আজাদ আবুল কাশেম: বীর মুক্তিযোদ্ধা, চলচ্চিত্র প্রযোজক- পরিচালক-প্রদর্শক-পরিবেশক ও অভিনেতা সিদ্দিক জামাল নান্টু’র ১৪ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০০৮ সালের ১ মার্চ, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর। প্রয়াত সিদ্দিক জামাল নান্টু’র স্মৃতির প্রতি বিন্ম্র শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
সিদ্দিক জামাল নান্টু (অভিনেতা হিসেবে তাঁর নাম- নান্টু রাজ) ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি, সরিষাবাড়িতে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পৈতৃক বাড়ি চুয়াডাঙ্গায়। বাবা বাহাদুর আলী সরকার ছিলেন স্কুল শিক্ষক, আর মা শাহিদা খাতুন। ১৩ ভাই-বোন এর মধ্যে নান্টু ছিলেন ষষ্ঠ। চুয়াডাঙ্গার মেহেরপুর কলেজ থেকে তিনি বি.এ পাস করেন।
তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করেছেন।
বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘ওরা ১১ জন’-এ অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি চলচ্চিত্র জগতে আসেন। চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘ওরা ১১ জন’ ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৭২ সালে। এরপরে তিনি অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করেছেন। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি হয়েছেন, চলচ্চিত্র প্রযোজক-প্রদর্শক ও পরিচালক।
চুয়াডাঙ্গা শহরে তাঁর “নান্টুরাজ” নামে সিনেমা হল ছিল।
সিদ্দিক জামাল নান্টু অভিনীত ছবিসমূহের মধ্যে রয়েছে- ওরা ১১ জন, সংগ্রাম, কুয়াশা, সারেন্ডার, বিক্ষোভ, বিদায়, উত্তরের খেপ, আম্মাজান, জিদ্দী, রংবাজ বাদশা, ছোট বোন, গোলাগুলি, ভাংচুর, চিটার নাম্বার ওয়ান, রাজার ভাই বাদশা, ভালবাসার ঘর, ইজ্জতের লড়াই, রক্ত নিশান, ভালবাসার যুদ্ধ, গোলামী, নীল সাগরের তীরে, প্রভৃতি।
তাঁর প্রযোজিত ও পরিচালিত ছবিসমূহের মধ্যে- সারেন্ডার, বিদায়, গোলাগুলি, ভাংচুর, চিটার নাম্বার ওয়ান, রাজার ভাই বাদশা, ইজ্জতের লড়াই, রক্ত নিশান, ভালবাসার যুদ্ধ, অন্যতম।
ব্যক্তিজীবনে সিদ্দিক জামাল নান্টু ১৯৭৭ সালে, মাহমুদা হক নান্নির সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের তিন ছেলে-মেয়ে রয়েছে । বড় মেয়ে ডাঃ রেজওয়ানা সিদ্দিক, মেজ ছেলে তানভীর সিদ্দিক নিউইয়র্ক-এ একটি ব্যাংকে চাকুরী করেন, আর ছোট ছেলে সিফাত সানভী সিদ্দিক, রবি টেলিকম-এ চাকুরীরত আছেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা-অভিনেতা-চলচ্চিত্র পরিচালক সিদ্দিক জামাল নান্টু ছিলেন, সদালাপি হাসি-খুশি, খোশ-গল্প ও আড্ডাপ্রিয় একজন ভালো মনের মানুষ। যে কোন রসাত্বক সব গল্প বলায় তিনি ছিলেন পটু। আড্ডার সব বিষয়ের হাজারো গল্প তাঁর ঝুড়িতে সবসময় মজুত থাকত এবং এসব গল্প বলে সবাইকে মাতিয়ে রাখতেন। চলচ্চিত্রের আড্ডাপ্রিয় মানুষেরা তাঁর সাথে আড্ডা জমাতে খুবই ভালোবাসতেন। ভালোবাসতেন সিদ্দিক জামাল নান্টুকে। চলচ্চিত্রের এই প্রানবন্ত মানুষটির প্রতি ভালোবাসা থাকবে চিরদিন- অমলিন।