English

26 C
Dhaka
রবিবার, নভেম্বর ২৪, ২০২৪
- Advertisement -

উপমহাদেশের অন্যতম খ্যাতিমান সংগীতজ্ঞ রবিন ঘোষ-এর পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

- Advertisements -

উপমহাদেশের অন্যতম খ্যাতিমান সংগীতজ্ঞ রবিন ঘোষ-এর পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০১৬ খ্রিষ্টব্দের ১৩ ফেব্রুয়ারি, ঢাকায় পরলোকগমন করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে জনপ্রিয় সুরকার ও সংগীত পরিচালক রবিন ঘোষ-এর স্মৃতির প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা এবং তাঁর বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করি।

বরেণ্য সুরকার রবিন ঘোষ ২৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৭ খ্রিষ্টব্দে, ইরাকের বাগদাদ-এ জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতা আন্তর্জাতিক রেডক্রসে চাকুরী করতেন। চাকুরী সূত্রেই তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে, ইরাকের বাগদাদে স্থানান্তরিত হন। সেখানেই রবিন ঘোষ খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের একটি বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি তাঁর প্রবল আগ্রহ জন্মায়। তিনি বিভিন্ন গানের রেকর্ড সংগ্রহ করতেন। নিজে হারমোনিয়াম বাজিয়ে সেসব গান গাইতেন ও সুর তুলতেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় ফিরে আসেন। ঢাকার সেগুনবাগিচায় মিউজিক কলেজ থেকে তিনি সংগীত বিষয়ে গ্র্যাজুয়েশন করেন। তাঁর এক ভাই অশোক ঘোষ বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পে বিখ্যাত পরিচালক ছিলেন।

রবিন ঘোষ তাঁর এক বন্ধুর মাধ্যমে ঢাকা রেডিও স্টেশনে চাকুরীর সুযোগ পান। সেই বন্ধুর বোন ঝর্ণা বসাক তখন চলচ্চিত্রে মাঝে-মধ্যে অভিনয় করতেন(এ ঝর্ণা বসাকই পরবর্তীকালে বিখ্যাত নায়িকা শবনম)। দুই পরিবারের সম্মতিতেই ১৯৬৪ খ্রিষ্টব্দের ২৪ ডিসেম্বর রবিন ঘোষ-শবনম বিয়ে করেন। এ দম্পতির একমাত্র ছেলে সন্তান রনি ঘোষ।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক এহতেশাম রেডিও স্টেশন পরিদর্শনে এসে রবিন ঘোষ-এর সাথে পরিচিত হন এবং তাঁর চলচ্চিত্রে সুরকার ও সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ করার আহবান জানান। এহতেশাম পরিচালিত ‘রাজধানীর বুকে'(১৯৬০) ছবি’র মাধ্যমেই রবিন ঘোষ-এর চলচ্চিত্রে সুরকার ও সংগীত পরিচালক হিসেবে আগমন ঘটে।

সংগীত পরিচালক ও সুরকার হিসেবে কাজ করা রবিন ঘোষ-এর অন্যান্য চলচ্চিত্রসমূহ- হারানো দিন, চান্দা, নতুন সুর, তালাশ, পয়সে, কারওঁয়া, বন্ধন, বেগানা, চকোরী তুম মেরে হো, কুলি, ভাইয়া, নাচের পুতুল, শেষ উত্তর, আপোষ, জুলি ও মাটির কসম (একটি গান) অন্যতম।

ষাটের দশকের শেষের দিকে তিনি পাকিস্তানে চলে যান। ওখানে বেশকিছু ছবিতে সংগীত পরিচালক ও সুরকার হিসেবে কাজ করেন। পাকিস্তানের উর্দু ছবিতে কাজ করেও তিনি বেশ জনপ্রিয়তা পান এবং পুরস্কৃত হন। পরবর্তীতে পাকিস্তানের চলচ্চিত্রের ইতিহাসের অন্যতম সফল সুরকারের মর্যাদা পান তিনি।
তালাশ (১৯৬৩), চকোরি (১৯৬৭), চাহাত (১৯৭৪), আয়না (১৯৭৭), আম্বার (১৯৭৮) ও দরিয়ান (১৯৮৪) চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ সুরকার হিসেবে ‘নিগার পুরস্কার’ লাভ করেন রবিন ঘোষ।

তাঁর সুরারোপিত জনপ্রিয় কালজয়ী গানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- তোমারে লেগেছে এত যে ভাল চাঁদ বুঝি তা জানে… (ছবি-রাজধানীর বুকে), আমি রূপনগরের রাজকন্যা রূপের যাদু এনেছি… (ছবি- হারানো দিন),
পীচঢালা এই পথটারে ভালবেসেছি,
গোলক ধাঁধার চক্করে যতই পড়েছি
…, ফুলের কানে ভ্রমর এসে চুপি চুপি বলে যায়…(ছবি- পীচঢালা পথ), আয়নাতে ঐ মুখ দেখবে যখন, কপোলের কালো তিল পড়বে চোখে..(ছবি- নাচের পুতুল), দুনিয়ারে বলেদেরে প্রিয়া কেন নিলি কেড়ে…(ছবি- শেষ উত্তর), যেদিন আকাশে উঠেছিল সুর্য প্রথমবার, সেদিন থেকে সজনী তুমি শুধু যে আমার.. (ছবি- মাটির কসম) প্রভৃতি।

রবিন ঘোষ একজন কন্ঠশিল্পীও ছিলেন। শখেরবশে কিছু ছবিতে অভিনয়ও করেছেন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের প্রথম সুপারহিট জনপ্রিয় গান তাঁরই সুুর করা( তোমারে লেগেছে এত যে ভাল চাঁদ বুঝি তা জানে…)। আমাদের চলচ্চিত্রের গান জননন্দিত হয়েছে এবং সমৃদ্ধির পথে প্রথম হেটেছে এই রবিন ঘোষ-এর হাত ধরে। চলচ্চিত্রের গানকে মানুষের মনের কাছকাছি ও জনপ্রিয়তার শীর্ষে এগিয়ে নিতে তিনি বিশেষ অবদান রেখেছিলেন সেসময়ে।
সংগীতের এই কিংবদন্তী, যিনি তাঁর অসাধারণ সব গানের সুরের মাধুর্যে রাঙিয়ে তুলেছিলেন আমাদের চলচ্চিত্র দর্শকামোদীদের হৃদয়ের আঙিনা। আমাদের চলচ্চিত্রের গানের ইতিহাসে রবিন ঘোষ-চির অমলিন।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন