অসংখ্য জনপ্রিয় শ্রুতিমধুর গানের সুরকার সুবল দাস-এর আজ ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ আগস্ট, চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভারতে, মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। প্রয়াত এই গুণি মানুষটির স্মৃতির প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
তাঁর আত্মার চিরশান্তি কামনা করি।
সুরকার-সঙ্গীত পরিচালক সুবল দাস( সুকুমার চন্দ্র দাস) ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ ডিসেম্বর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়, জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম রশিকলাল দাস, মা কামিনী দাস।
ছোটবেলা থেকেই তাঁর সঙ্গীত ও ফুটবল খেলার প্রতি প্রবল ঝোঁক ছিল।
তিনি একসময় প্রথমবিভাগে ফুটবল খেলেছেন। ঢাকার আজাদ স্পোর্টিং ক্লাবের গোলকিপার ছিলেন সুবল দাস।
সঙ্গীত ও বাদ্যযন্ত্রের প্রতি আগ্রহ থাকায় পরিবারের সম্মতিতে সুবল দাস, সেতার শিখেন ওস্তাদ খাদেম হোসেন খান এবং ওস্তাদ আয়াত আলী খান এর কাছ থেকে।
সঙ্গীতে পারদর্শিতা ঝালাই করতে তিনি, বন্ধুদের করা মঞ্চনাটকে সঙ্গীত পরিচালনা শুরু করেন। সঙ্গীতের প্রতি বড় বেশি আগ্রহ থাকায় একসময় ফুটবল খেলা ছেড়ে দিয়ে আত্মনিয়োগ করেন শুধু সঙ্গীতেই।
১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিপ্রাপ্ত ফতেহ লোহানী পরিচালিত ‘আকাশ আর মাটি’ ছবির, সঙ্গীত পরিচালনার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আসেন সুবল দাস ।
১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা রেডিওতে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন আর ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে টেলিভিশনে সুরকার হিসেবে যোগ দেন সুবল দাস ।
সুবল দাস সুরারোপিত ও সঙ্গীত পরিচালিত উল্লােখয়োগ্য ছবিসমূহের মধ্যে- কাজল, ইন্দন, সাতরং, আলিবাবা, জুলেখা, পিয়াসা, প্রীত না জানে রীত, কংগন, স্বর্ণকমল, ভানুমতি, স্বরলিপি, তানসেন, দর্পচূর্ণ, এখানে আকাশ নীল, দুরন্ত দুর্বার, অনির্বাণ, চাবুক, মামা ভাগ্নে, অনেক দিন আগে, উৎস্বর্গ, অনেক প্রেম অনেক জ্বালা, ডাক পিয়ন, আলো তুমি আলেয়া, নকল মানুষ, উপহার, হাসি কান্না, যোগ বিয়োগ, গৃহলক্ষ্মী, বানাজারান, হারানো মানিক, লালুভুলু, ঝুমুর, শীষনাগ, অচেনা অতিথি, এরাও মানুষ, রক্তশপথ, উজ্জল সূর্যের নীচে, রাজমহল, বুলবুল-এ বাগদাদ, শীষনাগ, মধুমতি, শহর থেকে দূরে, ওয়াদা, আলিফ লায়লা, রাজকন্যা, রাজনন্দিনী, আখেরী নিশান, কলংকিনী, গাঁয়ের ছেলে, দোস্তী, অনুরাগ, ভালো মানুষ, পুত্রবধূ, ভাঙ্গাগড়া, পদ্মাবতী, সওদাগর, চিৎকার, নরম গরম, রাজসিংহাসন, আবেহায়াত, গলি থেকে রাজপথ, শাহীচোর, তিন বাহাদুর, হাসান তারেক, জোস, জালিম, সম্রাট, আন্দাজ, মা ও ছেলে, মায়ের দাবী, বাহাদুর মেয়ে, তালাচাবি, শিরি ফরহাদ, তালুকদার, খামোশ, বিষকন্যার প্রেম, সোনার সংসার, সুলতানা ডাকু, অগ্নিকন্যা, রঙ্গীন অরুণ বরুণ কিরণমালা, পয়সা পয়সা, গোলমাল, রাঙাভাবী, ববি, প্রায়শ্চিত, অন্ধ বিশ্বাস, গরীবের বউ, জিজ্ঞাসা, লটারী, টাকার অহংকার, অবুঝ সন্তান, আঞ্জুমান, বাজীগর, লাটসাহেব, অন্যতম।
সুবল দাস তিনটি বিখ্যাত ছবির শুধু ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক করেছেন। ছবি তিনটি হলো- অবুঝ মন, প্রতিশোধ এবং অশ্রু দিয়ে লেখা। তিনি ‘ফেরারী’ নামে একটি ছবিও প্রযোজনা করেছেন।
সুবল দাস-এর সুরকরা কালজয়ী জনপ্রিয় কিছু গান- তুমি যে আমার কবিতা…,
ও মেয়ের নাম দিব কী ভাবি শুধু তাই..,
এই পৃথিবীর পান্থশালায় গাইতে এসে গান.., আমি সাতসাগর পাড়ি দিয়ে..,
আমি মানুষের মতো বাঁচতে চেয়েছি…,
যদি বউ সাজো গো আরো সুন্দর লাগবে গো.., সামাল সামাল সামাল সাথী ধীরে ধীরে চলরে…, সন্ধ্যারও ছায়া নামে এলোমেলো হাওয়ায়…, জীবনও আধারে, পেয়েছি তোমারে…, এই বৃষ্টি ভেজা রাতে চলে যেও না…, গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে, কি হবে…, শিল্পী আমি শিল্পী, তোমাদেরই গান শোনাবো…, আমরা তো বানাজারান দেখাবো নাচ গান…,
যখন থামবে কোলাহল নিঝুম চারিদিক…,
পান খাইয়া ঠোঁট লাল করিলাম, বন্ধুর দেখা পাইলাম না.., চলে যায় যদি কেউ বাঁধন ছিড়েঁ কাঁদিস কেন মন.., বন্ধু তুমি শত্রু তুমি, তুমি আমার সাধনা…,
ওরে ও বাঁশিওয়ালা…, ভালোবাসার স্বপ্নে ঘেরা এইতো আমার ঘর…, আমার নাম সুমন, এমন একটা মন…, সজনী গো ভালোবেসে এতো জ্বালা কেনো বলো না…,
তোমাদের সুখের এই নীড়ে…,
দিন দুপুরে মনের ঘরে…, কোথায় যাব বন্ধু বলো, কোথায় আমার ঘর…,
দোহাই লাগে সুজন ক্ষমা করে দাও আমায়…, তুমি জন্মভূমি জননী…,
খাঁচা ভেঙে পাখি হবে অচেনা…,
রূপনগরের রাজা, তুমি আজ পাবে সাজা..,
পদ্মাবতী বেদেনী আমার প্রাণ সজনী…,
মনের এই ছোট্ট ঘরে, আগুন লেগেছে হায়রে…, সজনী রজনী বৃথা চলে যায়…,
ঘূর্ণি চাকায় ঘুরছে জীবন এই শহরে…,
একি বাঁধনে বলো জড়ালে আমায়…,
আজকের এই চাঁদের আলো লাগে কত ভালো…, তোমারই উপহার আমি চিরদিন…, অনেক প্রেমে রাঙানো এ মন…, চন্দ্র তারায় মিছে খুঁজেছি তোমায়…, কত যে ভালো বাসি তোমারে…, লাইলী আয় আয় আয় আমি তোর মজনু দেওয়ানা.., গুরু উপায় বলো না, জনম দুখি কপাল পোড়া গুরু আমি একজনা…, ইত্যাদি।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন