সাংবাদিক, চিত্রনাট্যকার, সংলাপ রচয়িতা, গীতিকার ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত চিত্রপরিচালক আখতারুজ্জামান-এর দশম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০১১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। প্রয়াত এই গুণি মানুষটির স্মৃতির প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
আখতারুজ্জামান ১৯৪৬ সালের ১০ ডিসেম্বর, নরংসদীর উত্তর মির্জানগরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় এমএ পাস করেন।
পূনার অধ্যাপক সতীশ বাহাদুর পরিচালিত, চলচ্চিত্র সমীক্ষা কোর্স ও আলমগীর কবির প্রতিষ্ঠিত ঢাকা ফিল্ম ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন চলচ্চিত্র প্রশিক্ষণ কোর্স-এ অংশ নেন তিনি।
আখতারুজ্জামান ১৯৬৬ সালে ‘চিত্রাকাশ’ নামে একটি পত্রিকায় চিত্রসাংবাদিক হিসেবে যোগ দেন। পরে তিনি আরো যেসব পত্রিকায় কাজ করেন- দি পিপলস, দি নেশন, দৈনিক সংবাদ ও সাপ্তাহিক চিত্রালী। সর্বশেষ তিনি ‘দৈনিক বাংলার বানী’র বিনোদন বিভাগের প্রধান ও ‘সাপ্তাহিক সিনেমা’র নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন।
১৯৭৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত, শাহজান চৌধুরী পরিচালিত ‘পিঞ্জর’ ছবিতে গান লেখার মাধ্যমে আখতারুজ্জামান চলচ্চিত্রের সাথে যুক্ত হন। পরবর্তিতে তিনি ‘রক্তশপথ’ ছবিতে সংলাপ ও ‘ফকির মজনু শাহ্’ ছবিতে চিত্রনাট্য-সংলাপ লিখেন।
একসময় তিনি চলচ্চিত্র পরিচালনায় আসেন।
আখতারুজ্জামান পরিচালিত ছবিসমূহ- ফেরারী বসন্ত (কাহিনী-সংলাপ-চিত্রনাট্য-গান’সহ), প্রিন্সেস টিনা খান (কাহিনী-সংলাপ-চিত্রনাট্য-গান’সহ), একাই একশো, পোকামাকড়ের ঘরবসতি (চিত্রনাট্য-গান’সহ), ও সূচনা রেখার দিকে।
তাঁর নির্মিত সর্বশেষ ছবি সরকারী অনুদানে নির্মিত ‘সূচনা রেখার দিকে’, এই ছবিটি তিনি মুক্তি দিয়ে যেতে পারেননি ।
তিনি ছোট পর্দায়ও কাজ করেছেন। টেলিভিশনের জন্য কিছু ভালো মানের নাটক ও টেলিফিল্ম নির্মান করেছিলেন।
আখতারুজ্জামান তাঁর কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও বাচসাস চলচ্চিত্র পুরস্কার’সহ আরো অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা। ১৯৮৩ সালে ‘ফেরারী বসন্ত’ ছবির জন্য- শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার-গীতিকার ও পরিচালক হিসেবে বাচসাস চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।
১৯৮৪ সালেও বাচসাস চলচ্চিত্র পুরস্কার পান-‘প্রিন্সেস টিনা খান’ ছবিতে শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক হিসেবে।
১৯৯৬ সালে ‘পোকামাকড়ের ঘরবসতি’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে, পুরস্কৃত হন।
আখতারুজ্জামান এক সময় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে, চলচ্চিত্র ও গণমাধ্যম বিভাগের একজন শিক্ষক ছিলেন । মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি চলচ্চিত্র শিক্ষকতায় নিয়োজিত ছিলেন।
মেধাবী সাংবাদিক, সৃজনশীল চলচ্চিত্রকার আখতারুজ্জামান। যিনি বিনোদন সাংবাদিকতার উৎকর্ষতায় রেখেছেন অপরিসীম অনন্য ভূমিকা। সৃজনশীল চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবেও রেখেছেন প্রতিভার স্বাক্ষর। তাঁর নির্মিত সবকটি চলচ্চিত্রই হয়েছে আলোচিত, সমাদৃত ও প্রশংসিত। ‘পোঁকা মাকড়ের ঘরবসতি’র মতো চলচ্চিত্র নির্মাণ করে তিনি, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রশংসিত ও সম্মানিত হয়েছেন।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সাংবাদিকতায় ও বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পে তাঁর অনন্য অবদান, অবশ্য অবশ্যই স্মরণযোগ্য।