চিকিৎসার জন্য শিল্পী আলিফ আলাউদ্দিনকে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ভারতের চেন্নাইয়ে নিয়ে যান তাঁর স্বামী আর্টসেল ব্যান্ডের গিটারিস্ট কাজী ফয়সাল আহমেদ। তিন সপ্তাহের বেশি সেখানেই ছিলেন তাঁরা। ১০ মার্চ চেন্নাইয়ের ওই হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার পথে দুর্ঘটনার শিকার হন আলিফ। ফয়সাল জানান, হুইলচেয়ারে করে হাসপাতাল থেকে বাইরে বের হয়ে গাড়িতে ওঠার আগে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে চোখে মারাত্মক আঘাত পান আলিফ।
চেন্নাইয়ে চিকিৎসার পর ১৮ মার্চ ঢাকায় ফিরেছেন আলিফ। এখন তাঁর চিকিৎসা চলছে ঢাকার বারিধারার একটি হাসপাতালে। সপ্তাহে তিন দিন ডায়ালাইসিস নিতে হয় তাঁকে। এ দিকে দুর্ঘটনার খবরটি ফয়সাল তাঁর ফেসবুকেও লিখেছেন। তিনি লেখেন, ‘ডায়ালাইসিস শেষ করে হাসপাতালের নিচে গেটের সামনে ট্যাক্সির জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আলিফ আমার পাশেই ছিল। হঠাৎ বিকট চিৎকার দিল সে। আমি ঘুরে দেখলাম, আলিফ হাতের ব্যাগ ছুড়ে ফেলে দিয়ে পড়ে যাচ্ছে। সেই মুহূর্তে খেয়াল করলাম, তার সামনের স্টিলের গ্রিলে সে মাথায় আঘাত পাবে। আমি আমার হাত দিয়ে সেটা ঠেকাতে পারলাম ঠিকই, কিন্তু সে পড়ে গেল রেলিংয়ের চিকন গ্রিলের ওপর। চোখ ও কপালে আঘাত পেল। এরপর থেকে ওর সেন্স নেই। আমার সামনে পড়ে আছে আর কাঁপছে। চোখ ওপরের দিকে, মুখ বাঁকা হয়ে আছে, হাতের কনুইতে ব্যথা পেয়েছে। তখন কিছুক্ষণের জন্য আমার মনে হয়েছিল, তার জান বের হয়ে গেছে শরীর থেকে। হাসপাতালের গার্ড চিৎকার করে স্ট্রেচারের ব্যবস্থা করে নিয়ে যান ইমার্জেন্সিতে।’
তারপরের ঘটনা ও আলিফের বর্তমান অবস্থা নিয়ে ফয়সাল আরও বলেন, ‘সেন্স ফিরে আসার পর সেই মুহূর্তে আলিফ কিছুই মনে করতে পারেনি, কখন আমার সঙ্গে নিচে গেছে, কখন পড়েছে। ডায়ালাইসিসের সময় ব্লাড থিনার দেওয়া হয়। তার জন্য ব্যথা পাওয়া জায়গাগুলোতে রক্ত এসে ফুলে গেছে। তারপর আলিফের তিন দিন কেটেছে আইসিইউতে। সিটিস্ক্যান, এমআরআই, ইইজি, ইকো ও ইসিজি টেস্ট করানো হয়েছে। চক্ষু বিশেষজ্ঞও দেখছেন। ইউরোলজিস্ট, নিউরোলজিস্ট ও নেফ্রোলজিস্ট সবাই একটা করে রিপোর্ট চেক করছেন আর জানাচ্ছেন পরবর্তী পদক্ষেপ। ডাক্তারদের পরিপূর্ণ চেষ্টায় আলিফ এখন সেই অবস্থা থেকে অনেকটাই ভালো। তবে এখনো অনেক জটিলতা আছে। আগামী তিন মাস ওষুধ খেয়ে আবার সব টেস্ট করে ডাক্তারকে দেখাতে যেতে হবে।’
ফয়সাল বলেন, ‘বর্তমানে আলিফের সপ্তাহে তিন দিন ডায়ালাইসিস, দুটি করে ইঞ্জেকশন আর ওষুধ চলছে।’ সংগীতশিল্পী ও টেলিভিশন উপস্থাপিকা আলিফ আলাউদ্দিন পলিসিস্টিক কিডনি রোগে আক্রান্ত। তিনি দেশের প্রখ্যাত সুরকার ও সংগীত পরিচালক আলাউদ্দিন আলী ও নজরুল সংগীতশিল্পী সালমা সুলতানার মেয়ে। মা সালমা সুলতানাও একই রোগে আক্রান্ত ছিলেন। ২০১৬ সালে তিনি মারা যান।