নাসিম রুমি: শাহরুখ খান, অনেকের কাছেই এটা শুধু একটা নামই নয়, অনুভূতিও বটে। ভারতীয় তারকা হয়েও যার পরিচিতি বিশ্ব জুড়ে। আট থেকে আশি— সব বয়সীরাই যেন এই নামটাতে মুগ্ধ। ভক্তদের কাছে কখনো তিনি গড আবার কখনো আবেগ। তবে তিনিও কখনো তার ভক্তদের নিরাশ করেননি, ভালোবাসা দিয়েছেন দুই হাত ভরে।
কিছুদিন আগে শাহরুখের জন্মদিন উপলক্ষে তার ভক্তরা আয়োজন করেছিল ‘এসআরকে ডে’, যেটা প্রতিবছরই করা হয়। তবে এই বছরটা যেন একটু স্পেশাল ছিল। চলতি বছরে নায়ক পর্দায় ফিরেছেন রাজার বেশে, দিয়েছেন দু-দুটি ব্লকবাস্টার হিট, গড়েছেন রেকর্ড। আগামী মাসেই মুক্তি পেতে যাচ্ছে আরও এক নতুন সিনেমা ‘ডাঙ্কি’। ‘পাঠান’ ও ‘জওয়ান’-এর সাকসেস পার্টি এবং আসন্ন সিনেমা নিয়ে কথা বলতে জন্মদিনের দিনই ভক্তদের সামনে দেখা দেন শাহরুখ।
দেখা বললে ভুল হবে, আয়োজন করেন ফ্যান মিটের এবং সেখানে ঘণ্টাব্যাপী আড্ডা দেন তাদের সঙ্গে। এই আয়োজনে শুধু একনজর শাহরুখকে দেখতে বিভিন্ন দেশ থেকে বান্দ্রায় উপস্থিত হন শতাধিক ভক্ত। তার মধ্যে ছিলেন তিন বাংলাদেশিও।
সেই তিনজনের একজন হলেন নোয়াখালীর রোমান খন্দকার, অন্য দুজন মিরপুরের ফারজানা হক ও একেএম সোলায়মান। শাহরুখ খানের ‘এসআরকে ইউনিভার্স’ ফ্যান গ্রুপ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে রয়েছে, তার মধ্যে বাংলাদেশেও রয়েছে একটি ব্রাঞ্চ, যেটির নাম ‘এসআরকে ইউনিভার্স বাংলাদেশ’। এই গ্রুপটির এডমিন ফাহিম আজিজের মাধ্যমে মুম্বাইয়ের বান্দ্রার বালগন্ধর্ভা রঙ মন্দির স্টুডিওতে অনুষ্ঠিত ‘এসআরকে ডে’-এর ইভেন্ট পাস পান তারা।
মুম্বাইয়ের জুহুতে অবস্থান করছেন জানিয়ে ফারজানা হক বলেন, আমি এবং আমার স্বামী দুজনেই শাহরুখের ভীষণ ভক্ত। যখন জওয়ান সিনেমা মুক্তি পায় সেটা ফার্স্ট ডে ফার্স্ট শো দেখার জন্য আমরা মুম্বাইতে চলে এসেছিলাম এবং সে সময়ে মান্নাত থেকে শাহরুখকে দেখার একটু সুযোগ হয়েছিল। সেখান থেকে ফিরে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম তার জন্মদিনে আমরা আবার আসব।
যেই ভাবা সেই কাজ। ফ্লাইট বুক করে ১ নভেম্বর চলে আসি। আমরা জানতে পেরেছিলাম যে, এসআরকে সবসময় বিশেষ ফ্যান মিট করে এবং ভক্তদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে, তাই ইভেন্ট পাসের জন্য বেশ কয়েকটি ফ্যান ক্লাবের সঙ্গে যোগাযোগ করছিলাম। সব শেষে ফাহিমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সে আমাদের ব্যবস্থা করে দেয়।
তিনি আরও বলেন, আমরা নিশ্চিত ছিলাম না, পাস পাব কী পাব না, তবে আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল আমরা দুপুর ১২টায় মান্নাতের সামনে দাঁড়াব এবং স্বপ্নের নায়কের জাদু দেখার সাক্ষী হবো। ২ নভেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টায় তিনি মান্নাতের সামনে আসেন, তাকে সরাসরি দেখার এটাই ছিল বাস্তব অভিজ্ঞতা। সব ভিড়ের মধ্যে শাহরুখ এতটাই জ্বলজ্বল করছিলেন যে, মনে হয় তিনি ভেতর থেকে জ্বলছেন। এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। তিনি সেখানে সর্বোচ্চ ১০ মিনিটের মতো ছিলেন এবং আমরা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুধু তাকে দেখছিলাম। এরপর সেদিন দুপুরে আমি, আমার স্বামী এবং রোমান পাস নিয়ে ভেন্যুতে গেলাম।
সেখানে সামনে থেকে শাহরুখকে দেখলেন এবং তার সঙ্গে কুশল বিনিময়ও করেন ফারজানা। সে মুহূর্তের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ইটস ওয়ান্স ইন অ্যা লাইফ টাইম এক্সপেরিয়েন্স। তার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করতে পারব, এটা কল্পনারও বাইরে ছিল। তিনি আমার পিঠ চাপড়ে দিলেন, হ্যান্ডশেক করলেন এবং কিছু কথা বললেন আমার সঙ্গে যেটা সারাজীবন আমার মুখে হাসি ধরে রাখবে। একজন সুপারস্টার হওয়া সত্ত্বেও তিনি আমাকে একজন মূল্যবান ব্যক্তির মতো অনুভব করিয়েছিলেন এবং আমি এটা চিরকাল লালন করব।
শাহরুখের সঙ্গে কী কথা হয়েছে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা যখন ছবি তুলতে গেলাম তখন তাকে জানালাম যে, আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। এটা শুনে তিনি বলেন, ‘লেটস টেইক অ্যা গুড পিকচার’ এবং এরপর তিনি আমার সঙ্গে হ্যান্ডশেক করলেন এবং ফেরার সময়ে এটাও বললেন, ‘মে গড ব্লেস ইউ বেটা, ট্রাভেল ব্যাক সেইফলি’।
পুরো আয়োজনটি ছিল ৪ ঘণ্টাব্যাপী। পুরোটা সময় শাহরুখ খান ভক্তদের সঙ্গে কাটিয়েছেন জানিয়ে রোমান খন্দকার বলেন, আমি পুরোটা সময় কাউন্ট করেছি। তিনি আমাদের সঙ্গে ছিলেন পুরো ৪ ঘণ্টা ১০ মিনিট। বেলা ৩টায় অনুষ্ঠান শুরু হয় এবং তিনি আসেন ৩টা ২০ মিনিটের দিকে। আমার জন্য পুরো মুহূর্তটা ছিল স্বপ্নের মতো। শাহরুখ খানকে সামনে থেকে দেখার একটা স্বপ্ন ছিল, অবশেষে সেটা পূরণ হলো। এ জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা। ফাহিম ভাইয়ের প্রতিও কৃতজ্ঞতা।
শাহরুখের সঙ্গে দেখা হলেও কথা বলার সুযোগ পাননি তিনি। রোমান বলেন, সিচুয়েশনের কারণে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে যাকে টেলিভিশনে, মোবাইলে দেখতাম তাকে প্রথমবার সামনে থেকে দেখতে পেরেছি এবং তিনি আমাদের জন্য পারফরম করেছেন, গল্প করেছেন, আড্ডা দিয়েছেন। তার কথা বলার স্টাইলই একদম আলাদা, সেন্স অব হিউমার অনেক ভালো এবং অনেক গুছিয়ে কথা বলে।
আড্ডা দেওয়া শেষে আমাদের সবার সঙ্গে কেক কাটেন এবং সবার সঙ্গে গ্রুপভিত্তিক ছবি তোলেন। যেহেতু চার শতাধিক সদস্য ছিল তাই গ্রুপে ভাগ হয়ে ছবি তোলা হয়েছে এবং এটা এবারই প্রথমবার হয়েছে। শাহরুখ নিজে চেয়েছেন সবার সঙ্গে ছবি তুলতে, যেটা আমাদের জন্য অনেক বড় পাওয়া। এই পুরো সময়টা আমার জীবনের সেরা স্মৃতি হয়ে থাকবে।
যেই ফ্যান গ্রুপের মাধ্যমে তারা শাহরুখের সঙ্গে দেখা করতে পেরেছেন সেই ‘এসআরকে ইউনিভার্স বাংলাদেশ’ গ্রুপের এডমিন ফাহিম আজিজ জানান, তিনি গ্রুপটি খুলেছিলেন ২০১৪ সালে। শাহরুখ খানকে নিয়ে বিভিন্ন রকম পোস্ট করতেন এবং তার সিনেমা নিয়ে লিখতেন। তবে গত বছরের শেষ দিকে এসে শাহরুখের ফ্যান গ্রুপ ‘এসআরকে ইউনিভার্স’-এর সঙ্গে যুক্ত হন এবং অফিশিয়ালি শাখা হিসেবে নিযুক্ত হন।