়ীর ইচ্ছে ছিল প্রতিষ্ঠিত হওয়া, চোখে ছিল সোনালি স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন নিয়ে মাত্র ১৯ বছর বয়সে পাড়ি জমান মুম্বাইয়ে। ছেলের কারণে, তার বাবা-মাও মুম্বাইয়ে চলে যান।
বাপ্পিকে মুম্বইয়ে প্রথম কাজের সুযোগ করে দিয়েছিলেন এক বাঙালি। তিনি পরিচালক শমু মুখোপাধ্যায়। ১৯৭৩ সালে তার নির্মিত ‘নানহা শিকারী’ সিনেমায় প্রথম গান রচনা করেন বাপ্পি।
১৯৭৪ সালের দিকে রাহুল দেব বর্মণ বেশ ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। তার শিডিউল পাওয়াই কষ্টকর প্রযোজকদের কাছে। প্রযোজক হুসেনের সিনেমা মদহোসে গানের সুর দিলেন আর ডি বর্মণ। কিন্তু ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক করার সময় ছিল না তার। এই কাজের অফার যায় বাপ্পি লাহিড়ীর কাছে।
বাপ্পি রাজি থাকলেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় তার বাবা অপরেশ লাহিড়ী। প্রযোজক তাহির হুসেনকে তিনি বলেন, আর ডি বর্মনের সুর দেওয়া সিনেমার ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক তার ছেলে করতে পারেন তবে এক শর্ত রয়েছে, আর ডি’ র কাছ থেকে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট নিয়ে আসতে হবে।
তার কথা মতোই কাজ হলো। ১৯৭৫ সালে তাহির হুসেনের ‘জখমী’ চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন বাপ্পি। তার হিট হিসেবে এই সিনেমাকেই ধরা যায়। কিশোর কুমারের গলায় ‘জালতা হ্যায় জিয়া মেরে’ অথবা লতার গলায় বাপ্পির সুরে ‘আভি আভি থি দুশমানি’ আজও মানুষের মনে গেথে আছে। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি বাপ্পিকে।
বাপ্পি লাহিড়ীকে ডিস্কো কিং বলা হতো। রোমান্টিক গান থেকে শুরু করে কাওয়ালি, রাগাশ্রয়ী গান সবকিছুই রপ্ত করেছিলেন তিনি। ১৯৮৬ সালে ৩৩ সিনেমায় ১৮০টি গান রেকর্ড করে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নিজের নাম তুলে নিয়েছিলেন বাপ্পি।
ভারতীয় মিউজিক ডিরেক্টরদের মধ্যে একমাত্র বাপ্পি লাহিড়ীই জোনাথন রসের লাইভ পারফরম্যান্সে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন ১৯৮৯ সালে। তার আইকনিক গান ‘জিমি জিমি আজা আজা’ হলিউডের সিনেমা ‘ইউ ডোন্ট মেস উইথ দ্য জোহান’-এ ব্যবহার করা হয়েছিল।
কালো চশমা আর গলায় বেশ কয়েকটি সোনার হার পরে থাকতেন বাপ্পি লাহিড়ী। কেন তার এমন বেশভূষা ছিল সে উত্তর দিয়েছিলেন এই গায়ক-সংগীত পরিচালক নিজেই। তিনি বলেছিলেন, তাকে প্রথম সোনার চেন উপহার দিয়েছিলেন মা, এরপর স্ত্রী তাকে গণেশের লকেট দেওয়া এক চেন উপহার দেন। তিনি মনে করেন, সোনা তার জন্য বেশ লাকি। আর এই কারণেই সোনা পরে থাকার সিদ্ধান্ত ছিল তার।