এই সময়ের ব্যস্ততম অভিনেত্রী-নৃত্যশিল্পী নুসরাত জান্নাত রুহী গতকাল ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা আকন্দ মোহাম্মদ ফয়সাল উদ্দিন দ্বারা মানসিকভাবে হেনস্থার শিকার হয়েছেন। রুহী বলেন, প্রায় ১১ বছর ধরে আমি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সমাজকল্যাণের অধীনে সঙ্গীত শিক্ষাকেন্দ্রের একজন সিনিয়র নৃত্য শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছি। একেক সময় একেকজন সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা আমাদের দায়িত্ব পালন করেন। কয়েক মাস হলো আকন্দ মুহাম্মদ ফয়সাল উদ্দিন এ দায়িত্বে আসেন।
করোনার জন্য এখনো স্কুল কলেজ বন্ধ। তাই আমাদের একাডেমির ক্লাশ নেয়াও বন্ধ। কয়েক মাস হলো উনি এসে গুলিস্তান মহানগর নাট্য মঞ্চে আমাদের সকল শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষকদের ডাকেন। সেখানে ডেকে উনি সবার নাচ দেখেন, গান শুনেন। উনি তা দেখে ও শুনে বিচার করেন কে যোগ্য আর কে অযোগ্য। অথচ আমরা সবাই এখানে পরীক্ষা দিয়ে যোগ্যতা প্রমাণ দিয়ে খন্ডকালীন এই চাকরিটা করছি। আমি নিজে আজ থেকে ১১ বছর আগে যখন পরীক্ষা দেই তখন তৃতীয় স্থান অর্জন করে এই খন্ডকালীন চাকরিটা করছি। তারপরও অবশ্যই এই যোগ্যতার প্রমাণ আমরা শিল্পীরা দিতাম যদি আমাদের নাচ গানের সিনিয়র কেউ হতেন।
কিন্তু উনি তো এই সেক্টরের কেউ না। আমাদের কোনো নাচের গুরু অথবা দক্ষ কারো সামনে এমন যোগ্যতার প্রমাণ অবশ্যই দেয়া যায়।’ জানা গেছে, এভাবে উনার কথা মতো কোনো শিল্পী যখন রিহার্সেলে না যান তখন তিনি বেতন কেটে দেন এবং শোকজ করেন। তেমনিভাবে রুহী সহ আরো কয়েকজন শিল্পীর বেতন কাটেন এবং শোকজও করেন। গতকাল (১৮ মার্চ, ২০২১) রুহী সেই শোকের জবাব দিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নগরভবনের কার্যালয়ে যান। যথারীতি শোকজের জবাব দিতে যাওয়ার পর ঐ কর্মকর্তা লোকজনের সামনে রুহীকে এমনভাবে অপমান-অপদস্ত করেন যা রুহী নিতে না পেরে অসুস্থ হয়ে যান। প্রায় ৩০ মিনিট রুহী অজ্ঞান ছিলেন সেখানে। উপস্থিত অনেকেই তাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স কল করেন।
কিন্তু অ্যাম্বুলেন্স আসতে দেরি হওয়ায় রুহীকে সেখানেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। ৩০ মিনিট পর তার জ্ঞান ফিরে আসে। আসলে মানসিকভাবে আঘাত পাওয়ায় তার এমন হয়েছে বলে জানা যায়। এই ঘটনায় তার মৃত্যুও হতে পারতো। একজন শিল্পীকে লোকজনের সামনে এভাবে কথা বলাটা উপস্থিত অনেকেই তা খারাপ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। রুহী বলেন, ‘আমি আসলে উনার সহকারীর কাছে শোকজ এর জবাবটা দিতে গিয়েছিলাম। তারপর উনি আমাকে উনার রুমে ডেকে নিয়ে আরো কয়েকজন মানুষের সামনে ইচ্ছা মতো বকাবকি করেন। উনি আসলে এমনভাবে কথা বলেছেন যা একজন শিল্পীর পক্ষে নেয়ার মতো না। আমরা শিল্পীরা স্বাধীনচেতার মানুষ এবং আমরা শুধুমাত্র টাকার জন্যই কাজ করি না। শিক্ষকতা করতে আমার ভালো লাগে এবং বাচ্চাদের শেখাতে ভালো লাগে সেজন্যই করি। আর আমি কেনো উপস্থিত থাকতে পারি নাই সেটা উনাকে ফোন করে বলেছি, উনি কথা না শুনে ফোনটা কেটে দেন।
আর আমাদের খন্ডকালীন এই জব নেয়ার সময় কোনো নিয়োগপত্র কিংবা আদেশপত্রে লেখা ছিলো না যে এভাবে ডেকে নিয়ে রিহার্সেলের নামে ইচ্ছা মতো হয়রানি করবেন। আর আমাদের প্রোগ্রাম করা নিয়েও মাননীয় মেয়র সাহেবের আদেশের কোনো নির্দেশণাপত্রও পাইনি। উনি শুধুমাত্র নিজের কর্তৃত্ব জাহির করার জন্য আমাদের সাথে এমন করছেন। আমি এর আগেও প্রোগ্রাম করেছি এবং সামনেও করবো। কিন্তু উনি এমনভাবে বাধ্য করেন এবং এমনভাবে কথাবার্তা বলেন- যা একজন শিল্পীর জন্য অপমানজনক।’
জানা গেছে, এই আকন্দ মুহাম্মদ ফয়সাল উদ্দিন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে যোগ দেয়ার আগে ঝালকাঠির এক উপজেলায় থানা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। উনার বিরুদ্ধে সেখানে সরকারী ত্রাণ বিতরণ করা নিয়ে অনিয়মনের খবর তখন বেশ চাউর হয়েছিল। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে সমাজকল্যাণ ও বস্তি ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেয়ার পর সঙ্গীত শিক্ষাকেন্দ্রে উনি চান পুরনো সবাইকে বাদ দিয়ে নতুনভাবে নিয়োগ দিতে। আর এজন্যই তিনি শিক্ষকদের উপর এমন মানসিক নির্যাতন চালাচ্ছেন। যেনো বাধ্য হয়ে সবাই চাকরি ছেড়ে দেন এবং তিনি তার মতো করে নিজস্ব মানুষ নিয়োগ দিতে পারেন। এসব কথা ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে চাউর রয়েছে। অতচ, এই খন্ডকালীন চাকরি করা শিল্পী তথা শিক্ষকদের শুধুমাত্র শিশুদের সঙ্গীত তথা সংস্কৃতি শিক্ষা দেয়ার জন্যই করা হয়েছে। এভাবে শিক্ষকদের হয়রানি করার জন্য নয়।
গতকাল রুহী এই ঘটনা নিয়ে ফেসবুকে একটি লাইভ করেছেন। সেখানে তিনি সকল বিষয় বর্ণনা দিয়েছেন। এই বিষয়ে জাতীয় নৃত্যশিল্পী সংস্থাও বেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
উল্লেখ্য, রুহী বাংলাদেশ বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টস (বাফা)- এ সিনিয়র নৃত্যশিল্পী হিসেবে প্রায় ১৩ বছর শিক্ষকতা করছেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রোগ্রামে নৃত্য পরিবেশন করেছেন। তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)- এর তালিকাভুক্ত একজন নৃত্যশিল্পী। রুহী নাচ ও ফ্যাশন ডিজাইনিং এর উপর শান্ত মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। এছাড়াও বর্তমানে টিভি নাটকের একজন ব্যস্ত অভিনয়শিল্পী রুহী। তিনি টিভি নাটকের অভিনয় শিল্পীদের সংগঠন ‘অভিনয় শিল্পী সংঘ’রও একজন সদস্য। বাংলাদেশ ইয়ুথ বাংলা কালচারাল ফোরাম এর ডেপুটি সেক্রেটারি (হসপিটালিটি এন্ড এন্টারটেইনমেন্ট)- এর দায়িত্বও পালন করছেন রুহী।