English

30 C
Dhaka
শুক্রবার, অক্টোবর ১৮, ২০২৪
- Advertisement -

খ্যাতিমান চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব শফি বিক্রমপুরীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

- Advertisements -

এ কে আজাদ: শফি বিক্রমপুরী। চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক-প্রদর্শক ও পরিচালক। অসংখ্য ব্যবসাসফল জনপ্রিয় চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে তাঁর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে। আমাদের চলচ্চিত্রশিল্পের অনেকের সাফল্যের পিছনের কারিগর ছিলেন শফি বিক্রমপুরী। অনেক শিল্পী-কলাকুশলী প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন তাঁর নির্মিত ছবিতে কাজ করে। চলচ্চিত্র প্রযোজনা পরিবেশনার ও প্রদর্শনের পাশাপাশি নিজেও চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন এবং সফলও হয়েছেন।

তার প্রযোজনা সংস্থা ‘যমুনা ফিল্ম কর্পোরেশন লিঃ’ এক সময়ে খ্যাতির শীর্ষে ছিল, তিনি নিজেও ছিলেন স্বনামখ্যাত । খ্যাতিমান চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব শফি বিক্রমপুরীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০২৩ সালের ১৮ অক্টোবর, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। প্রয়াত এই চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বর স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।

শফি বিক্রমপুরী (শফিউর রহমান) ১৯৪৩ সালের ৪ঠা জুলাই, মুন্সীগঞ্জ জেলার, শ্রীনগর থানার, শ্যামসিদ্দি ইউনিয়নের, মত্তগ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতা শেখ মোহাম্মদ আরশেদ আলী, তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময় ভারতের জামশেদপুরে বৃটিশ কোম্পানীতে কর্মরত ছিলেন।

তার মাতার নাম বেগম ফাতেমা খাতুন। শফি বিক্রমপুরী ঢাকার লক্ষীবাজার প্রাইমারি স্কুলে পড়াশুনা করেন। এরপর ঢাকা গভর্মেন্ট মুসলিম হাইস্কুল থেকে মেট্রিক পাশ করেন। পরবর্তীতে কায়েদে আজম (বর্তমানে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী) কলেজ থেকে বি,কম পাশ করেন।

Advertisements

১৯৬৪ সালে হলিউডের বিখ্যাত ইংরেজি ছবি ‘এঞ্জেলিক’ ও ‘ফান্টুমাস’ এর মাধ্যমে তিনি চলচ্চিত্র পরিবেশনার কাজ শুরু করেন। ১৯৬৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সৈয়দ আউয়াল পরিচালিত ‘গুনাইবিবি’ ছবির নির্বাহী প্রযোজক হিসাবে বাংলা চলচ্চিত্রের সাথে সরাসরি জড়িত হন শফি বিক্রমপুরী।

তাঁর প্রযোজিত ও পরিবেশিত চলচ্চিত্রসমূহ- পাতালপুরীর রাজকন্যা, অরুনোদয়ের অগ্নিস্বাক্ষী, জীবন তৃষ্ণা, ডাকু মনসুর, বাহাদুর, মহেশখালীর বাঁকে, বন্দুক, রাজ দুলারী, আলাদিন আলী বাবা সিন্দাবাদ, কলমীলতা, সবুজ সাথী, মহল, সকাল সন্ধ্যা, মাটির কোলে, তুফান মেইল, শশী পুন্ন, লেডিকমান্ডো, শান্তি অশান্তি, লেডি ইন্সপেক্টর, দেনমোহর, অবুঝ মনের ভালবাসা, জজ সাহেব ইত্যাদি।

শফি বিক্রমপুরী পরিচালিত চলচ্চিত্রে মধ্যে- রাজ দুলারী আলাদিন আলী বাবা সিন্দাবাদ, লেডি ইন্সপেক্টর, দেনমোহর, অবুঝ মনের ভালবাসা অন্যতম।

১৯৮৯ সালে, ঢাকার মালিবাগে ‘পদ্মা’ ও ‘সুরমা’ নামে ২টি সিনেমা হল নির্মাণ করে চলচ্চিত্র প্রদর্শন ব্যবসার সাথে জড়িত শফি বিক্রমপুরী। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ সিনেমা হল মালিক সমিতির দীর্ঘদিন সভাপতি ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ ফিল্ম সেন্সর বোর্ডের সদস্য ছিলেন। এ ছাড়া বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের প্রথম আজীবন সদস্য এবং ঐতিহ্যবাহী মুন্সিগঞ্জ জেলা সমিতির সভাপতি ছিলেন ২০০২-২০০৪।

চলচ্চিত্র জগতে তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি ১৯৭৯ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে
(শ্রীনগর লৌহজং আসনে) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচন পরবর্তী সময় তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আহবানে এবং তৎসময় বিএনপির মহাসচিব অধ্যাপক ডাঃ এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সহযোগিতায় বিএনপিতে যোগদান করেন। তাঁকে ১৯৮৪ সালে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসাবে মনোনীত করা হয়।

২০১৪ সালে, তাঁর কাকরাইলের ‘শফি বিক্রমপুরী ভবন’টি সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ এর কাছে বিক্রয় করেন। বর্তমানে এটি জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্য্যালয়।

Advertisements

১৯৫৬ সাল থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত চলচ্চিত্রে প্রথম ২৫ বছরে যে সকল নায়ক নায়িকা শিল্পী ও কলা-কুশলীরা জীবিত আছেন, তাদের নিয়ে তিনি গঠন করেন ‘বাংলাদেশ সিনে স্টার ফোরাম’। শফি বিক্রমপুরীকে সভাপতি ও চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনকে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করে, এই সংগঠেনর আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয়
২০১৭ সালের ২১ এপ্রিল।

ব্যক্তিজীবনে শফি বিক্রমপুরী ১৯৬৯ সালের ১৮ এপ্রিল, নাসিমা সুলতানা (কবি ছড়াকার ও শিশু সাহিত্যিক)’র সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এই দম্পতীর দুই সন্তান রয়েছে, মেয়ে সামিনা সুলতানা যমুনা ও ছেলে মোঃ হাফিজুর রহমান।

২০০০ সালে, শফি বিক্রমপুরী সস্ত্রীক পবিত্র হজ পালনের পর থেকে চলচ্চিত্র পরিচালনা ও প্রযোজনা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন। তিনি সমাজ সেবামূলক কর্মকান্ডে ব্যস্ত থাকেন। ‘শফি বিক্রমপুরী জনকল্যাণ সমিতি’ নামে একটি সামাজিক কল্যাণমূখী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি আরো প্রতিষ্ঠা করেন ‘বেগম ফাতেমা আরশেদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়’, ‘নাসিমা শফি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’,
‘আল মদিনা কবরস্থান’, ‘দশাল আশরাফুল উলুম হাফিজিয়া মাদ্রাসা’, ‘আল মদিনা জামে মসজিদ’ ও ‘ফাতেমা আরশেদ আলী দারুল উলূম মাদ্রাসা’।

শফি বিক্রমপুরী লেখা-লেখিতেও মনোযোগী ছিলেন। ২০০৮ সালে তার লেখা ‘ঢাকায় ৫০ বছর’ নামে একটি বই প্রকাশিত হয়। ‘আমার দেখা ঢাকার ৭২ বছর’ নামে আরো একটি গ্রন্থ লিখা শুরু করেছিলেন।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের একজন সফল মানুষ শফি বিক্রমপুরী। আমাদের চলচ্চিত্রশিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে রেখেছেন অনন্য অবদান। তিনিও চলচ্চিত্র থেকে নাম-জশ-খ্যাতি ও সম্মান সবই পেয়েছেন। শেষ জীবনটা ধর্মকর্ম ও সমাজ সেবা করে কাটিয়েছেন তিনি। আমাদের চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের কাছে একজন অত্যন্ত সফল এবং ভালো মানুষ হিসেবে সুপরিচিত ও সম্মনীত ছিলেন । বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পে একজন শফি বিক্রমপুরীর
অবদান অবশ্যই স্মরণীয়।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন