জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী, সংগীত পরিচালক, গীতিকার এবং সুরকার মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী’র ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ৪ নভেম্বর, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। প্রয়াত এই গুণি কন্ঠশিল্পীর স্মৃতির প্রতি জানাই বিন্ম্র শ্রদ্ধা। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দের ২ ফেব্রুয়ারি, নেত্রকোনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকে সংগীতের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠা মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, সংগীতে দীক্ষা গ্রহণ করেন- বিপিন দাস, সমর দাস, আবদুল আহাদ, কাদের জামেরী প্রমুখ সংগীত ব্যক্তিত্বের কাছ থেকে ।
১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে, ঢাকা রেডিওতে প্রথম গান গাইতে শুরু করেন মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী। পরবর্তিতে চলচ্চিত্রে আসেন নেপথ্য কন্ঠশিল্পী হিসেবে।
১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিপ্রাপ্ত, মসউদ চৌধুরী পরিচালিত ‘প্রীত না জানে রীত’ চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম কন্ঠ দেন। আরো যেসব ছবিতে তিনি গান গেয়েছেন তাঁরমধ্যে উল্লেখযোগ্য- আগুন নিয়ে খেলা, অভিশাপ, চোরাবালি, নীল আকাশের নীচে, আগুন নিয়ে খেলা, সংসার, সাইফুলমূলক বদিউজ্জামাল, সুয়োরাণী দুয়োরাণী, মানুষের মন, বিনিময়, দীপ নিভে নাই, ক খ গ ঘ ঙ, জলছবি, বাবলু, অনেক দিন আগে, সমাধী, রংবাজ, অতিথি, কি যে করি, প্রতিশোধ, সমাধান, মন যারে চায়, সুখে থাকো প্রভৃতি।
মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, সুর ও সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন- যোগাযোগ ও গোপাল ভাঁড় ছবি দুটির।
তিনি ২০০টিরও বেশী চলচ্চিত্রে গান গেয়েছেন। চলচ্চিত্র-বেতার-টেলিভিনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে তাঁর গাওয়া গানের সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন হাজার। বাংলা গানের পাশাপাশি তিনি উর্দু গানও গেয়েছেন।
মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকীর গাওয়া যেসব গান আজও কালের স্বাক্ষী হয়ে আছে, সেসব জনপ্রিয় গানসমূহের মধ্যে- ওই দূর দূর দুরান্তে, দিন দিনান্তে…, আমি এক দুরন্ত যাযাবর, দিন নেই রাত নেই, বসে থাকি গাড়িতেই…, হৈ হৈ রঙিলা রঙিলা রে…, শোনো গো রুপসী ললনা, আমাকে যখন তখন চোখ রাঙানো চলবে না.., হেসে খেলে জীবনটা যদি চলে যায়…, কালো রূপ কত অপরূপ আমি দেখেছি নয়ন মেলে…, আহা রাজপুত্তর চায় মামলেট…, এই শহরে আমি যে এক নতুন ফেরিওয়ালা…, চানাচুর এনেছি বড় মজাদার চানাচুর গরম…, বুটপালিশ জুতাপালিশ…, জানতাম যদি শুভঙ্করের ফাঁকি, আমার ঘরে পড়ত না ভাই শূন্য…, একটি ছোট্ট আশা একটি ছোট্ট বাসা…, আমি কত দিন কত রাত ভেবেছি…, আমি তিসমার খাঁন, এই জান কোরবান, হেই সুন্দরী…, আজকে আমার মনের ময়ূর পাখা মেলেছে…, তোমাকে মানায় ভালো যখন তুমি লজ্জারাঙা আবীর মেখে সাজো…, বাঁশি বাজে ঐ দূরে চেনা কি অচেনা সুরে…, অন্যতম।
ব্যক্তিজীবনে মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী
১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে, কন্ঠশিল্পী সুরাইয়া সিদ্দিকীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের তিন কন্যা সন্তান রয়েছে। তাঁরা হলেন- এ্যানি সিদ্দিকী, রিনি সিদ্দিকী ও গিনি সিদ্দিকী। তিনজনই বেতার-টিভির এনলিস্টেড কন্ঠশিল্পী।
চটুল গান সিনেমার এক প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ। আর এই চটুল গানকে যিনি তাঁর কন্ঠমাধুর্যে শিল্পের মর্যাদায় নিয়ে গেয়েছেন, তিনি হলেন কিংবদন্তী কন্ঠশিল্পী মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী। শুধু চটুল গানের ফ্রেমে বন্দি থাকেননি তিনি, তাঁর বৈচিত্র্যময় কন্ঠ দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছেন সব ধরনের গানেই। আর সেই জন্যই কণ্ঠশিল্পী হিসেবে পেয়েছিলেন দারুণ দর্শকপ্রিয়তা।
এই প্রতিভাবান গায়কের গাওয়া গানগুলোর অধিকাংশই, সময়ের সেরা গান হিসেবে এখনও স্বীকৃত। মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকীর কন্ঠের অনেক ভুবনবিখ্যাত আধুনিক বাংলা গান আছে, যা আজও অনেকের হৃদয়ে দোলা দিয়ে যায়। তাঁর অপূর্ব গায়কীতে অনেক সিনেমার গানও ইতিহাসের অংশ হয়ে আছে আজও।
আমাদের দেশের সঙ্গীতভুবনের বিস্ময়কর প্রতিভা মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী ছিলেন, বহুল জনপ্রিয় একজন কন্ঠশিল্পী। অনুসন্ধিৎসু সংগীতপিপাসুদের মনে চিরভাস্বর হয়ে থাকবেন, এই চিরআধুনিক কন্ঠশিল্পী। আর যুগ-যুগান্তরব্যাপী রইবে তাঁর শ্রুতিমধুর গানের আবেদন।
(তথ্যসূত্র ও ছবি- ইন্টারনেট থেকে নেয়া)
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন