নাসিম রুমি: পাহাড় চূড়া, দীঘল উপত্যকা ও এক পশলা হৃদের প্রাণবন্ত ঐকতানের অন্য নাম কাশ্মীর। এমন নয়নাভিরাম দৃশ্য আর দুটি নেই বললে খুব একটা ভুল বলা হবে না। সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও উষ্ণ আতিথেয়তার সেই ভূস্বর্গে মঙ্গলবার নেমে এসেছিল দুঃস্বপ্ন। পেহেলগামে সন্ত্রাসীদের গুলিতে ঝাঁজরা হয়েছেন ২৮ নিরপরাধ পর্যটক। এ ঘটনায় শোকে কাতর গোটা ভারত।
এই রক্তাক্ত সংবাদে এক আবেগজর্জরিত শোকবার্তা দিয়েছেন বলিউড অভিনেতা শাহরুখ খান। নিজের ইনস্টাগ্রামে দেওয়া এক স্টোরিতে জানান, পেহেলগামের নৃশংসতা তাকে ক্ষুব্ধ করেছে। একই সঙ্গে যন্ত্রণাও পাচ্ছেন। সেই দুঃখ, সেই হতাশা প্রকাশ করার ভাষা নেই তার। তিনি শুধু সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করছেন। আগামীতে যেন এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, প্রার্থনা তার। যারা অসময়ে চলে গেলেন, তাদের পরিবারকেও সান্ত্বনা জানিয়েছেন তিনি।
কাশ্মীর নিয়ে এক গভীর ক্ষত রয়েছে শাহরুখের মনে। এই ক্ষত ৪৫ বছর ধরে গোপনে লালন করেছেন বলিউড কিং। সেই ক্ষত এক এক না-পূরণ হওয়া প্রতিশ্রুতির, এক অসমাপ্ত সফরের।
১৯৮১ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে বাবাকে হারান শাহরুখ। মৃত্যুর আগে বাবা বলেছিলেন শাহরুখের ইস্তাম্বুল, প্যারিস আর কাশ্মীর অবশ্যই দেখা উচিৎ। প্রথম দুটোতে একা যেতে পারবেন শাহরুখ, কিন্তু কাশ্মীরে শাহরুখের বাবা তাকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কারণ কাশ্মীর ছিল তাদের রক্তে-শাহরুখের দাদি জন্মসূত্রে কাশ্মীরি, তার বাবার শৈশব কেটেছে ওই উপত্যকার বুকেই।
কিন্তু বাবার সঙ্গে সেই সফর আর হয়নি। এরপর বন্ধুরা ডাকল, পরিবার গেল ছুটিতে, পরিচালক ডাকলেন শুটিংয়ে—কিন্তু শাহরুখ যাননি। গিয়েছেন ইস্তাম্বুলে, প্যারিসে, কিন্তু কাশ্মীর ছিল না। ছিল শুধু অপেক্ষা আর অভাব।
চার দশক পর, ২০১২ সালে, সেই শূন্যতা পূরণ করলেন আরেকজন ‘বাবা’—প্রখ্যাত নির্মাতা যশ চোপড়া। শাহরুখ বাবা হিসেবেই শ্রদ্ধা করেন তাকে। ‘জাব তাক হ্যায় জান’ ছবির শুটিংয়ের জন্য যশ বলেছিলেন, ‘চল, আমি তোমাকে কাশ্মীর দেখাই।’ সেবার শাহরুখ আর না বলতে পারেননি।
সেই প্রথম পা রাখলেন কাশ্মীরে-কিন্তু মনে হচ্ছিল, যশ চোপড়ার ছায়ায় যেন বাবাই ফিরে এসেছেন, তাকেই কাশ্মীর দেখাচ্ছেন। সে অভিজ্ঞতা তিনি পরে একাধিক সাক্ষাৎকারে ভাগ করে নিয়েছেন।