English

27 C
Dhaka
সোমবার, নভেম্বর ১৮, ২০২৪
- Advertisement -

সৃজনশীল শিল্প নির্দেশক ও চলচ্চিত্র পরিচালক, মহিউদ্দীন ফারুক-এর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

- Advertisements -

সৃজনশীল শিল্প নির্দেশক ও চলচ্চিত্র পরিচালক, মহিউদ্দীন ফারুক-এর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০২০ সালের ১৭ এপ্রিল, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। প্রয়াত এই গুণি ব্যক্তিত্বের প্রতি বিন্ম্র শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।

মহিউদ্দীন ফারুক ১৯৪২ সালের ১ মার্চ, মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার আড়ালিয়া গ্রামে, জন্মগ্রহণ করেন।
তাঁর বাবা আয়াত আলী সরকার ও মা দুধমেহের খানম। বাবা ছিলেন স্কুল শিক্ষক। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। নিজ গ্রামের আড়ালিয়া প্রাইমারি স্কুলে তাঁর প্রাথমিক লেখা-পড়া শুরু হয়। পরবর্তিতে বিভিন্ন স্কুল পেরিয়ে ঢাকার ‘মুসলিম হাই স্কুল’ থেকে ১৯৫৮ সালে, ম্যাট্রিক পাস করেন তিনি। ১৯৬০ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। এরপরে তৎকালীন ঢাকা আর্ট কলেজে ভর্তি হন, এখান থেকে বি.এফ.এ ডিগ্রি অর্জন করেন।

মহিউদ্দীন ফারুক বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই মঞ্চনাটকের দল ‘থিয়েটার’-এর সাথে যুক্ত হন। তিনি তখন যুক্ত ছিলেন প্রগতিশীল রাজনীতির সাথেও।

১৯৬৭ সালে তৎকালীন পাকিস্তান টেলিভিশনে যোগদান করেন মহিউদ্দীন ফারুক। দেশ স্বাধীন হবার পর বাংলাদেশ টেলিভিশনের দৃষ্টিনন্দন লোগোটি তিনিই তৈরি করেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনে, শিল্প নির্দেশক ও অনুষ্ঠান প্রযোজক হিসেবে, সুনামের সহিত অনেক দিন চাকুরী করেছেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনের শিল্প নির্দেশনা বিভাগ-এর পরিচালক হিসেবে ২০০০ সালে, বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

বাংলাদেশ টেলিভিশনে চাকুরি করলেও তিনি খ্যাতি অর্জন করেছেন, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের শিল্প নির্দেশনায়। এম খলিল পরিচালিত, ১৯৬৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘পুনম কি রাত’ ছবিতে শিল্প নির্দেশক হিসেবে প্রথমে চলচ্চিত্রে আসেন মহিউদ্দীন ফারুক। তিনি আরো যেসব চলচ্চিত্রে শিল্প নির্দেশক হিসেবে কাজ করেছন তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য- পায়ে চলার পথ, মোহনা, রুপালী সৈকতে, পালঙ্ক, মাসুদ রানা, লাঠিয়াল, বসুন্ধরা, সারেং বউ, ডুমুরের ফুল, মিন্টু আমার নাম, সূর্য দীঘল বাড়ী, প্রতিজ্ঞা, সোহাগ মিলন, নাজমা, অভিযান, নসীব, জনি, উসিলা, সৎভাই, চাঁপাডাঙার বউ, বাগদত্তা, পরিণীতা, মানসম্মান, চ্যালেঞ্জ, নিয়ত, সারেন্ডার, লালু মাস্তান, ভাইজান, বীরাঙ্গনা সখিনা, পিতা মাতা সন্তান, পদ্মা নদীর মাঝি, কালিয়া, শিল্পী, বিচার হবে, দুখাই, মেঘলা আকাশ, ইতিহাস, চার সতীনের ঘর, দূরত্ব, মনের মানুষ, অবুঝ বউ, প্রভৃতি।

১৯৮৯ সালে ‘বিরাজ বৌ’ নামে একটি চলচ্চিত্র পরিচালনাও করেন মহিউদ্দীন ফারুক।

মহিউদ্দীন ফারুক তাঁর কাজের স্বীকৃতিস্বরুপ, মোট সাতবার শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। তিনি যেসব চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন- বসুন্ধরা (১৯৭৭), ডুমুরের ফুল (১৯৭৮), পিতা মাতা সন্তান (১৯৯১), পদ্মা নদীর মাঝি (১৯৯৩), দুখাই (১৯৯৭), মেঘলা আকাশ (২০০১) এবং মনের মানুষ (২০১০)। এছাড়াও বাচসাস চলচ্চিত্র পুরস্কার, প্রযোজক সমিতি চলচ্চিত্র পুরস্কার’সহ নানা সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন তিনি।

মহিউদ্দীন ফারুক ব্যক্তিজীবনে, ১৯৬৫ সালে ফাতেমা আক্তার বানু’র সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের তিন সন্তান, এক মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছে।

প্রখ্যাত এই শিল্প নির্দেশক মহিউদ্দীন ফারুক, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ফিল্ম এন্ড মিডিয়া ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান ছিলেন । তিনি ছিলেন বহু গুণে গুণান্বিত, মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের স্মরণে বি.এফ.ডি.সি’তে পরিচালক সমিতির কার্যালয়ের সামনের ভাস্কর্যটির নকশা তাঁর করা। এছাড়াও আরো অনেক শিল্পকর্ম আছে এই গুণী চিত্রশিল্পীর।

মেধায়-মননে, জ্ঞানে, প্রজ্ঞায় একজন অনন্য ব্যক্তিত্ত্ব ছিলেন মহিউদ্দীন ফারুক। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের, শিল্প নির্দেশনায় এক দিকপাল শিল্পী ছিলেন তিনি। চলচ্চিত্রের মানুষদের কাছে বড় ভালো মানুষ হিসেবে সমাদৃত ছিলেন। একজন অসাধারণ চিত্রশিল্পী ও চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ত্ব হয়েও, অতি সাধারণভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতেন। চলচ্চিত্র তথা শিল্প-সংস্কৃতির অতি আপন মানুষ মহিউদ্দীন ফারুক, অনন্তলোকে চিরশান্তিতে থাকুন- এই আমাদের প্রার্থণা।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন