এ কে আজাদ: মাসুম বাবুল। অভিনেতা-নৃত্যপরিচালক ও চিত্রপরিচালক। শিশুশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রে আসা মাসুম বাবুল পরবর্তিতে সহনায়ক হিসেবে অভিনয় করেন। একসময় সহকারী পরিচালক হিসেবেও কাজ করেছেন বেশকটি চলচ্চিত্রে। সে সময় থেকেই নাচের ফ্রেমিং, কম্পোজিশন বিষয়ে প্রচন্ড আগ্রহী হয়ে ওঠেন। অভিনয় ছেড়ে তিনি নৃত্যপরিচালক হিসেবেই নিজের কেরিয়ার গড়ে তোলেন এবং খ্যাতি অর্জন করেন। একসময় বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের তিনি হয়ে উঠেছিলেন অপরিহার্য ‘কোরিয়োগ্রাফার’। নৃত্যপরিচালক হিসেবে তিনবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
মাসুম বাবুল একটি চলচ্চিত্র পরিচালনাও করেছেন। খ্যাতিমান নৃত্যপরিচালক মাসুম বাবুল-এর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০২৩ সালের ৬ মার্চ, দেড় বছর ক্যানসারে ভুগে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬২ বছর। মাসুম বাবুল-এর স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
মাসুম বাবুল ১৯৬২ সালের ৩১ ডিসেম্বর, ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন । শিশুশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রের আঙ্গিনায় পা রেখেছিলেন তিনি। এরপর তাঁর আবির্ভাব হয় সহনায়ক হিসেবে। একসময় হয়ে যান চলচ্চিত্রের নৃত্যপরিচালক।
মাসুম বাবুল শিশুশিল্পী হিসেবে প্রথম অভিনয় করেন এম এ কাশেম পরিচালিত ‘বাহরাম বাদশা’ চলচ্চিত্রে, যেটি মুক্তিপায় ১৯৭২ সালে। শিশুশিল্পী হিসেবে ‘দেবর’ ছবিতেও অভিনয় করেছেন। সহনায়ক হয়ে আসেন ‘নাগরাণী’ ছবিতে, দেলোয়ার জাহান ঝন্টু পরিচালিত এই ছবিটি মুক্তিপায় ১৯৮৩ সালে। এরপর তিনি অভিনয় করেন- মহল, অমর, তিনটেক্কা, গ্রেফতার’সহ কয়েকটি চলচ্চিত্রে। ড্যান্সার হিসেবেও কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেন।
নৃত্যপরিচালক হিসেবে তাঁর প্রথম ছবি- মালেক আফসারী পরিচালিত ‘গীত’, মুক্তিপায় ১৯৮৫ সালে।
মাসুম বাবুল যেসব চলচ্চিত্রে নৃত্যপরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য- গোলমাল, সততা, মাটির কোলে, দায়ী কে?, নির্যাতন, বেদের মেয়ে জোসনা, অকৃতজ্ঞ, কাশেম মালার প্রেম, মায়ের দোয়া, দাঙ্গা ফ্যাসাদ, রাজার মেয়ে বেদেনী, দাঙ্গা, বন্ধু আমার, চাকর, কেয়ামত থেকে কেয়ামত, ভয়ঙ্কর সাত দিন, দোলা, প্রেম দিওয়ানা, অন্ধ প্রেম, অবুঝ সন্তান, ত্যাগ, তুমি আমার, সৎমানুষ, অন্তরে অন্তরে, বিক্ষোভ, প্রেম যুদ্ধ, দেন মোহর, ডন, অধিকার, বাবার আদেশ, আঞ্জুমান, স্বপ্নের ঠিকানা, মায়ের অধিকার, বশিরা, হৃদয়ের কথা, পিতার আসন, বকুল ফুলের মালা, কোটি টাকার কাবিন, বিন্দুর ছেলে, দাপট, কপাল, ডাক্তার বাড়ী, শত্রু শত্রু খেলা, আমার প্রানের স্বামী, মা আমার স্বর্গ, উল্টা পাল্টা, মনে প্রানে আছ তুমি, আমাদের ছোট সাহেব, বধুবরণ, মায়ের স্বপ্ন, আকাশ ছোঁয়া ভালবাসা, তুমি আমার প্রেম, বড় ভাই জিন্দাবাদ, বাবা আমার বাবা, সন্তান আমার অহংকার, তুমি স্বপ্ন তুমি সাধনা, আমার জান আমার প্রাণ, ভালবাসার দুশমন, সমাধী, জমিদার বাড়ীর মেয়ে, বলো না তুমি আমার, শুটার, ডনগিরি ইত্যাদি।
২০০৬ সালে ‘ওরে সাম্পানওয়ালা’ নামে একটি চলচ্চিত্র পরিচালনাও করেন তিনি।
মাসুম বাবুল তাঁর কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ১৯৯৩ সালে শ্রেষ্ঠ নৃত্যপরিচালক চলচ্চিত্র ‘দোলা’, ২০০৮ সালে শ্রেষ্ঠ নৃত্যপরিচালক চলচ্চিত্র ‘কি যাদু করিলা’ ও ২০১৮ সালে শ্রেষ্ঠ নৃত্যপরিচালক ‘একটি সিনেমার গল্প’ চলচ্চিত্রের জন্য।
ব্যক্তিগত জীবনে মাসুম বাবুল তাঁর সহশিল্পী চিত্রনায়িকা ফারজানা ববিকে (তিনিও প্রয়াত) বিয়ে করেন। এই দম্পতীর এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
আমাদের চলচ্চিত্রে গুণী নৃত্যপরিচালক মাসুম বাবুল-এর অবদান অনস্বীকার্য।