নাসিম রুমি: সাবিনা ইয়াসমিন। বাংলাদেশ, এই উপমহাদেশ কিংবা বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে তাঁকে নিয়ে লিখার, তাঁর পরিচয় উপস্থাপনের প্রয়োজন হয়না। বাংলা সংগীতের এক অবিসংবাদিত কণ্ঠশিল্পী তিনি। বাংলা শাস্ত্রীয়, লোক, আধুনিক কিংবা চলচ্চিত্রের নেপথ্য গায়িকে হিসেবে এক জীবন্ত কিংবদন্তি সাবিনা ইয়াসমিন। তাঁর বাবা লুৎফর রহমান সরকারি চাকুরী করলেও চমৎকার রবীন্দ্র সংগীত গাইতেন।
মা মৌলুদা খাতুন মুর্শিদাবাদের প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ ওস্তাদ কাদের বক্সের কাছে শাস্ত্রীয় সংগীতের তালিম নিয়েছিলেন। বলা যেতে পারে সাবিনা ইয়াসমিন জন্মেই ছিলেন এক পারিবারিক সুরের আবহাওয়ায়। তাঁর বড় বোন ফরিদা ইয়াসমিন ও ফৌজিয়া ইয়াসমিন ওস্তাদ দুর্গাপ্রসাদ রায়ের কাছে উচ্চাঙ্গ সংগীত শিখতেন। সে সময় তিনি এবং আরেক বোন নীলুফার ইয়াসমিন তাদের পাশেই বসে থাকতেন।
পরবর্তী সময়ে তিনি ওস্তাদ পিসি গোমেজের কাছে একটানা ১০ বছর শাস্ত্রীয় সংগীতের তালিম নিয়েছেন। তবে মঞ্চে গান গাইতে উঠেছেন মাত্র সাত বছর বয়সে। ১৯৬২ সালে “নতুন সুর” চলচ্চিত্রে শিশু কন্ঠ শিল্পী হিসেবে, রবীন ঘোষের সুরে একটি গান গেয়েছিলেন সাবিনা ইয়াসমিন। ১৯৬৪ সালে তিনি বেতারে ছোটদের গানের অনুষ্ঠান “খেলাঘর” এ নিয়মিত অংশ নিতেন। ১৯৬৭ সালে “আগুন নিয়ে খেলা” ছবিতে পূর্ণ নেপথ্য শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে সাবিনা ইয়াসমিনের।
এরপর কেবলই এগিয়ে চলা। চলচ্চিত্রে তাঁর গাওয়া গানের সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার। পেয়েছেন একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কার। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন ১৪ বার। বাচসাস পুরস্কার ৬ বার। তাঁর প্রাপ্তির ঝুলিতে রয়েছে এইচ এম ভি’র ডবল প্লাটিনাম ডিস্ক, উত্তম কুমার পুরস্কার, বিশ্ব উন্নয়ন সংস্থা থেকে ডক্টরেট ডিগ্রী, জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কার, পূর্বাণী চলচ্চিত্র পুরস্কার, শেরে বাংলা স্মৃতি পদক, অ্যাস্ট্রোলজি পুরস্কার, আমেরিকার লস এঞ্জেলস থেকে “বেস্ট সিঙ্গার” পুরস্কার সহ অনেক অনেক পুরস্কার, পদক এবং সম্মাননা। পৈতৃক বাড়ি সাতক্ষীরায় হলেও তাঁর বাবা চাকুরির সুবাদে বসবাস করতেন ঢাকায়। ১৯৫৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকাতেই জন্মগ্রহণ করেন সাবিনা ইয়াসমিন।