খল চরিত্রের সফল অভিনেতা নাসির খান-এর ১৪তম মৃত্যুবার্ষকী আজ। তিনি ২০০৭ সালের ১২ জানুয়ারী, মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৪৭ বছর। প্রয়াত অভিনেতা নাসির খানের স্মৃতির প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা এবং তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি প্রার্থনা করি।
নাসির খান ১৯৫৯ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়ার রাজপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। ১৯৮৪ সালে এফডিসি আয়োজিত ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ আয়োজনের সোনালী ফসল এই প্রতিভাবান অভিনেতা নাসির খান। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবিগুলোর মধ্যে- সম্রাট, বেদের মেয়ে জোসনা, অন্তরে অন্তরে, গারিয়াল ভাই, কুচবরণ কন্যা, রাক্ষস, বিক্ষোভ, এই ঘর এই সংসার, পাগল মন, বালিকা হলো বধূ, স্নেহ, দেনমোহর, আক্কেল আলী, হাঙর নদী গ্রেনেড, স্বপ্নের নায়ক, মায়ের অধিকার, ভন্ড, আলিফ লায়লা, সুপারম্যান, অনন্ত ভালবাসা, রবিনহুড, মাস্তান, শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেফতার, ক্ষুদা, চিরদিনের সাথী, আকর্ষণ, আরমান, অগ্নিসাক্ষী, লুটতরাজ, তের পান্ডা এক গুন্ডা, নয়া কসাই, গোপন আস্তানা, মিশন শান্তিপুর, ঘরে দুশমন, স্ত্রীর মর্যসদা, নয়া কসাই, ভাই কেন আসামি, টারজান কন্যা, স্বামী আমার বেহেশত, নিষিদ্ধ নারী, পুলিশ অফিসার, ফুল নেবো না অশ্রু নেবো, লেডি রংবাজ, কাটা রাইফেল, আমি গুন্ডা আমিই মাস্তান, হীরা চুনি পান্না, রাজা রানি, আজকের ক্যাডার, হিম্মত, ঠেকাও মাস্তান, বিশ্ব বাটপার, দাদাগিরি, জগী ঠাকুর, লাল দরিয়া, দুই ভাইয়ের যুদ্ধ, স্ত্রী কেন শত্রু, ভয়ংকর হামলা, দুরধর্ষ খুনী, জীবনের চেয়ে দামি, জীবনের গ্যারান্টি নেই, ভন্ড নেতা, আজকের চাঁদাবাজ, জানোয়ার, মরণ কামড়, বিদ্রোহী রাজা, বাবা ঠাকুর, জিদ্দি বউ, তুমি কি সেই, বুলেট, ময়দান, ক্যাপ্টেন মারুফ, উল্টা পাল্টা ৬৯, দাপট, ভাইয়ের শত্রু ভাই, কাসেম মালার প্রেম, আজকের সমাজ, বিগ বস্, ভাইয়া, মাস্তানের উপর মাস্তান, স্বপ্নের বাসর, শিকারী, রংবাজ বাদশা, ইইত্যাদি ।
প্রায় ৪০০ শত ছবিতে অভিনয় করেছেন নাসির খান। বিভিন্ন ছবিতে দেয়া তাঁর সংলাপ দর্শকদের মুখে মুখে এখনো শুনা যায়। যেমন- “মামা বলতো ভাগ্নে বেশি লোভ করিসনে”, “আমার দয়া আছে কিন্তু মায়া নাই”, “কথা কম কাজ বেশি, মানুষকে আমি বড় ভালোবাসি”, “আমার দুঃখ আছে কিন্তু কষ্ট নাই”, “মুরব্বি যা বলে বুদ্ধিমানরা সে মত চলে” তাঁর মুখে বলা এই সংলাপগুলো খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল।
নাসির খান ছাত্র জীবনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন। তিনি একসময় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সহ-সভাপতিও হয়েছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সর্বাধিক ভোটে নির্বাচিত কার্যকারী সদস্য ছিলেন।
নিজের অভিনয় গুণে ভক্তদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন নাসির খান। তিনি, স্ত্রী ও তিন কন্যাসহ বাংলাদেশব্যাংক কলোনির পাশেই যে গলিটিতে বসবাস করতেন, সে গলির নাম এখন ‘নাসির খানের গলি’।
নাসির খান সিনেমায় নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করলেও বাস্তবে সহজ-সরল জীবন ছিল তাঁর। ভালো মানুষ ও ভালো অভিনেতা হিসেবে নাসির খান, স্মরণীয় থাকবেন চিরকাল।