জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা ও চিত্রপরিচালক হাসমত-এর ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ । তিনি ২০০৪ সালের ১০ নভেম্বর, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। প্রয়াত এই গুণি মানুষটির প্রতি জানাই বিন্ম্র শ্রদ্ধা। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
হাসমত ১৯৩৬ সালে, ঢাকার বংশালে জন্মগ্রহন করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এমএ পাস করেন।
ছোটবেলা থেকে অভিনয়ের প্রতি প্রচন্ড ঝোঁক ছিল তাঁর। একসময় তিনি মঞ্চনাটকের সাথে জড়িত হন। বিভিন্ন নাটকে অভিনয় করেন, তবে তিনি নাটকে কখনই কমেডি চরিত্রে অভিনয় করেন-নি, সিরিয়াস ধরনের চরিত্রেই অভিনয় করেছেন, এমন কি তিনি ভিলেন হিসেবেও অভিনয় করেছেন তখন।
হাসমত-এর চলচ্চিত্রে আগমন হয় সহকারী পরিচালক হিসেবে। ১৯৬০ সালে উদয়ন চৌধুরী পরিচালিত ‘বিষকন্যা’ (মুক্তিপায়নি) ছবির সহকারী পরিচালক হিসেবে, তিনি প্রথম কাজ শুরু করেন, পরবর্তিতে নারায়ণ ঘোষ মিতা’র সাথে কাজ করেন তিনি।
হাসমত অভিনীত প্রথম ছবি, এম এ খলিল পরিচালিত, ১৯৬৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘পুনম কি রাত’। এরপর তিনি আরো যেসব ছবিতে অভিনয় করেছেন তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য- চাওয়া পাওয়া, এতটুকু আশা, ময়না মতি, জোয়ার ভাটা, নীল আকাশের নীচে, যে আগুনে পুড়ি, মলুয়া, দীপ নিভে নাই, বিনিময়, শেষ পরিচয়, মানুষের মন, অবুঝ মন, বলাকা মন, উৎসর্গ, অঙ্গীকার, রংবাজ, অতিথি, অনন্ত প্রেম, মধুমিতা, স্বপ্ন দিয়ে ঘেরা, চোখের জলে, মধুমিলন, হাবা হাসমত, চাবুক, আলোর মিছিল, অবাক পৃথিবী, হাসি কান্না, বধূ মাতা কন্যা, চাবুক, পিঞ্জর, দুইপর্ব, ঢেউয়ের পরে ঢেউ, উপহার, কত যে মিনতি, কাঁচের স্বর্গ, জেহাদ, আলো তুমি আলেয়া, অন্তরালে, আঁধারে আলো, টাকার খেলা, বধূ বিদায়, ভুল যখন ভাঙলো, এখানে আকাশ নীল, হাসি কান্না, নকল মানুষ, আসামী, আসামী হাজির, বারুদ, কথা দিলাম, বাঁধনহারা, নাগরদোলা, ছন্দ হারিয়ে গেল, কুয়াশা, ধন্যিমেয়ে, অপরাধ, সমাধান, সোনা বৌ, বউ হবো, ইত্যাদি।
হাসমত শুধু কৌতুক অভিনেতাই ছিলেন না। তিনি একজন সফল চলচ্চিত্র পরিচালকও ছিলেন। হাসমত পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন ১৯৭৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত, ‘এখানে আকাশ নীল’ ছবিটি পরিচালনার মাধ্যমে। তাঁর পরিচালিত ছবিগুলো হলো- স্বপ্ন দিয়ে ঘেরা, হাসি কান্না, নকল মানুষ, মধুমতি, বিধান, ন্যায় বিচার, ববি, বউ হবো, প্রভৃতি।
ঢাকাই চলচ্চিত্রের অতি পরিচিত মুখ হাসমত। একজন তুখর মেধাবী কৌতুক অভিনেতা, একজন গুণি চলচ্চিত্র নির্মাতা। কৌতুক অভিনেতা হিসেবে ছিলেন সর্বাধিক পরিচিত ও জনপ্রিয়। তিনি তাঁর সহজ-সরল বোকা-সোকা সভাবের অভিনয় দিয়ে সিনেমাদর্শকদের বিনোদিত করেছেন, বিমোহিত করেছেন, দর্শক হৃদয়ে ভালো অভিনেতা হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন। হাসমত ছিলেন চলচ্চিত্রের দর্শকদের জন্য দম ফাটানো হাসির ফোওরা। কৌতুক অভিনেতা হিসেবে ছিলেন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। তাই পরিচালক ও প্রযোজকদের কাছে তাঁর ছিল প্রচণ্ড চাহিদা। সেই সুবাদে অসংখ্য বাণিজ্যসফল ভালো ভালো চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। হয়েছেন বাংলাদেশের সেরা কমেডিয়ানদের অন্যতম একজন ।
হাসির রাজা হাসমত এক সময় এতোটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন যে, তাঁর নামে তাঁকে প্রধান চরিত্র করে, ‘হাবা হাসমত’ নামে একটি ছবিও হয়েছিল। সোহরাব আহমেদ পরিচালিত সেই ছবিতে, হাসমত নায়িকা কবিতার বিপরীতে নায়ক হিসেবে অভিনয় করেছেন। সেই থেকে হাসমত-এর নাম কিংবদন্তী হয়ে যায়- ‘হাবা হাসমত’ নামে।
কিংবদন্তীতুল্য কৌতুক অভিনেতা হাসমত তাঁর চলচ্চিত্র কর্মের মাধ্যমে, চিরঅম্লান হয়ে থাকবেন আমাদের মাঝে।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন