অভিনেতা ও চলচ্চিত্র প্রযোজক মিজু আহমেদ-এর চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০১৭ সালের ২৭ মার্চ, শুটিংয়ের উদ্দেশ্যে ঢাকা থেকে দিনাজপুর যাওয়ার পথে ট্রেনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর। প্রয়াত এই গুণি চলচ্চিত্রাভিনেতার প্রতি বিন্ম্র শ্রদ্ধা। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
অভিনেতা মিজু আহমেদ ( মিজানুর রহমান) ১৯৫৩ সালের ১৭ নভেম্বর, কুষ্টিয়া শহরের কোর্টপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা আবুল মোহাম্মদ, ছিলেন জজকোর্টের সেরেস্তাদার। মা লুৎফুননেসা বেগম, ছিলেন হোমিও ডাক্তার। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে মিজু আহমেদ ছিলেন সবার ছোট। শৈশবকাল থেকেই খেলা-ধুলা ও নাটকের প্রতি খুবই আগ্রহী ছিলেন মিজু আহমেদ। ফুটবল-ক্রিকেট সবধরণের খেলাতেই ছিলেন পারদর্শী। স্কুলজীবন থেকেই কুষ্টিয়ার স্থানীয় নাট্যদলে অন্তর্ভূক্ত হন এবং বিভিন্ন নাটকে অভিনয় করেন।
মিজু আহমেদ, কুষ্টিয়া মুসলিম হাই স্কুল থেকে মেট্রিক, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে আই.এ ও বিএসসি পাস করে ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। রাজনৈতিক কারণে এক সময় চলে আসেন ঢাকায়, আর ঢাকায় এসে যুক্ত হন চলচ্চিত্রের সাথে।
১৯৭৭ সালে মুক্তি প্রাপ্ত, মিতা পরিচালিত ‘তৃষ্ণা’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ করেন। অভিনয়প্রতিভার গুণে, কয়েক বছর পরে তিনি ঢাকার চলচ্চিত্রের অন্যতম সেরা একজন খলনায়ক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।
এছাড়াও তিনি তাঁর নিজের চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থা ‘ফ্রেন্ডস মুভিজ’-এর (অভিনেতা রাজীব-এর সাথে) ব্যানারে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছেন।
মিজু আহমেদ অভিনীত অসংখ্য ছবি’র মধ্যে- নদের চাঁদ, গাংচিল, মাসুম, মাটির ঘর, জনতা এক্সপ্রেস, এতিম, মহানগর, ঈদ মোবারক, নয়নের আলো, পরিবর্তন, সালতানাত, ঝিনুকমালা, অশান্তি, সারেন্ডার, সুপারস্টার, স্বর্গ নরক, অপরাধী, বনবাসে বেদের মেয়ে জোসনা, সত্য মিথ্যা, বোনের মত বোন, স্ত্রীর পাওনা, দাঙ্গা, পিতা মাতা সন্তান, চাকর, বন্ধু আমার, প্রেম প্রতিজ্ঞা, আপন ঘর, চাঁদাবাজ, ত্রাস, ত্যাগ, দেশপ্রেমিক, খলনায়ক, বশিরা, ন্যায়যুদ্ধ, চাঁদের আলো, আজকের সন্ত্রাসী, শত্রুতা, মহৎ, অগ্নিপুরুষ, হাঙর নদী গ্রেনেড, অন্ধ ভালোবাসা, কুলি, আসামী গ্রেফতার, আম্মাজান, লাঠি, লাল বাদশা, বাদশা ভাই, পাষাণ, গুন্ডা নাম্বার ওয়ান, ঝড়, কষ্ট, বিদ্রোহ চারিদিকে, যোদ্ধা, ওদের ধর, ইতিহাস, লাল দরিয়া, ভাইয়া, কারাগার, হিংসা প্রতিহিংসা, বিগ বস, আজকের সমাজ, মহিলা হোস্টেল, আরমান, হীরা আমার নাম, ভন্ড ওঝা, ঝন্টু মন্টু দুই ভাই, মেশিনম্যান, আমি বাঁচতে চাই, বাবার জন্য যুদ্ধ, বাবা আমার বাবা, মায়ের স্বপ্ন, রাজধানীর রাজা, কোটি টাকার ফকির, বিয়ে বাড়ী, কাজের মানুষ, ঠেকাও আন্দোলন, সবাইতো ভালোবাসা চায়, প্রেমিক রংবাজ, জুম্মন কসাই, চিরদিনই আমি তোমার, ওরা আমাকে ভালো হতে দিল না, চাচ্চু আমার চাচ্চু, মায়ের চোখ, হায় প্রেম হায় ভালোবাসা, আমার স্বপ্ন আমার সংসার, রিকসাওয়ালার ছেলে, এক জবান, বস্তির ছেলে কোটিপতি, কে আপন কে পর, মনের জ্বালা, দারোয়ানের ছেলে, ভালোবাসার রঙ, স্বামী ভাগ্য, বাজারের কুলি, তুমি আসবে বলে, মানিক রতন দুই ভাই, এইতো ভালোবাসা, তবুও ভালোবাসি, ইভটিজিং, কঠিন প্রতিশোধ, দুই পৃথিবী, ভালোবাসা সীমাহীন, অ্যাকশন জেসমিন, বসগিরি, পুড়ে যায় মন, এক জবানের জমিদার হেরে গেলেন এইবার, আড়াল, প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য ।
১৯৯২ সালে ‘ত্রাস’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য মিজু আহমেদ, শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। ২০১০ সালে ‘ওরা আমাকে ভাল হতে দিলনা’ ছবিতে খলচরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি।
মিজু আহমেদ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির দুইবার সাধারণ সম্পাদক ও দুইবার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মানিত উপদেষ্টা ছিলেন তিনি।
ব্যক্তিজীবনে মিজু আহমেদ ১৯৮১ সালে, পারভীন আহমেদকে বিয়ে করেন। তাদের তিন সন্তান। দুই মেয়ে তাসনিম আহমেদ ও আফিয়া আহমেদ এবং ছেলে হারসাত আহমেদ।
আমাদের দেশীয় চলচ্চিত্রে ভিলেন অভিনেতা হিসেবে যাঁরা খ্যাতির শিখড়ে পৌছেছেন, তিনি ছিলেন তাদের অন্যতম একজন। খলচরিত্রে ভিন্নমাত্রার অভিনয় দক্ষতার, প্রতিভা দেখিয়েছন অনায়াসে । পেয়েছেন জনপ্রিয়তা, হয়েছেন প্রসংশিত। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের তথা শিল্পীদের স্বার্থের অনুকুলে কাজ করে নেতা হিসেবেও পেয়েছিলেন সুনাম-সুখ্যাতি।
অকালে-অসময়ে চলে যাওয়া শক্তিমান অভিনেতা মিজু আহমেদ, বেঁচে থাকবেন অনন্তকাল~ তাঁর অভিনয়কর্মের মাধ্যমে।