এর সূত্র ধরে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন কামরুল ইসলাম।
সড়কের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা নিয়ে আপনার দীর্ঘ লড়াই। এখন শিক্ষার্থীরা নেমেছেন এই কাজে। তাঁদের দেখে কেমন লাগছে?
আমি বরাবরই বলে আসছি, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো আমার একার পক্ষে সম্ভব নয়।
২০১৮ সালেও ছাত্ররা দেখিয়ে দিয়েছিল, কিভাবে সড়কে শৃঙ্খলা আনা যায়। তখন সরকার ও সুধীজনরা বলেছিল, তারা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। কিন্তু কয়েক মাস পরই সে চোখ বন্ধ হয়ে গেছে! এখন ছাত্ররা আবার রাস্তায় নেমেছেন, এটা দেখে খুবই ভালো লাগছে। তবে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি এটা না। বাচ্চারা হাত দিয়ে ইশারা দিচ্ছে, গাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়াতে হচ্ছে—এগুলো খুব ঝুঁকিপূর্ণ।
এরই মধ্যে দুর্ঘটনাও ঘটেছে। এই সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে বলতে চাই, যেসব ব্যবসায়ী ছাত্রদের রাস্তায় খাবারদাবার দিচ্ছেন, এর সঙ্গে কিছু লাল-সবুজ বাতির ব্যবস্থা করে দিন। সড়কের ট্রাফিক লাইটগুলোও ঠিক নেই। এগুলো স্থাপন করে সিটি করপোরেশন আর ব্যবহার করে পুলিশ। এ নিয়ে দুই পক্ষের রেষারেষি। দুই পক্ষই টেন্ডার নিতে চায়। এ কারণে এগুলো আর সচল হয় না।
আপনি নিজেও ছাত্রদের সঙ্গে সড়কে নেমেছেন। আপনাকে দেখে তাঁদের প্রতিক্রিয়া কেমন?
আমি যাচ্ছি উৎসাহ দিতে। তবে আমি গেলে ওদের কাজ একটু বিশৃঙ্খল হয়ে যায়। সবাই ছুটে আসে, কথা বলে, ছবি তোলে। এ জন্য আজ (গতকাল) যাইনি। সড়কে প্রত্যেকটা মুহূর্তে সচেতন থাকতে হয়। বিশৃঙ্খলা এড়ানোর জন্য যাইনি। তবু আগামীতে যাব, মোড়ে নেমে বাচ্চাদের একটু সাধুবাদ দিয়ে দ্রুত চলে আসব।
আমাদের সড়কে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা আসেনি কেন? আপনার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা কী বলে?
দুই-এক কথায় আসলে বলা যাবে না। সংক্ষেপে বলি, এখানে মূর্খ মানুষের রাজনীতি আছে। তারা সব সময় দেশের মানুষকে শাসন করতে চায়। সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ ছবিতে একটা দৃশ্য আছে। যেখানে বলা হয়েছে, প্রজারা যত বেশি জানবে, তত কম মানবে। আমাদের এখানেও যুগ যুগ ধরে এ বিষয়টি চলে আসছে। সড়কের যাঁরা শ্রমিক, তাঁদের জীবনমান উন্নয়নে কখনো কিছু করা হয়নি। নেতারা সব সময় তাঁদের লাঠিয়াল বাহিনীর মতো ব্যবহার করেছে। এ ছাড়া চাঁদাবাজি আছে। মোট কথা, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বিধানে যাঁদের কাজ করার কথা, তাঁরাই করেননি।
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে অনেকেই নিজের প্রত্যাশা জানাচ্ছেন। আপনার প্রত্যাশা কেমন?
এই সরকারকে ধৈর্য ও চিন্তা নিয়ে কাজ করতে হবে। অন্যরা হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারলেও এই সরকার পারবে না। কৌশল অবলম্বন করতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে আমার চাওয়া সড়কের শৃঙ্খলা ফেরানো। এই অঙ্গনে কিছু ভালো মানুষও তো আছেন। তাঁদের এক করতে হবে। তাঁদের নেতৃত্বে আনতে হবে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আনিসুল হক র্যাপিড ট্রানজিট বাস চালু করতে চেয়েছিলেন। এটাকে যেন দ্রুত বাস্তবায়ন করা হয়। তাহলে বাসগুলোর দৌরাত্ম্য বন্ধ হবে। সারা পৃথিবীতে গণপরিবহন থাকে সরকারের অধীনে। ব্যক্তি মালিকানায় রেখে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানো যাবে না।
চলচ্চিত্র নিয়ে কোনো প্রত্যাশা নেই?
কী প্রত্যাশা করব! জায়গাটা পুরনো হয়ে গেছে, চিন্তার জায়গা থেকে পুরনো হয়েছে। নতুন প্রজন্মের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার লক্ষণ নেই। আমার চাওয়া, তাঁদের চিন্তাধারার উন্নয়ন হোক। যেখানে টাকা দেখে, তারা (চলচ্চিত্রের মানুষ) সেখানেই ছুটে যায়। ভালো-মন্দ বিবেচনা করে না। এসব দূর হোক।
অভিনয়ের প্রস্তাব পান এখন?
প্রস্তাব সে রকম আসে না। যখন আসে, তখন আবার অনেক কিছুতে মিল হয় না। আমি কোনো দিন ঘোষণা করিনি যে অভিনয় করব না। পড়ালেখা শেষ হওয়ার আগেই অভিনয়ে এসেছি। এই জায়গাটিকে যতটা ভালোভাবে জানি, অন্য কিছু তো ততটা জানা সম্ভব না। এখনো ইচ্ছা আছে, যদি পছন্দসই প্রস্তাব আসে, অবশ্যই অভিনয় করব।
সৌজন্যে: কালের কন্ঠ অনলাইন