নাসিম রুমি: সুচিত্রা সেন ভারতের বাংলা সিনেমা জগতের মহানায়িকা। শেষ জীবন কেটেছে স্বেচ্ছা অন্তরালে। একাকী। ভালোবাসতেন কন্যা মুনমুন সেনকে। কোনোকিছুর অভাব বুঝতে দেননি কন্যাকে। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়িয়েছেন। অবাধ স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। স্বামীর মৃত্যুর পর মুনমুনকে বুঝতে দেননি বাবা’র অভাব।
তার একমাত্র ইচ্ছে ছিল মুনমুনের স্বামী যেন ভাল হয়। অনেক খুঁজে পেতে একমাত্র সন্তান কন্যা মুনমুনের দেব বর্মা রাজপরিবারে বিয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন মহানায়িকা সুচিত্রা সেন। সেই বিয়েতে আবার তদারকি করেছিলেন মহানায়ক উত্তমকুমার। মুনমুনের মাসিশাশুড়ি রাজমাতা গায়েত্রীদেবীও পুরোদস্তুর পাশে ছিলেন সুচিত্রার। মায়ের সঙ্গে শর্ত ছিল মুনমুনের–বিয়ের পর আর অভিনয় করবেন না তিনি। সব ছেড়ে পুরোপুরিভাবে মন বসাবেন সংসারেই।
কিন্তু মায়ের কাছে দেওয়া কথা রাখেননি মুনমুন। অনেকটা স্বামী ভরত দেব বর্মার উৎসাহেই মুনমুন ফিরেছিলেন তাঁর অভিনয় পেশায়। সেই খবর সুচিত্রার কানে যেতেই ভয়নাক চটে গিয়েছিলেন তিনি। একটা গোটা বছর কন্যার সঙ্গে কোনও কথাই বলতেন না তিনি। মুনমুন টিভিনাইনের একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, “মা আমার উপর এত রাগ করেছিলেন যে, একটা গোটা বছর কোনও কথাই বলেননি আমার সঙ্গে। আমি মায়ের কাছে যেতাম দুই মেয়ে রিয়া-রাইমাকে নিয়ে। ওদের সঙ্গে মা কথা বলতেন। কিন্তু আমি এক কোণে বসে থাকতাম। আমার দিকে ফিরেও তাকাতেন না। ”
আসলে সুচিত্রা নিজেও কোনওদিনও অভিনয় করতে চাননি। স্ত্রীকে জোর করেই সিনেমায় অভিনয় করতে পাঠিয়েছিলেন তাঁর স্বামী দিবানাথ সেন। ফলে মুনমুনও সংসার ছেড়ে, কন্যাদের ছেড়ে অভিনয় নিয়ে মেতে থাকুক তা চাননি সুচিত্রা। কিন্তু মুনমুনের স্বামী উদার মনের মানুষ। স্ত্রীকে কোনওকিছুতেই মানা করেননি তিনি। মুনমুন তাঁর স্বামীকে ‘হাবি’ বলে ডাকেন।
বলেছিলেন, “হাবি বরাবরই খুব সাপোর্টিভ। ও আমাকে খুবই এনকারেজ করত। মেয়েদের জন্মের পর আমাকে বলেছিল, তুমি ১৫ দিন কাজ করো, ১৫ দিন ওদের সঙ্গে থাকো। আমি তাই-ই করতাম…”। মুন মুন সেন বলেন “কিন্তু পরবর্তী সময়ে আমাদের সংসার ভেঙে যায়। এতে আরও কষ্ট পান মা। এরপর আবার কিছুদিনের জন্যে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এখন আফসোস হয়। তার কথামতো চলে তাকে সঙ্গ দেওয়াটাই উচিৎ ছিল। ভুল করেছি”।