English

17 C
Dhaka
মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪
- Advertisement -

আজ প্রিয়দর্শিনী চিত্রনায়িকা দিতির অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী

- Advertisements -

এ কে আজাদ: দিতি। পুরো নাম পারভীন সুলতানা দিতি। জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা। ছিলেন জনপ্রিয় মডেল ও কণ্ঠশিল্পী। ছোটবেলা থেকে গানের চর্চা শুরু করেন। বড় গায়িকা হবার স্বপ্ন দেখতেন। শিশু একাডেমি আয়োজিত গানের প্রতিযোগিতায় জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছিলেন। একসময় টেলিভিশনে গান গাইতে এসে, হয়ে যান টেলিভিশন নাটকের নায়িকা। পরবর্তিতে ১৯৮৪ সালে, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থার “নতুন মুখের সন্ধানে” কার্যক্রমের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আসেন দিতি। পরবর্তিতে সময়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা হিসেবে আবির্ভূত হন তিনি।

রূপালী পর্দায় তাঁর মনকাড়া সুন্দর মুখের মুক্তোঝরানো হাসিতে সিনেমাদর্শকদের স্বপ্নের নায়িকা হয়ে যান অনায়াসে। অভিনয় গুণে পেয়েছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও। কিন্তু… কঠিন অসুখে ভুগে উচ্ছল প্রজাপতির মত প্রিয়দর্শিনী চিত্রনায়িকা ঘোর অমানিশার অন্ধকারে হারিয়ে গেলেন।

বড় অসময়ে চলে যাওয়া উজ্জ্বল উচ্ছল চিত্রতারকার নাম দিতি। আজ এই প্রিয়দর্শিনী চিত্রনায়িকা’র অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ২০১৬ সালের ২০ মার্চ, ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হয়ে, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৫১ বছর। অকাল প্রয়াত এই অভিনেত্রীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।

জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা দিতি (পারভীন সুলতানা দিতি) ১৯৬৫ সালের ৩১ মার্চ, নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনার গাঁয়ে, জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকার লালমাটিয়া মহিলা কলেজ থেকে বি.এ পাস করেন।

শৈশবে গায়িকা হওয়ার ইচ্ছা ছিল তাঁর। গানের চর্চাও করতেন নিয়মিত। শিশু একাডেমি থেকে আয়োজিত গানের প্রতিযোগিতায় তিনি জাতীয় পুরস্কারও লাভ করেছেন।

একসময় তিনি বিটিভিতে গান গাওয়া শুরু করেন। বিটিভিতে গান গাওয়ার সময় গুণী অভিনেতা আল মনসুর তাঁকে দেখে টিভি নাটকে অভিনয় করার আহবান জানান। ‘লাইলি মজনু’ নাটক দিয়ে শুরু হয় দিতি’র অভিনয়জীবন।

১৯৮৪ সালে, এফডিসি আয়োজিত নতুন মুখের সন্ধানের মাধ্যমে দেশীয় চলচ্চিত্রে দিতি’র আগমন ঘটে। তাঁর অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র উদয়ন চৌধুরী পরিচালিত ‘ডাক দিয়ে যাই’ (মুক্তি পায়নি)। দিতি অভিনীত মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র ‘আমিই ওস্তাদ’। মুক্তি পায় ১৯৮৬ সালে, ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন আজমল হুদা মিঠু।

এরপরে তিনি একের পর এক ছবিতে অভিনয় করতে থাকেন। একসময় পরিচালকদের চাহিদার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে যান চিত্রনায়িকা দিতি। উঠে যান জনপ্রিয়তার শীর্ষে। জনপ্রিয় চিত্রনায়িকারূপে অবস্থান হয় তাঁর আমাদের চলচ্চিত্রাকাশে।

