নাসিম রুমি: দেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী সুবীর নন্দী। মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) তার জন্মদিন। বিশেষ এই দিনে শ্রদ্ধাভরে তাকে স্মরণ করছেন তার ভক্ত ও সহকর্মীরা।
চার দশকের বেশি সময়ে অসংখ্য কালজয়ী গান উপহার দিয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করে রেখেছিলেন প্রয়াত এই গায়ক। সুবীর নন্দী কিডনি ও হার্টের সমস্যায় ভুগছিলেন। ২০১৯ সালের ৭ মে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান তিনি।
১৯৫৩ সালের ১৯ নভেম্বর হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং থানার নন্দীপাড়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন সুবীর নন্দী। তার বাবা সুধাংশু নন্দী ছিলেন তেলিয়াপাড়া টি-এস্টেটের চিকিৎসক। তিনিও খুব সংগীতপ্রেমী মানুষ ছিলেন। তার মা পুতুল রানীও চমৎকার গান করতেন। মূলত, মায়ের কাছেই সংগীতের প্রাথমিক পাঠ নেন সুবীর নন্দী।
বাবার চাকরির সুবাদে চা বাগানেই কেটেছে এই গায়কের শৈশব। গানের পাশপাশি একাডেমিক শিক্ষায়ও বেশ মেধাবী ছিলেন তিনি। ছাত্রজীবনের অধিকাংশ সময়ই হবিগঞ্জ শহরে কেটেছে তার। সেখানে তাদের একটি বাড়ি ছিল। হবিগঞ্জ সরকারি হাইস্কুল থেকে মেট্রিক পাস করেন তিনি। তারপর ভর্তি হন হবিগঞ্জ বৃন্দাবন কলেজে। মুক্তিযুদ্ধের সময় এইচএসসির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন সুবীর নন্দী।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে শতাধিক চলচ্চিত্রে গান গেয়েছেন সুবীর নন্দী। বেতারেও অসংখ্য জনপ্রিয় গান গেয়েছেন। ২৪টির মতো একক অ্যালবামও প্রকাশ পেয়েছে তার। গান গাওয়ার পাশাপাশি বেশ কিছু গানের সুরও করেছেন তিনি।
সুবীর নন্দীর গাওয়া জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে, ‘আমি বৃষ্টির কাছ থেকে কাঁদতে শিখেছি,’ ‘কত যে তোমাকে বেসেছি ভালো’, ‘বন্ধু হতে চেয়ে তোমার’, ‘প্রেম বলে কিছু নেই’, ‘পাখিরে তুই দূরে থাকলে’, ‘আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়’, ‘নেশার লাটিম ঝিম ধরেছে’, ‘এক যে ছিল সোনার কন্যা’, ‘আশা ছিল মনে মনে’, ‘তুমি সুতোয় বেঁধেছ শাপলার ফুল’ প্রভৃতি।
১৯৮৪ সালে ‘মহানায়ক’, ১৯৮৬ সালে ‘শুভদা’, ১৯৯৯ সালে ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ এবং সর্বশেষ ‘মেঘের পরে মেঘ’ সিনেমায় গান গেয়ে ২০০৪ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান সুবীর নন্দী। এ ছাড়াও দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকসহ দেশে-বিদেশে নানা সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন সুবীর নন্দী।