এ কে আজাদ: আনিস। অভিনেতা। একজন জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা। যিনি বাংলাদেশের সিনেমাপর্দা হাসির বন্যায় ভাসিয়েছেন বহুবছর। আমাদের চলচ্চিত্রের আনন্দময় মানুষ, জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা আনিস-এর পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০১৯ সালের ২৮ এপ্রিল, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। প্রয়াত এই গুণী অভিনয়শিল্পীর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।
অভিনেতা আনিস (আনিসুর রহমান) ১৯৪০ সালে, জলপাইগুড়িতে, জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক বাড়ি, ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার দক্ষিণ বল্লভপুর গ্রামে। তাঁর বাবা মরহুম আমিনুর রহমান চা বাগানের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
১৯৫৭ সালের দিকে ঢাকার চিত্রজগতে আসেন আনিস, তাঁর বড় ভাই লুৎফর রহমান (এফডিসিতে কুশলী ও প্রশাসনিক কর্মী)-এর মাধ্যমে। প্রথম দিকে সহকারী চিত্রসম্পাদক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ঢাকার চলচ্চিত্রের বিখ্যাত দুই ভাই এহতেশাম ও মুস্তাফিজের ‘লিও দোসানী ফিল্মস’-এর বেশীরভাগ কাজ করতেন তিনি।
১৯৬০ সালে, উদয়ন চৌধুরীর পরিচালিনায় ‘বিষকন্যা’ (মুক্তি পায়নি) চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন আনিস। তাঁর অভিনীত প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র জিল্লুর রহিম পরিচালিত ‘এইতো জীবন’ মুক্তিপায় ১৯৬৪ সালে।
আনিস অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রসমূহ- পয়সে, মালা, জরিনা সুন্দরী, রাজা সন্যাসী, সাইফুল মুলক বদিউজ্জামাল, মধুমালা, ডাকবাবু, অবাঞ্ছিত, শহীদ তিতুমীর, রূপকুমারী, আবার বনবাসে রূপবান, সাত ভাই চম্পা, রাখাল বন্ধু, বাল্যবন্ধু, বাবলু, পদ্মা নদীর মাঝি, রং বদলায়, সাধারণ মেয়ে, টাকা আনা পাই, নাগিনীর প্রেম, মানুষের মন, অধিকার, সেতু, সানাই, চলো ঘর বাঁধি, চাঁদ সুরুজ, ভানুমতি, সূর্য ওঠার আগে, জংলী মেয়ে, আলো ছায়া, দর্পচূর্ণ, অনেক দিন আগে, অন্তরালে, টাকার খেলা, বন্দিনী, অনেক প্রেম অনেক জ্বালা, দুস্ত দুশমন, আসামী, আনাড়ি, তাল বেতাল, মতিমহল, অনুরাগ, একই অঙ্গে এত রূপ, বাদশা, বিচার, দয়াল মুর্শিদ, বধূ মাতা কন্যা, অশ্রু দিয়ে লেখা, অংগার, শাপমুক্তি, ঘর সংসার, অভিমান, মামা ভাগ্নে, কাজল রেখা, ষড়যন্ত্র, লড়াই, নাগকন্যা, নুপুর, চম্পাকলি, মহারাজা, বিস্ফোরন, প্রতিহিংসা, দিদার, নয়নের আলো, মহান, বীক্রম, উজান ভাটি, বিজলী, তালাক, বারুদ, লাল কাজল, পুরস্কার, এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী, নবাবজাী, নির্দোষ, সন্ধি, পরিণীতা, কাজল লতা, গুনাই বিবি, আয়না বিবির পালা, চোরের বউ,যেমন জামাই তেমন বউ, রাজা সূর্য খাঁ, ইত্যাদি।
চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি আনিস, বেতার-মঞ্চ ও টেলিভিশনেও সমানতালে অভিনয় করেছেন। কৌতুক অভিনেতা হিসেবে টিভি নাটকেও জনপ্রিয় ছিলেন তিনি।
অভিনেতা আনিস ১৯৬৫ সালে, তাঁর খালাতো বোন কুলসুম আরা বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর স্ত্রী কুলসুম আরা বেগম ২০১৩ সালে, মৃত্যুবরণ করেন। তাদের দু’জন কন্যাসন্তান আছে।
বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় ও সফল কৌতুক অভিনেতাদের মধ্যে অন্যতম একজন অভিনেতা আনিস ।
চলচ্চিত্রের পর্দায় তাঁর উপস্থিতি-অভিনয়শৈলী দর্শকদের বিনোদিত করতো। বিশেষ করে নোয়াখালী জেলার ‘আঞ্চলিক ভাষায়’ তাঁর সংলাপ বলা ছিল অসাধরণ।
জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা হিসেবে দর্শকমনে জায়গা করে নেয়া এই গুণি অভিনেতা, সারাটি জীবন চলচ্চিত্র শিল্পের সুখে দুখে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছিলেন।
বাংলা চলচ্চিত্রে একজন জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন- আনিস।