প্রিয়দর্শিনী চিত্রনায়িকা দিতি অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে- স্বামী-স্ত্রী, ভাই বন্ধু, হীরামতি, দুই জীবন,উসিলা, সহধ‌র্মিনী, স্বর্গ-নরক, পর্বত, অমর সঙ্গী, নিয়তীর খেলা, বীর বিক্রম, স‌ুদ আসল, সাজানো বাগান, বীরঙ্গনা সখিনা, আপন ঘর, সৎমানুষ, লেডি ইন্সপেক্টর, খুনের বদলা, জ্বলন্ত বারুদ, আজকের হাঙ্গামা, স্ত্রীর পাওনা, শ্বশুর বাড়ি, চাকর, সুখের ঘরে দুখের আগুন, স্বার্থপর, আত্মবিশ্বাস, স্বাধীন, তিন টেক্কা, বেপরোয়া, লক্ষ্মীর সংসার, ভয়ংকর সাতদিন, হিংসার আগুন, পাপী শত্রু, আজকের সন্ত্রাসী, দূর্জয়, স্নেহের প্রতিদান, শেষ উপহার, রচরম আঘাত, রিক্সাওয়‌ালা, মুন্না মাস্তান, অপরাধী, কালিয়া, মহান বন্ধু, গ্যাং লিডার, আমার দেশ আমার প্রেম, নারী আন্দোলন, মা‌টির দূর্গ, অ‌চেনা মানুষ, অ‌তিক্রম, দোষী, হা‌তিয়ার, মানুষ, মু‌ক্তি চাই, আসামী গ্রেফতার, ভাই, আম্মা, বাদশা ভাই, দিলরুবা, বাহরাম বাদশা, সতী‌নের সংসার, লুটতরাজ, রূপনগ‌রের রাজকন্যা, অচল পয়সা, বাঁচার লড়াই, আজ‌কের সন্ত্রাসী, মে‌য়ের অধিক‌ার, পলাতক আসামী, হারাম‌খোর, শেষ প্র‌তিক্ষা, রাজা বাবু, পদ্মা আমার জীবন, চির‌দি‌নের সাথী, লে‌ডি কমা‌ন্ডো, বি‌দ্রোহী আসামী, বদলা নেব, অবলম্বন, নয়া তুফান, মহাযুদ্ধ, মাস্তান রাজা, রাজা গুন্ডা, হত্যা, বেঈমানী, আত্ম প্রকাশ, অপরা‌জিত নায়ক, ভাই কেন আসামী, অকৃতজ্ঞ, চক্রা‌ন্তের শিকার, প্রিয় শত্রু, দুই পৃ‌থিবী, ক‌ঠিন প্র‌তি‌শোধ, মে‌ঘের কো‌লে রোদ, দয়া মায়া, আপন ঘর, অংক, ক্ষমা নেই, হুম‌কি, বেনাম বাদশা, হৃদয় ভাঙা ঢেউ, ধূম‌কেতু, জিজ্ঞাসা, শা‌স্তির বদ‌লে শা‌স্তি, মান মর্যাদা, পরমা সুন্দরী, কাল সকালে, বিন্দুর ছেলে, চার সতীনের ঘর, নয় নম্বর বিপদ সংকেত, আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা, মেঘের কোলে রোদ, প্রিয়তমেষু, মাটির ঠিকানা, হৃদয় ভাঙ্গা ঢেউ, দ্যা স্পীড, তবুও ভালোবাসি, পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী, কঠিন প্রতিশোধ, জোনাকির আলো, মুক্তি, অন্তরঙ্গ, দুই পৃথিবী, রাজাবাবু, আইসক্রিম, সুইটহার্ট, মধূমকেতু, যে গল্পে ভালবাসা নেই, মাটির ঠিকানা ইত্যাদি ।

কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ‘স্বামী-স্ত্রী’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন দিতি। এছাড়াও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সংগঠন কর্তৃক নানা পুরস্কারে পুরস্কৃত হয়েছেন, পেয়েছেন সম্মাননা।

ব্যক্তিজীবনে দিতি, চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন। নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে দিতি ও সোহেল চৌধুরীর বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। দিতি-সোহেল দম্পতির দুই সন্তান, মেয়ে লামিয়া চৌধুরী ও ছেলে দীপ্ত চৌধুরী।

টিভি নাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি কিছু নাটক পরিচালনাও করেছিলেন দিতি। এ ছাড়া টিভি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছেন। গান গাইতেন তিনি । তাঁর একক গানের অ্যালবামও প্রকাশিত হয়েছে । মডেলিংও করেছেন। বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী দিতি মডেলিংয়েও ছিলেন বেশ জনপ্রিয় ।

একসময়ে একের পর এক সুপারহিট চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। সুন্দরী-প্রিয়দর্শিনী চিত্রনায়িকা হিসেবে দারুণ জনপ্রিয় ছিলেন সিনেমা দর্শকদের কাছে । জনপ্রিয় অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। অকালে-অসময়ে ঝড়ে যাওয়া চিত্রতারকা দিতি- সিনেমাপ্রেমী দর্শকদের স্বপ্নের নায়িকা হয়ে বেঁচে থাকবেন অনন্তকাল।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন