English

24 C
Dhaka
শনিবার, নভেম্বর ১৬, ২০২৪
- Advertisement -

সাধন রায়কে নিয়ে দুর্লভ স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র গোধূলি ফিল্ম আর্কাইভে সংগ্রহ

- Advertisements -

আশির দশকের শেষের দিকে আমাদের দেশের খ্যতিমান আলোকচ্চিত্র শিল্পী সাধন রায়কে নিয়ে একমাত্র প্রত্যক্ষ বায়োপিক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র গোধূলি নির্মিত হয। সাধান রায়ের জীবন জীবিকার সংগ্রাম নিয়ে নির্মিত ৩২ মিনিট ১৫ সেকেন্ডের দুর্লভ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মান করে পি এ কাজল । ১৯৯১ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত স্বল্পদৈর্ঘ্য গোধূলি ছবিটি ১৬ মে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের ফিল্ম অফিসার ফখরুল আলম সংগ্রহ করে পরিচালক পি এ কাজলের ভাগ্নি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা পিয়াঙ্কা আচার্যের কাছ থেকে।

বিপ্লবী সাধন রায়ের সাধন-ভজন কতটা সিদ্ধ হয়েছে তার জীবদ্দশায় তা কেবলই ইতিহাসই বলবে । বিপ্লবী মাষ্টার দা সূর্যসেনের সহযোগী হিসেবে কৈশোর বয়স থেকে চট্টগ্রামে তার সংগ্রামী চেতনার অদ্ভুদয় ঘটে। ১৯৩০সালের ১৮এপ্রিল সূর্যসেনের নেতৃত্বে অস্ত্রাগার লুণ্টন, টেলিফোন অফিস ধ্বংস, স্বশস্ত্র পুলিশ লাইন দখল, বিট্রিশ প্রশাসন অচল করা, বিট্রিশ সৈন্যদের সম্মুখযুদ্ধে ৭০/৮০ জন সৈন্যেকে আহত ও নিহত হওয়ায় বিট্রিশ পুলিশ কর্তৃক তাকে গ্রেফতার হন।

চাচা ক্ষিরোদ চন্দ্র চট্টগ্রামের এম.এল.এ থাকায় জামিনে ছাড়িয়ে এনে তাকে কলকাতায় পাঠিয়ে দেন। সেখানে বিশ টাকা বেতনে ফিল্ম করপোরেশন অব ইন্ডিয়ায় পরিচালক রনজিৎ সেনের আশা ছবির মাধ্যমে বিপ্লবী সাধন রায়ের ক্যামেরায় প্রথম হাতে খড়ি। ১৯৪০ সালে প্রমথেশ বড়ুয়ার সহকারী ক্যামেরাম্যান হিসেবে শাপমুক্তি, শেষ উত্তর, জবাব,মায়ের প্রাণ, উত্তরায়ণ সুশলি মজুমদার,প্রেমেন্দ্র মিত্র,অগ্রদূত সহ উল্লেখযোগ্য পরিচালকের ছবিতে কাজ করেন।

প্রমথেশ বড়ুয়ার ইউনিটটির বাইরেও সুশীল মজুমদারের রিক্তা,তটিনীর বিচার,প্রতিশোধ,, হাসপাতাল,ঋত্বিক কুমার ঘটকের অযান্ত্রিক ছবির একক ক্যামেরাম্যান ও কোনটির সহকারী ক্যামেরাম্যান হিসেবে কাজ করেন। ১৯৪৭ সালে মে মাসে কলকাতায় বকুল রায়কে বিয়ে করেন। ১৯৪৯ সালের ৭ নভেম্বর প্রথম কন্যা শুক্লা ও ১৯৫২ সালের ১৮ মে ছোট মেয়ের কৃষ্ঞার জন্ম হয়। ১৯৫২ সালে ঢাকায় কো-অপারিটিভ ফিল্ম মেকার্সের সংগঠক সারোয়ার সাহেবের অনুরোধে আপ্যায়ন নামে একটি প্রামাণ্যচিত্রের কাজে ঢাকায় এসে কাজ না হওয়ায় কলকাতায় ফিরে যান। ১৯৫৭ সালে ইপিএফডিসি প্রতিষ্ঠা হলে পুনরায় ঢাকা এসে লন্ডনের ফটোগ্রাফার ওয়াল্টার ল্যাসালির সহযোগী ফটোগ্রাফার হিসেবে এ.জে কারদারের জাগো হুয়া সাভেরা ছবির কাজ শুরু করেন। এরপর যে নদী মরু পথে,তোমার আমার,বিষকন্যা পঁয়সে,গোধূলীর প্রেম,সাতরং,পুনম কি রাত, নায়িকা,ইয়ে ভি এক কাহিনী,জলছবি,রাজা এলা শহরে,অপরাজেয়,জিনা বি মুশকিল,জংলী ফুল, পরশমনি, অপরিচিতা, আলোর পিপাশা, অন্তরঙ্গ সহ বেশ কিছ ছবিতে মুক্তিযুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত কাজ করেন।

স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আগরতলায় জহির রায়হানের সাথে যোগাযোগ হয়। বড় মেয়ের বাড়িতে থেকে জহির রায়হানের সাথে ছবি তোলার কাজে লেগে যান। স্বাধীনতার পর দেশে ফিরে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবি রক্তাক্ত বাংলার কাজ করেন। তারপর এতিম, নদের চাঁদ,কে তুমি, যন্তর মন্তর,দুর থেকে কাছে,পুরস্কার,মীমাংসা,ছুটির ঘন্টা,উজান ভাটি,বসুন্ধরা,তরুলতা,সাহেব,জীবন এলো ফিরে, শুভরাত্রি ,আমি কার ,চন্দ্রনাথ,শুভদা, রঙ্গিন রূপবানসহ প্রায় শতাধিক ছবি।

প্রিয় বন্ধু ফজলে হোসেনের সাথে হোসেন এন্ড রায় নামে যুগ্মভাবে কাজ করেন দি রেইন, আদালত, বেদ্বীন,হাসি,রাজা বাদশা, স্মৃতি তুমি বেদনা, কংকর অভিযোগ ,ডার্লিং বড় মা , লাল মেম সাহেব ছবিতে কাজ করেন । নিজের কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৮৬ সালে শুভদা ছবি শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার,বাচসাস,পরিচালক সমিতি,সিকোয়েন্স,হীরালাল সেন স্মৃতি সংসদ ,সিডাব প্রদত্ত পুরস্কার পান।জীবনের শেষ দিকে এসে একাকী মানবেতর জীবন কাটাতেন শাখারী বাজারের ভাড়া করা একটি বাড়িতে। ১৯৮৮ সালের জানুয়ারি মাসে সাধন রায় সবাইকে ছেড়ে পরলোকে চলে যায়। পরিচালক চাষী নজরুল ইসলামকে পুত্র সমতুল্য স্নেহ করতেন বলে সাধন রায়ের মৃত্যুর পর তার ইচ্ছানুযায়ী চাষী নজরুল ইসলাম অন্তোষ্টিক্রিয়া সম্পাদন করেন।

সাধান রায়ের দেহবসান হলেও এ দেশের চলচ্চিত্রের মানুষ তাকে মনে রাখবে কালের পর কাল,শতাব্দীর পর শতাব্দী। সাধন রায়কে নিয়ে ফিল্ম আর্কাইভে সংগ্রহ সংরক্ষিত গোধূলী স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটি চলচ্চিত্র কর্মিদের জন্য অনুপ্রেরনা হয়ে থাকবে।

স্বল্পদৈর্ঘ্যর দুর্লভ গোধূলী চলচ্চিত্রটিতে নাম ভূমিকায় কাজ করেছেন সাধনা রায়,কেশব চট্টোপাধ্যায় ,চাষী নজরুল ইসলাম,রওশন জামিল সহ প্রয়াত অনেক শিল্পী কলাকুশলী। আমাদের দেশে প্রত্যক্ষভাবে জীবদ্দশায় কোন খ্যাতিমান চলচ্চিত্র গ্রাহককে নিয়ে নির্মিত একমাত্র ১৬ মি.মি ফিল্মে তৈরি করা ছবি গোধূলী।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন