এ কে আজাদ: খালিদ মাহমুদ মিঠু। চিত্রশিল্পী, চিত্রগ্রাহক, নাটক-তথ্যচিত্র নির্মাতা ও চলচ্চিত্র পরিচালক। আমাদের শিল্প-সংস্কৃতির জগতে ‘জোনাকির আলো’ ছঁড়িয়ে দেয়া এক সাংস্কৃতিবান্ধব মানুষ।
বড়ো অসময়ে চলে যাওয়া, চিত্রশিল্পী ও চলচ্চিত্র নির্মাতা খালিদ মাহমুদ মিঠু’র সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০১৬ সালের ৭ মার্চ, ঢাকায় (ধানমণ্ডির ৪ নম্বর রোডে, PBI ‘পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন’ অফিসের উল্টো দিকে রিকশায় করে যাওয়ার সময় রাস্তার পাশের একটি কৃষ্ণচূড়া গাছ তাঁর উপর ভেঙে পড়ে) এক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর। প্রয়াত খালিদ মাহমুদ মিঠু’র স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
খালিদ মাহমুদ মিঠু ১৯৬০ সালের ১ জানুয়ারি, ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮৬-তে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট ( যা বর্তমানে চারুকলা অনুষদ ) থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। তাঁর মা, বেগম মমতাজ হোসেন একজন শিক্ষাবিদ, লেখক এবং নাট্যকার। বাংলাদেশ টেলিভিশনের জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘সকাল সন্ধ্যা’ ও ‘শুকতারা’র নাট্যকার ছিলেন।
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার আলমগীর কবির ছিলেন খালিদ মাহমুদ মিঠু’র মামা। তাঁর স্ত্রী খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী কনকচাঁপা চাকমা। তাদের দুই সন্তান, শিরোপা পূর্ণা ও আর্য শ্রেষ্ঠ, তারাও চিত্রনির্মাণের সাথে জড়িত ।
চারুকলায় ডিগ্রি নেয়ার পর খালিদ মাহমুদ মিঠু, চিত্রগ্রাহক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন বিটিভিতে। বিটিভিতে বেশিদিন তাঁর কাজ করা হয়নি। বিটিভি ছেড়ে তিনি মিউজিক ভিডিও, নাটক ও তথ্যচিত্র নির্মাতা হিসেবে আবির্ভুত হন।
২০১০ সালে ‘গহীনে শব্দ’ ছবিটি নির্মাণের মাধ্যমে খালিদ মাহমুদ মিঠুর চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেব অভিষেক ঘটে। তিনি নিজেই ছিলেন এই ছবি’র কাহিনী, চিত্রনাট্য ও সংলাপ রচয়িতা। প্রথম ছবিতেই তিনি, শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।
২০১৪ সালে তিনি নির্মাণ করেন ‘জোনাকির আলো’ নামে আরেকটি চলচ্চিত্র । তাঁর এই ছবিটি দিল্লি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (২০১৪)-এ সেরা ছবির পুরস্কার ‘অ্যাক্রস দ্য বর্ডার’ অর্জন করে। এছাড়াও মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ এশিয়ান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘অডিয়েন্স চয়েস অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করে। ২০১৪ সালে, সেরা বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র হিসেবে একাডেমি পুরস্কারের জন্য ‘জোনাকির আলো’ চলচ্চিত্রটি মনোনীত হয়।
খালিদ মাহমুদ মিঠু বহু তথ্যচিত্র, মিউজিক ভিডিও, নাটক ও টেলিফিল্ম নির্মাণ করেছেন। মেধাবী চিত্রাগ্রাহক হিসেবেও তিনি ছিলেন বেশ খ্যাতিমান।
ভারতের নয়দার ‘মারওয়া ফিল্ম স্টুডিও’ আজীবন সদস্যপদ সম্মাননা পান খালিদ মাহমুদ মিঠু।
২০০৭ সালে, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত ১৬তম জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে ‘আরব বাংলাদেশ ব্যাংক পুরস্কার’ লাভ করেন তিনি ।
চিত্রগ্রাহক, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও চিত্রশিল্পী হিসেবে যথেষ্ট মেধাবী ছিলেন খালিদ মাহমুদ মিঠু। খ্যাতি অর্জনের ধাপে এগিয়ে গিয়েছিলেন মাত্র। শিল্পমগ্ন এই মানুষটির অনেক কিছু দেয়ার ছিল বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পকে।
তাঁর মেধা ও প্রতিভার পূূর্ণ প্রকাশের আগেই, অকালে-অসময়ে হারিয়ে গেলেন আমাদের মাঝ থেকে।