এ কে আজাদ: আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম। অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক, কাহিনীকার, চিত্রনাট্যকার, সংলাপ লেখক, টেলিভিশন অনুষ্ঠান প্রযোজক ও নাট্যকার। অত্যান্ত মেধাবী প্রতিভাবান একজন গুণী মানুষ ছিলেন আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম। ব্যক্তিজীবনে তিনি ছিলেন সহজ- সরল, সদালাপী, হাস্যোজ্জ্বল এবং বন্ধুবৎসল। আমাদের শিল্প-সংস্কৃতিভূবনের অতি পরিচিত ও আপন মানুষটি মাত্র ৪৬ বছর বয়সে পরপারে চলে যান।
সৃজনশীল নাট্যনির্মাতা ও চিত্রপরিচালক আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম-এর মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ১৯৮২ সালের ১৩ ডিসেম্বর, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৪৬ বছর। প্রয়াত এই গুণী মানুষটির স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই।
আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম ১৯৩৬ সালের ৪ এপ্রিল, কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানার সিদ্ধেশ্বরী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
কলেজ জীবন থেকেই মঞ্চনাটকের সাথে জড়িত হন তিনি। মঞ্চ থেকেই চলচ্চিত্রে আসেন আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম। ১৯৬২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত, জহির রায়হান পরিচালিত ‘কখনো আসেনি’ ছবিতে, ইউসুফ ইমাম নামে প্রথম অভিনয় করেন । পরবর্তিতে আরো কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেছেন। তিনি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখালেখিও করতেন সেই সময়ে।
১৯৬৭ সালে তদানীন্তন ঢাকা টেলিভিশনে অনুষ্ঠান প্রযোজক হিসেবে যোগদেন আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম। টেলিভিশনে তিনি বৈচিত্রময় নানা অনূষ্ঠান ও নাটক প্রযোজনা করতেন। পাশাপাশি নাটক রচনা ও অভিনয়ও করতেন। টেলিভিশন কর্মজীবনে তিনি সৃজনশীল অনূষ্ঠান ও নাট্যনির্মাতা হিসেবে কৃতিত্বের পরিচয় দেন। একজন স্বনামধন্য নির্মাতা হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
কৌতুকপ্রিয় মানুষ হিসেবে পরিচিত আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম প্রযোজনা করেছেন বেশ কয়েকটি স্মরণীয় কমেডি টিভি সিরিজ, যারমধ্যে- ত্রিরত্ন, বুলেট-টোটা ও ছানা মাখন বিশেষভাবে উল্লখযোগ্য।
ষ্টেশনের ডাকবাবু, আসা যাওয়ার পালা, করিমন ছমিরন এবং মারিয়া আমার মারিয়া’সহ প্রায় শতাধিক টিভিনাটক প্রযোজনা করেছেন তিনি।
টেলিভিশনে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও পরিচালনাতেও তিনি কৃতিত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন । তাঁর প্রযোজিত ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘সাতরং’ তখনকার সময়ে দর্শক কর্তৃক জনপ্রিয় ও সমাদৃত হয়েছে।
লেখক হিসেবে আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম-এর দু’টি নাট্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে, একটি ‘এপিঠ ওপিঠ’ অপরটি ‘বাংকার’ নামে।
একসময় চলচ্চিত্র পরিচালনায়ও আসেন আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম। পরিচালক হিসেবে তাঁর নাম ছিল ‘ইউসুফ জহির’। তাঁর প্রথম পরিচালিত চলচ্চিত্র মুক্তিপায় ১৯৭৩ সালে, ছবির নাম ‘ইয়ে করে বিয়ে’। কমেডি ধাঁচের চমৎকার একটি ছবি ছিল এটি। এই ছবির মাধ্যমেই সিনেমাজগতে আসেন নায়ক বুলবুল আহমেদ। তাঁর পরিচালনার দ্বিতীয় ছবি ‘অচেনা অতিথি’ মুক্তিপায় ১৯৭৮ সালে।
মাত্র এই দুইটি চলচ্চিত্রই নির্মাণ করেছেন তিনি। এই ছবি দু’টির মাধ্যমে, ব্যাতিক্রমধর্মী ও গুণী চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে তিনি তাঁর পরিচয় দিয়েছেন।
আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম নিজের পরিচালিত ছবি ছাড়াও, কয়েকটি ছবির কাহিনী-চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন।
বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতির অকৃতিম বন্ধু, অকাল প্রয়াত গুণী মানুষ আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম স্মৃতিতে অম্লান ।