আজাদ আবুল কাশেম: চলচ্চিত্র সাংবাদি, গবেষক, লেখক, শিক্ষক অনুপম হায়াৎ ‘শিল্পকলা পদক-২০১৯’ এ ভূষিত হয়েছেন। চলচ্চিত্র গবেষণায় বিশেষ অবদানের জন্য তিনি এই পদক পান।
গত বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টম্বর ২০২২) বিকেল সাড়ে ৪টায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে (একসঙ্গে ‘শিল্পকলা পদক-২০১৯ ও ২০২০’) এ পদক প্রদান করা হয়। দেশের শিল্প সংস্কৃতিতে অবদান রাখা গুণীজনদের অবদানকে সম্মান ও স্বীকৃতি জানাতে ‘শিল্পকলা পদক’ এর প্রবর্তন করা হয়েছে ২০১৩ সাল থেকে।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ।
অনুপম হায়াৎ (মতিউর রহমান ভূঁইয়া) ১৯৫০ সালের ১ জুন, নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াই হাজার উপজেলার উজান গুপিন্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ (সাংবাদিকতা ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান) পাস করেন । কবিতা ও গল্প লেখালেখির মাধ্যমে তাঁর লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ।
১৯৭২ সালে সাপ্তাহিক ‘দেশ বাংলা’ পত্রিকার মাধ্যমে প্রথম সাংবাদিকতার সাথে জড়িত হন তিনি। এরপর প্রদায়ক সাংবাদিক হিসেবে জড়িত হন সাপ্তাহিক ‘মুক্তিবাণী’, ‘চাবুক’, ‘চিত্রালী’, ‘বিচিত্রা’, পাক্ষিক ‘সচিত্র বাংলাদেশ’ ও ‘তারকালোক’ এর সাথে।
অনুপম হায়াৎ রচিত গ্রন্থসমূহ- ‘সপুংসক অহংকার’, ‘চলচ্চিত্রের খোলা জানালা’, ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাস’, ‘তিনটি বিদেশী চিত্রনাট্য’, ‘জহির রায়হানের চলচ্চিত্র: পটভূমি, বিষয় ও বৈশিষ্ট্য’, ‘রবীন্দ্রনাথ ও চলচ্চিত্র’, ‘চলচ্চিত্র জগতে নজরুল’, ‘মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র’, আলমগীর কবিরের চলচ্চিত্র’, ‘চলচ্চিত্র বিচিত্রা: মননে মন্তাজ’, ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের চলচ্চিত্র’, ইত্যাদি।
এছাড়াও বঙ্গবন্ধু, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম এর উপর তাঁর গবেষণাধর্মী গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।
অনুপম হায়াৎ টিসিবি জনসংযোগ বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। টিসিবি জনসংযোগ বিভাগের ত্রৈমাসিক ‘সম্ভার’ (বাংলা), ও ‘স্ট্রেট ট্রেডে’ (ইংরাজি) এর সম্পাদক ছিলেন তিনি।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের একজন একনিষ্ঠ কর্মী এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির সিনিয়র সদস্য । তিনি ‘চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডে’র সদস্য এবং জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদানের জন্য গঠিত ‘জুরিবোর্ডে’র সম্মানিত সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন । বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের জার্নাল সম্পাদনা কমিটিরও একজন সদস্য তিনি।
অনুপম হায়াৎ ১৯৭৩ সালেই সাপ্তাহিক ‘সিনেমা’র মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলচ্চিত্রবিষয়ক বিভাগ খোলার দাবি জানিয়ে ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের প্রথম পাঠ্যপুস্তকের লেখক। তাঁর লেখা ‘চলচ্চিত্র বিদ্যা’ বইটি বাংলাদেশ ফিল্ম স্টাডি সেন্টার ২০০৪ সালে প্রকাশ করে। চলচ্চিত্র শিল্পের উপর তাঁর আরেকটি পাঠ্যপুস্তক ‘চলচ্চিত্র কলা’ ২০০৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন প্রকাশ করে।
ব্যক্তিজীবনে অনুপম হায়াৎ ১৯৭ সালে, মনোয়ারা বেগমের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের চার ছেলে-মেয়ে। ছেলে ইশতিয়াকুর রহমান অব্যয় (পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ে কর্মরত এবং তিনি একজন লেখক-গবেষকও)। মেয়ে সম্পা ইয়াসমিন ( এসপি, সিলেট অঞ্চল, নৌ পুলিশ), তারানা ইয়াসমিন ( অফিসার, আইডিএলসি) আরেক মেয়ে ডাঃ লায়লা ইয়াসমিন।
আমাদের দেশের একজন প্রথিতযশা চলচ্চিত্র সাংবাদিক, গবেষক এবং লেখক অনুপম হায়াৎ।
বাংলাদেশের মানুষের কাছে একজন প্রসিদ্ধ চলচ্চিত্র গবেষক, শিক্ষক, বিশ্লেষক ও লেখক হিসেবে সুপরিচিত । চলচ্চিত্র অন্তঃপ্রাণ এক ঋদ্ধ মানুষ তিনি। চলচ্চিত্র গবেষনায় সদা নিবেদিত এই মানুষটির রচিত ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাস’ গ্রন্থটি, আমাদের দেশের চলচ্চিত্র তথা শিল্প-সংস্কৃতির একটি অতি মূল্যবান দলিল হিসেবে সংরক্ষিত হয়ে আছে।