দর্শকনন্দিত শক্তিমান অভিনেতা বেবী জামান-এর নবম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০১২ সালের ২৫ জানুয়ারী, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। প্রয়াত বেবী জামানের স্মৃতির প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি এবং তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
প্রতিভাবান এই অভিনেতা ১৯৩৩ সালের ২৮ জানুয়ারি, ভারতের বর্ধমানে জন্মগ্রহন করেন। বেবী জামানের পারিবারিক নাম- চৌধুরী বদরুজ্জামান। তাঁর বাবা চৌধুরী আজফার হোসেন, পেশায় ছিলেন একজন আইনজীবী। মা মোসলেমা খাতুন। বর্ধমানেই এসএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন তিনি। ১৯৫৩ সালে তাঁরা বাংলাদেশে চলে আসেন।
বেবী জামান ঢাকায় এসে ইপিআর-এর ড্রাম বাদক হিসেবে সুরকার মালিক মনসুরের সাথে কাজ শুরু করেন। তিনি থাকতেন ঢাকার গেন্ডারিয়াতে। সেখানেই পরিচয়ের সুবাদে ঢাকায় বিভিন্ন মঞ্চ নাটকে অভিনয় করতেন- সুভাষ দত্ত, শওকত আকবর, হাসান ইমাম, কাজী খালেক, আকতার হোসেন, বুলবুল আহমেদ’সহ আরো অনেকের সাথে।
বেবী জামান ১৯৬৩ সালে কাজী খালেকের পরিচালনায় ‘মেঘ ভাঙ্গা রোদ’ চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় শুরু করেন। তাঁর অভিনীত প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র সুভাষ দত্ত পরিচালিত ‘সুতরাং’ মুক্তিপায় ১৯৬৪ সালে । ‘সুতরাং’ ছবিতে তিনি নায়িকা কবরী’র স্বামীর চরিত্রে অভিনয় করেন।
তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবিগুলো হচ্ছে- মেঘ ভাঙ্গা রোদ, নতুন নামে ডাকো, কাগজের নৌকা, ১৩ নং ফেকু ওস্তাগর লেন, সুয়োরাণী দুয়োরাণী, দুই ভাই, জুলেখা, আনোয়ারা, নিশি হলো ভোর, আগুন নিয়ে খেলা, হীরামন, আয়না ও অবশিষ্ট, কুচবরন কন্যা, টাকা আনা পাই, তানসেন, যোগ বিয়োগ, সংসার, জীবন থেকে নেয়া, জাল থেকে জ্বালা, কুচবরণ কন্যা, বেদের মেয়ে, সমাপ্তি, রহিম বাদশাহ ও রূপবান, মনের মত বউ, আগন্তুক, শেষ পর্যন্ত, সমাপ্তি, পীচ ঢালা পথ, বড় বউ, রংবাজ, প্রতিশোধ, অপবাদ, যাহা বলিব সত্য বলিব, জীবন নিয়ে জুয়া, রাজার হলো সাজা, অচেনা অতিথি, যৌতুক, দুটি মন দুটি আশা, বাদী থেকে বেগম, আল্লাহ মেহেরবান, দেনা-পাওনা, অপমান, বাসর ঘর, দুই নয়ন, অসাধারণ, শিরি ফরহাদ, বাল্যশিক্ষা, জামানা, রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত, নতিজা, ইত্যাদি।
বেবী জামান মঞ্চ, টিভি, চলচ্চিত্রে অভিনয় করার পাশাপাশি তিনি তিনটি ছবিও প্রযোজনা করেছেন। এগুলো হচ্ছে- রাজার হলো সাজা, যাহা বলিব সত্য বলিব ও অপবাদ।
বহুমাত্রিক অভিনয় প্রতিভার অধিকারী ছিলেন বেবী জামান। কখনো নায়ক, কখনো সহনায়ক, কখনো কৌতুক অভিনেতা, কখনো চরিত্রাভিনেতা হিসেবে অভিনয় করেছেন। যখন যে চরিত্রে ছিলেন, তিনি তাঁর অভিনয় নৈপূণ্যে সকল চরিত্রে প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন সবসময়। একজন মেধাবী-শক্তিমান অভিনেতা হিসেবে তিনি ছিলেন, দর্শকনন্দিত ও জনপ্রিয়। এই গুণী অভিনয়শিল্পী আমাদের মাঝে চিরস্মরণী হয়ে থাকবেন।