এ কে আজাদ: শহীদুল ইসলাম খোকন। চলচ্চিত্র পরিচালক-প্রযোজক। বহু হিট-সুপারহিট চলচ্চিত্রের পরিচালক। ব্যবসাসফল ও দর্শকপ্রিয় চলচ্চিত্র নির্মাণে অসাধারণ নৈপূণ্য দেখিয়েছেন তিনি। তৎসময়ে বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের, তারকাখ্যাতিসম্পন্ন একজন চিত্রপরিচালক শহীদুল ইসলাম খোকন।
তাঁর সময়ের নির্মাতাদের মধ্যে অন্যতম মেধাবী ও গুণী চলচ্চিত্র নির্মাতা ছিলেন তিনি। তিনি একজন চলচ্চিত্র প্রযোজকও ছিলেন। চলচ্চিত্র প্রযোজনা করতে গিয়ে ঢাকায় তাঁর নিজের একমাত্র বাড়িটি বিক্রি করেছেন। চলচ্চিত্র ও চলচ্চিত্রশিল্পের প্রতি অপরিসীম ভালোবাসা ছিল তাঁর।
বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের, তারকাখ্যাতিসম্পন্ন চিত্রপরিচালক শহীদুল ইসলাম খোকন-এর সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৫৯ বছর। এই গুণী চিত্রনির্মাতার প্রতি অন্তহীন শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি ।
শহীদুল ইসলাম খোকন ১৯৫৭ সালের ১৫ মে, বরিশাল জেলার বোয়ালিয়ায়, জন্মগ্রহণ করেন । ১৯৭৪ সালে, মাসুদ পারভেজ (নায়ক-প্রযোজক সোহেল রানা) পরিচালিত ‘মাসুদ রানা’ চলচ্চিত্রের সহকারী পরিচালক হিসেবে চলচ্চিত্রাঙ্গনে তাঁর আগমন। দীর্ঘ দশ বছর সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার পর, ১৯৮৫ সালে ‘রক্তের বন্দী’ ছবিটি পরিচালনার মধ্যদিয়ে তিনি পূর্ণাঙ্গ পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন ।
শহীদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত অন্যান্য চলচ্চিত্র সমূহের মধ্যে আছে- লড়াকু, পদ্ম গোখরা, বীর পুরুষ, বজ্রমুষ্ঠি, উদ্ধার, বিপ্লব, অকর্মা, সন্ত্রাস, বিষদাঁত, দিন মজুর, টপ রংবাজ, উত্থান পতন, শত্রু ভয়ঙ্কর, সতর্ক শয়তান, অপহরণ, দুঃসাহস, ঘাতক, কমান্ডার, বিশ্বপ্রেমিক, গৃহযুদ্ধ, রাক্ষস, লম্পট, চারিদিকে শত্রু, নরপিশাচ, পালাবি কোথায়, ভণ্ড, পাগলা ঘণ্টা, ম্যাডাম ফুলি, যোদ্ধা, ভেজা বিড়াল, মুখোশধারী, চাই ক্ষমতা, টাকা, লাল সবুজ, বাঙলা, স্বপ্নপূরণ, চেহারা (ভণ্ড-২), ভালোবাসার সেন্টমার্টিন প্রভৃতি ।
পরিচালনার পাশাপাশি তিনি চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও অভিনয়ও করেছেন। নিজের পরিচালনায় ১৯৯১ সালে মুক্তি প্রাপ্ত ‘সন্ত্রাস’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন। পরে ১৯৯২ সালে ‘উত্থান পতন’ ছবিতে নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেন শহীদুল ইসলাম খোকন । মোহাম্মদ হোসেন জেমী পরিচালিত ‘রাজধানী’ ছবিতেও অভিনয় করেছিলেন। শহিদুল আলম সাচ্চু পরিচালিত ‘মেগাবন্ড’ ও সৌরজয় চৌধুরী পরিচালিত ‘অবশেষে নাটকে পরিণত হল’ নাটকেও অভিনয় করেছিলেন ।
২০০৭ সালে, অনুরূপ আইচের রচনায় ‘এখনও মানুষ’ নামের একটি টেলিফিল্মও নির্মান করেন শহীদুল ইসলাম খোকন।
ব্যক্তিগত জীবনে শহীদুল ইসলাম খোকন জয়া ইসলামকে বিয়ে করেন। তাদের এক মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছে ।
শহীদুল ইসলাম খোকন তাঁর সময়ের নির্মাতাদের মধ্যে অন্যতম মেধাবী একজন পরিচালক ছিলেন । বাণিজ্যিক ছবির অনন্য সফল এক নির্মাতা তিনি । ব্যবসাসফল ও দর্শকপ্রিয় চলচ্চিত্র নির্মাণে অসাধারণ নৈপূণ্য দেখিয়েছেন মেধা ও মননশীলতা দিয়ে । একের পর এক সুপার-ডুপার হিট চলচ্চিত্র উপহার দিয়েছেন। তিনি নিজে পেয়েছেন অসম্ভব রকম জনপ্রিয়তা। হয়েছেন তারকাখ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্র পরিচালক।
চলচ্চিত্র ও চলচ্চিত্রশিল্পের প্রতি তাঁর ভালোবাসা সর্বজন স্বীকৃত । চলচ্চিত্র প্রযোজনা করতে গিয়ে যখন তিনি অর্থসঙ্কটের মুখোমুখি হন, তখন তাঁর নিজের একমাত্র বাড়িটি বিক্রি করে দেন। বাড়ি বিক্রির টাকা দিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণে ব্রতী হন তিনি । এটা তাঁর চলচ্চিত্র ও চলচ্চিত্রশিল্পের প্রতি অপরিসীম ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ।
তিনি চলচ্চিত্রশিল্পকে অনেক নতুন নায়ক-নায়িকা ও অভিনয় শিল্পী উপহার দিয়েছেন । তাঁর মাধ্যমে যাঁরা চলচ্চিত্রে এসেছেন- নায়ক রুবেল, আলেক জান্ডার বো, নায়িকা শিমলা, মিশেলা, তামান্না, অভিনেতা ড্যানি সিডাক, ইলিয়াস কোবরা, সিরাজ পান্না, এমনকি প্রখ্যাত অভিনেতা হুমায়ূন ফরীদিও। এদের মধ্যে অনেকেই হয়েছেন জনপ্রিয়, পেয়েছেন তারকাখ্যাতি।
শহীদুল ইসলাম খোকন চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে, সুস্থধারার চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য এবং চলচ্চিত্র পরিচালকদের সম্মান রক্ষায় যে অগ্রণী ভূমিকা রেখে ছিলেন তা অবশ্যই স্মরণযোগ্য ।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পে বাণিজ্যিক সমৃদ্ধিতে অবদান রাখা এই মেধাবী মানুষটি, তাঁর সৃজনশীল কর্মের মাধ্যমে আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন অনন্তকাল ।