আজাদ আবুল কাশেম: চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক ও প্রদর্শক কে.এম.আর মঞ্জুর এর ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০১৬ সালের ২৪ জানুয়ারি, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬০ বছর। প্রয়াত চলচ্চিত্র প্রযোজক কে.এম.আর মঞ্জুর এর স্মৃতির প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
কে.এম.আর মঞ্জুর ১৯৫৬ সালের ৩০ মে, ঢাকার ডেমরার আমুলিয়া গ্রামে খান বাড়ীতে, জন্মগ্রহন করেন। তাঁর বাবা মোখলেসুর রহমান খান বাদশা মিয়া, ছিলেন আওয়ামীলীগ নেতা ও ঔষধ ব্যবসায়ী । কে.এম.আর মঞ্জুর আরমানিটোলা স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন এবং কবি নজরুল কলেজ থেকে বি.কম পাস করেছিলেন ।
চলচ্চিত্রে আসার আগে অন্যান্য ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন কে.এম.আর মঞ্জুর। চলচ্চিত্র প্রযোজক-প্রদর্শক সফর আলী ভূঁইয়ার সাথে পরিচয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আসেন তিনি। প্রথমে সফর আলী ভূঁইয়া ও কে.এম.আর মঞ্জুর ‘জোনাকি’ সিনেমা হল লিজ নেন। পরবর্তিতে দু’জনে মিলে চলচ্চিত্র প্রযোজনা শুরু করেন।
তাঁর আংশীক/একক প্রযোজিত চলচ্চিত্রগুলো হলো- অ্যাকডিসেন্ট, ননদ ভাবী, কুসুম কলি, উত্তর ফাল্গুনী, আবদার, সিপাহী, লাভ লেটার, আমার প্রেম আমার অহংকার, দাংগা, আবার বনবাসে বেদের মেয়ে জোসনা, কুখ্যাত নূরু, প্রভৃতি।
চলচ্চিত্র প্রদর্শক হিসেবেও সুনাম ছিল তাঁর। ঢাকার বেশ কয়েকটি প্রেক্ষাগৃহের স্বত্বাধিকারী ছিলেন কে.এম.আর মঞ্জুর। ‘অভিসার’, ‘নেপচুন’, ‘আগমন’ ও ‘অতিথি’ এই সিনেমা হলগুলো ছিল তাঁর।
একজন সফল চলচ্চিত্র ব্যবসায়ী ছিলেন কে.এম.আর মঞ্জুর। চলচ্চিত্রের প্রাণ-সংগঠন, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির একাধিকবার মহাসচিব ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি।বাংলাদেশ ফিল্ম ক্লাবের তিনবারের সফল সভাপতি ছিলেন । উত্তরা ক্লাবের সভাপতি হিসেবেও নির্বাচিত হয়েছেন।
তিনি ক্যাপিটাল ক্লাব, ঢাকা ক্লাব, বারিধারা ক্লাব, অল কমিউনিটি ক্লাব, ধানমন্ডি ক্লাব, এশিয়া ক্লাব, খুলশী ক্লাব, ঘলফ ক্লাব, বগুড়া গলফ ক্লাব, এফবিসিসিআই, হকি ফেডারেশনসহ অসংখ্য সংগঠনের সকর্মকতা ও সক্রিয় সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ।
এছাড়াও অন্যান্য সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথেও জড়িত ছিলেন কে.এম.আর মঞ্জুর। সামাজিক সংগঠন ‘নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)’র উপদেষ্টা কমিটির সম্মানিত সদস্য ছিলেন তিনি।
ব্যাক্তিজীবনে কে.এম.আর মঞ্জুর দুইবার বিয়ে করেন। তাঁর প্রথম স্ত্রী’র নাম পারুল। এ ঘরে তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে। তাঁরা অস্ট্রেলিয়াতে থাকেন।
কে.এম.আর মঞ্জুর দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন, চিত্রনায়িকা সুচরিতা’কে। এই ঘরে দুই মেয়ে ও এক ছেলে। তাঁরা মালয়েশিয়াতে আছেন।
চলচ্চিত্রের ক্রান্তিলগ্নে বিনিয়োগসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন কে.এম.আর মঞ্জুর। বাংলা চলচ্চিত্রের ও চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টদের অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন শেষদিন পর্যন্ত।
একজন চলচ্চিত্রবান্ধব মানুষ হিসেবে, চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টদের কাছে প্রিয় ব্যক্তি ছিলেন তিনি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।
একজন ভালো মানুষ হিসেবে সবার কাছে সুপরিচিত ছিলেন কে.এম.আর মঞ্জুর। অনন্তলোকে তিনি ভালো থাকুন, এই দোয়া করি।